E-Paper

নিজের নার্সিংহোমে এনে অস্ত্রোপচারে ভুল, প্রশ্নে চিকিৎসক

হার্নিয়ার জন্য যে জায়গায় অস্ত্রোপচার করার কথা, তার বদলে কাটা হয়েছে অন্যত্র। হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের নামে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পাশাপাশি নগদেও কয়েক হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই রোগী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ০৭:১২
ভুল জায়গায় অস্ত্রোপচারের অভিযোগ।

ভুল জায়গায় অস্ত্রোপচারের অভিযোগ। —প্রতীকী চিত্র।

হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের জন্য রোগী গিয়েছিলেন সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু অভিযোগ, সেখানকার চিকিৎসক তাঁকে নিয়ে যান নিজের নার্সিংহোমে। এমনকি, হার্নিয়ার জন্য যে জায়গায় অস্ত্রোপচার করার কথা, তার বদলে কাটা হয়েছে অন্যত্র। হার্নিয়া অস্ত্রোপচারের নামে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের পাশাপাশি নগদেও কয়েক হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই রোগী।

সোদপুরের এক নম্বর দেশবন্ধুনগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস ওরফে সাগরের দাবি, তলপেটে যন্ত্রণা নিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনি পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, হার্নিয়া অস্ত্রোপচার করাতে হবে। পেশায় রং মিস্ত্রি ওই যুবকের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক প্রস্তাব দেন, তাঁর নার্সিংহোমে ভাল ভাবে অস্ত্রোপচার করে দেবেন। সেই চিকিৎসকের নামও বিশ্বজিৎ দাস। সাগর বলেন, ‘‘আমিও বিশ্বাস করে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হই। উনি বলেন, স্বাস্থ্যসাথীতে অস্ত্রোপচার হবে।’’

অভিযোগ, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে মুড়াগাছার ওই নার্সিংহোমে তিন দিন রাখা হয় সাগরকে। তাঁর দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী থেকে টাকা কাটা হয়। তবু আরও ছ’হাজার টাকা নেওয়া হয় অন্যান্য খরচ বাবদ।’’ বাড়ি ফেরার পরে অস্ত্রোপচারের জায়গায় সংক্রমণ হয়ে পুঁজ বেরোতে থাকে, সঙ্গে যন্ত্রণা। দু’দিন পরে ফের সাগরকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করে ১৪ দিন রাখা হয়। কয়েক হাজার টাকা বিলও মেটান সাগর। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি ফিরলেও কিছু দিন পরে ফের যন্ত্রণা শুরু হয়। ইউএসজি করিয়ে দেখতে বলায় ওই ডাক্তার জানান, পরীক্ষা করা যাবে না। তাতে ফের সংক্রমণ হবে।’’

সাগরের দাবি, এই ভাবে বছর কেটে যায়। ভাল চিকিৎসককে দিয়ে চিকিৎসার আশ্বাস দিতে থাকেন বিশ্বজিৎ। তত দিনে নানা অভিযোগের কারণে ওই চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করে দেয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। যন্ত্রণা না কমায় মাসকয়েক আগে স্থানীয় এক শল্য চিকিৎসককে দেখান সাগর। ইউএসজি করে দেখা যায়, হার্নিয়ার অস্ত্রোপচারই হয়নি। সাগরের দাবি, ‘‘ওই ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে উনি দাবি করেন, হার্নিয়া ফের হতে পারে।’’

হার্নিয়ার জায়গাটি ফুলে উঠছে সাগরের। তাই বেল্ট বেঁধে থাকছেন। ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জোরে হাঁটতে বা কোথাও উঠে কাজ করতে পারছি না।’’ যদিও এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেননি ওই যুবক। তবে, উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমুদ্র সেনগুপ্ত জানান, বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকায় স্বাস্থ্য দফতর নতুন করে তদন্ত শুরু করেছিল। তদন্ত প্রভাবমুক্ত রাখতেই তাঁকে ব্যারাকপুর পুলিশ হাসপাতালে বদলি করা হয়।

সমুদ্র বলেন, ‘‘তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। বিভাগীয় তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। স্বাস্থ্যসাথীতে হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার হয় না। তবু কী ভাবে অস্ত্রোপচার করা হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কিছু কথা শুনেই ফোন কেটে দেন। মেসেজেরও উত্তর দেননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

operation Swasthya Sathi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy