বিছানায় শোয়া অবস্থায় আগুনে ঝলসে গেলেন এক দম্পতি। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের মোহনপুর থানা এলাকার কলেজপল্লিতে, একটি গ্যাসের গুদামের পাশে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে প্রতিবেশীরা দেখেন, অপর্ণা ও অরবিন্দ নাগ নামে ওই দম্পতি যে ঘরে ঘুমোন, সেই ঘরেই বিছানা দাউদাউ করে জ্বলছে। জানলা খোলা থাকায় বালতি বালতি জল ঢালতে থাকেন তাঁরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও গুরুতর জখম হন ওই দম্পতি। স্থানীয় শিউলি পঞ্চায়েতের সদস্য অনির্বাণ সেন ঘটনাস্থলে যান ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। ডাকা হয় পুলিশকে।
পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে দু’জনকেই ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও বৃদ্ধের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে পরে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শারীরিক অসুস্থতার কারণে মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকাদম্পতি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ, যে ঘরে তাঁরা শুয়েছিলেন, সেই ঘরের বিছানাতেই শুধু আগুন তীব্র ভাবে ছড়িয়েছিল। বৃদ্ধা অগ্নিদগ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করতে শুরু করেন। ঘরের মধ্যে ছুটোছুটি করতে থাকেন, কিন্তুবৃদ্ধ ওঠেননি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, ‘‘আমার এলাকায় সমস্ত বয়স্ক, যাঁদের পরিবারের লোকজন বাইরে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। গত শনিবারেও অপর্ণাদির সঙ্গে কথা হল। উনি বার বার বলছিলেন, ওঁর স্বামীর ডায়ালিসিস দরকার। কিডনি খারাপ। অসহ্য পেটের যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি দেখলাম, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেও আধারের সঙ্গে ফোন নম্বর লিঙ্ক করানো হয়নি। আজই সেটা করার কথা ছিল। তার আগেই এই ঘটনা।’’
দম্পতির একমাত্র মেয়ে অহনা নাগ থাকেন আরামবাগে। তিনি এই ঘটনা শুনে সরাসরি হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, বৃদ্ধার শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের তরফে জানানো হয়, গোটা কমিশনারেট জুড়েই প্রবীণ নাগরিকদের তালিকা নিয়ে তা নথিবদ্ধ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকেরা একাকী থাকা বয়স্কদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। মানসিক সুস্থতার জন্য কমিশনারেটের ‘সঞ্জীবনী’ নামে যে বিভাগটি আছে, তার আধিকারিকেরা বিশেষ ভাবে নজর রাখবেন ২৮টি থানা এলাকার প্রবীণ ও একাকী থাকা নাগরিকদের উপরে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)