Advertisement
E-Paper

মিড-ডে মিলের মান নিয়ে ক্ষোভ

ক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুলের শিক্ষকেরা জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের দফতরে চিঠি পাঠিয়ে খাদ্যসামগ্রীর গুণমান ঠিক রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৫:২৩

মিড-ডে মিলের মান নিয়ে ক্ষোভ।

কাঁচা মুসুর ডালের হলদেটে চেহারা দেখে ডালমুট বলে ভ্রম হবে। প্যাকেটবন্দি ছোলার সঙ্গে মিশে রয়েছে ছোট ছোট কাঠি। জলে ভেজালে ভেসে উঠছে পোকা ধরা ছোলা। সয়াবিনের অবস্থাও তথৈবচ। মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রীর এমন দশা দেখে প্রবল অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বারাসত-২ ব্লকের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের মধ্যে। তাঁদের ক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুলের শিক্ষকেরা জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের দফতরে চিঠি পাঠিয়ে খাদ্যসামগ্রীর গুণমান ঠিক রাখার আবেদন জানিয়েছেন।

বারাসতের দু’নম্বর ব্লকে মাদ্রাসা ও স্কুল মিলিয়ে মিড-ডে মিলের সামগ্রী পায় মোট ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া, অবৈতনিক ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্র মিলিয়ে রয়েছে আরও ১২৫টি স্কুল‌। সব মিলিয়ে ৩৩ হাজারেরও বেশি পড়ুয়া মিড-ডে মিলের সামগ্রী পায়।

গত বছরের লকডাউনের সময় থেকেই স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের বাড়িতেই মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সর্বশিক্ষা মিশন ও রাজ্য সরকার। ঠিক হয়, মিড-ডে মিলের খাদ্যসামগ্রী বাবদ যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বরাদ্দ, সরকারের তরফ তা স্কুলগুলির তহবিলে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। স্কুল খাদ্যসামগ্রী কিনে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেবে। বারাসত-২ ব্লকের একাধিক স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ১৪ দফায় খাদ্যসামগ্রী বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু ১২ এবং ১৪ নম্বর দফার ক্ষেত্রে সেই সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এক প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘ওই দুই দফায় বিডিও-র দফতর ছোলা, সয়াবিন ও ডাল সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছিল। ১৪ নম্বর দফায় খাদ্যসামগ্রী বণ্টন হয় গত মে মাসে। ওই দুই দফাতেই মিড-ডে মিল নিয়ে অভিভাবকদের অসন্তোষের মুখে পড়তে হয়েছে স্কুলগুলিকে।’’ বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, চাল ও চিনির দায়িত্ব তাঁদের হাতেই রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ছোলা, ডাল এবং সয়াবিনের মান নিয়ে।

স্কুলশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জেলার সর্বত্রই মিড-ডে মিলের টাকা সর্বশিক্ষা মিশনের নিয়ম মেনে স্কুলের তহবিলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষই খাদ্যসামগ্রী কিনে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আচমকাই দু’টি দফায় সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে ওই ব্লকে। এক শিক্ষকের অভিযোগ, ‘‘সরকার খাদ্যসামগ্রী-পিছু যে দর ধার্য করেছে, তার মধ্যে সেই সামগ্রীর পরিবহণ এবং তা প্যাকেটবন্দি করার খরচও ধরা থাকে। কিন্তু অনেক স্কুলকেই বিডিও-র দফতরের ঠিক করে দেওয়া ডিলারের কাছে গিয়ে ডাল, ছোলা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে, যা স্কুলের নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হচ্ছে।’’

মিড-ডে মিলের এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে স্কুলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের দাবি, সরকার ২৫০ গ্রাম মুসুর ডালের জন্য ২৫ টাকা, ২০০ গ্রাম সয়াবিনের জন্য ৪০ টাকা এবং প্রতি কিলো ছোলার জন্য ৬৫ টাকা বরাদ্দ করেছে। এক শিক্ষকের দাবি, ‘‘ওই দামে উৎকৃষ্ট মানের এবং নামী সংস্থার খাদ্যসামগ্রী পাওয়ার কথা। সয়াবিন দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় সংস্থার। ডাল ভেঙে যাচ্ছে। পোকা ধরা ছোলা জলে ভেজালেই ভেসে উঠছে।’’

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বারাসত-২ ব্লকের বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার কাছে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। উপর মহলে জানিয়ে থাকলে অন্য কথা। সেখান থেকে নির্দেশ এলে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের খাবার যে-ই সরবরাহ করে থাকুন, গুণমান অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। খোঁজ নিয়ে দেখছি, কী ঘটেছে।’’

Mid Day Meal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy