দীর্ঘ দিন ফেরার থাকার পরে খবর এল, শনিবার। জানা গেল, আগের রাতে এয়ারপোর্টের কাছে মতিলালা কলোনির একটি বাড়ির একতলায় বোমা ফেটে মারা গিয়েছে বলাই দে ওরফে ছোট বলাই (২৮)। যে খবরটায় আপাতত স্বস্তিতে অশোকনগর। বলাই আর তার দলবলের দাপটে এখানকার মানুষ আতঙ্কিত থাকতেন।
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বলাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক খুন তোলাবাজি মাদক পাচার, আগ্নেয়াস্ত্র রাখা মতো অভিযোগ ছিল। পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিল। সম্প্রতি অশোকনগরে একটি খুন ও বোমাবাজির ঘটনায় বলাইয়ের নাম উঠে আসে। পুলিশ তাকে খুঁজছিল।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অতীতে হুগলির হুব্বা শ্যামল এবং দমদমের ভক্তি-মুক্তির মতো দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বলাইয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। তার বাহিনী দিনদুপুরেও অশোকনগের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াত।
কয়েক বছর আগে অশোকনগরের ছোট বলাই এবং আর এক যুবকের দাপট শুরু হয়। তোলাবাজি, বোমাবাজি-সহ নানা অভিযোগে দু’জনেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বলাইয়ের সাগরেদ অপরাধ জগত ছেড়ে দিলেও বলাই ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে। নিজের দল গঠন করে সে।
পুলিশ ও এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায় এখন দু’টি দুষ্কৃতী গোষ্ঠী রয়েছে। একটির নেতৃত্বে ছিল ছোট বলাই। অন্য দুষ্কৃতী দলের নেতৃত্বে দেয় অপরাধ জগতে বলাইয়ের এক প্রাক্তন ‘বস’। সে সম্প্রতি জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। পুলিশের দাবি, এখন অবশ্য ওই দুষ্কৃতীর দাপট কম। তবে এলাকার মানুষের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, ছোট বলাই ও তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে এলাকা দখল, তোলাবাজি এবং মদ-সাট্টার ঠেকের দখল নিয়ে বোমাগুলির সংঘর্ষ কম হয়নি। ২ নম্বর খেলার মাঠের কাছে বাড়ি ছোট বলাইয়ের। অল্প বয়সেই অপরাধ জগতে ‘নামডাক’ শুরু হয় তার। শনিবার বলাইয়ের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে। আশপাশের লোকজনও বলাইকে নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
গত বছর ডিসেম্বর মাসে স্থানীয় হরিপুর এলাকায় খোকন দাস ওরফে বোকো নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় বলাইয়ের নাম উঠে আসে। তারপর থেকে সে পুলিশের ভয়ে এলাকা ছাড়া। পুলিশ জানিয়েছে, কিছু দিন ধরেই বলাইয়ের খোঁজে জোরদার তল্লাশিতে নেমেছিল পুলিশ। পুলিশের অনুমান, সে জন্যই দমদমের গোপন ডেরায় আশ্রয় নেয় বলাই। দমদমে বোমা ফেটে জখম হয়েছে বলাইয়ের ডানহাত বিজয় সরকারও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ জানালেন, ইদানীং প্রকাশ্যে চোখে না পড়লেও মাঝেমধ্যে অতর্কিতে রাতে দলবল নিয়ে এলাকায় চড়াও হয়ে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যেত বলাই। স্থানীয় কচুয়া মোড় এলাকার এক হোটেল মালিকের দাবি, তোলা দিতে রাজি না হওয়ায় সন্ধ্যায় তার হোটেলে বোমাবাজি করা হয়। বেশ কিছু দিন দোকান বন্ধ ছিল। বলাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমার হোটেলে বলাই সরাসরি হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু তার পিছনে রাজনৈতিক মদত ছিল। তাদের কী হবে?’’ এলাকার মানুষের অভিযোগ, ডান-বাম দুই জমানাতেই রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের হাত ছিল বলাইয়ের মাথায়। এখন অবশ্য সকলেই হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন। যদিও স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতায়, বলাইয়ের দলের কোনও দুষ্কৃতী ধরা পড়লে তাকে ছাড়াতে নেতাদের থানায় যেতেও দেখা গিয়েছে।
এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায় বলেন, ‘‘বলাই এলাকার নাম করা দুষ্কৃতী ছিল। তবে পুলিশের তাড়া খেয়ে সম্প্রতি সে এলাকা ছাড়া হয়ে গিয়েছিল। সিপিএমের ছত্রছায়ায় থেকেই ওর বেড়ে ওঠা। নির্বাচনে সিপিএমের হয়ে বিরোধীদের ভোট লুঠ করত।’’ যদিও অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী করের দাবি, ‘‘শাসকদলের মদত ছাড়া বলাইয়ের পক্ষে ওই রকম রাজত্ব চালানো কী ভাবে সম্ভব?’’ তাঁর মতে, ‘‘বলাইয়ের মুখটাই আমি চিনি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy