খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। অথচ, সে-ই কিনা কৃতী পড়ুয়াদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি!
আজ, মঙ্গলবার চলতি বছরের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায়উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করেছে পানিহাটি শহর তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ। কিন্তু ওইঅনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, ওই আমন্ত্রণপত্রে বিশেষ অতিথিদের তালিকায় নাম রয়েছে পানিহাটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শাসকদলের পুরপ্রতিনিধি তারক গুহের।
খুনের মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে বন্দি তারকের নামকী ভাবে বিশেষ অতিথির তালিকায় ছাপা হল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের কটাক্ষ, ‘জেল থেকেই হয়তো ভার্চুয়ালি ভাষণদেবে ওই পুরপ্রতিনিধি’। স্থানীয় বিধায়ক নির্মল ঘোষের পরিকল্পনায় আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সাংসদ পার্থ ভৌমিক, মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি, দমদম-ব্যারাকপুর সংসদীয় জেলার তৃণমূল যুব সভাপতি-সহ আরও অনেকের উপস্থিত থাকার কথা।
বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরএকাংশও। ঘনিষ্ঠ মহলে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের একাংশের মন্তব্য,‘‘কিছু কর্মীর এ হেন আচরণ বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে।’’ স্থানীয় সিপিএম নেতা শুভব্রত চক্রবর্তীরকথায়, ‘‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে কৃতী পড়ুয়াদের এই অনুষ্ঠান বয়কট করা উচিত। একই সঙ্গে ওই দলে পার্থ ভৌমিক-সহসংস্কৃতিমনস্ক যে কয়েক জন নেতা আছেন, তাঁদেরও উচিতঅংশ না নেওয়া।’’ স্থানীয় বিজেপি নেতা কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলের সংস্কৃতিতেখুন করে সাজাপ্রাপ্ত হলেও বিশেষ অতিথি হিসাবে মন্ত্রী, সাংসদদের সঙ্গে মঞ্চে স্থান মেলে। তারকজেল থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবে, তাই হয়তো ওর নাম কার্ডে ছাপা হয়েছে।’’
২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পানিহাটির গান্ধীনগরেদুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছিল। সেখানে মোবাইল চোর সন্দেহে স্থানীয় মাছ বিক্রেতা শম্ভু চক্রবর্তীকে মণ্ডপেরসঙ্গে বেঁধে তারক-সহ আরও অনেকে মিলে বাঁশ দিয়ে মেরে তাঁর পাঁজর ভেঙে দেয়। তাঁর পায়ুদ্বারে পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনারপরের দিন শম্ভু মারা যান। সেই ঘটনায় তারক গ্রেফতার হলেও পরে জামিনে মুক্তি পায়। ২০২২ সালে পুরপ্রতিনিধিও হয়। গত ২১ফেব্রুয়ারি ওই পুরপ্রতিনিধি তথা ওয়ার্ড সভাপতি তারক-সহ পাঁচ জনকে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ব্যারাকপুর আদালত। ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই আসামিদেরযাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
এর প্রায় পাঁচ মাস পরে আয়োজিত অনুষ্ঠানেরআমন্ত্রণপত্রে বিশেষ অতিথির তালিকায় অন্য চেয়ারম্যান পারিষদ, পুরপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি কী ভাবে তারকের নামছাপা হল? পানিহাটির বিধায়ক নির্মলের দাবি, ‘‘বিষয়টি ঠিক জানি না। কেন্দ্রীয় ভাবে কার্ডছাপা হয়েছে। কেউ হয়তো অন্যদের সঙ্গে ওর নামও ছেপে দিয়েছেন।’’ তবে বিরোধীদের প্রশ্ন, যাঁর পরিকল্পনায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন,তিনিই জানেন না যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম ছাপা হচ্ছে?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)