Advertisement
E-Paper

পুলিশি শিথিলতায় বেলাগাম দুষ্কৃতীরা

দিনের আলোয় জনবহুল রাস্তায় ছিনতাই হচ্ছে টাকাভর্তি ব্যাগ। কখনও কেপমারদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন যুবক থেকে প্রৌঢ়।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৫ ০১:৪৯
ইছামতীতে দেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

ইছামতীতে দেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।

দিনের আলোয় জনবহুল রাস্তায় ছিনতাই হচ্ছে টাকাভর্তি ব্যাগ। কখনও কেপমারদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন যুবক থেকে প্রৌঢ়। কখনও বা চুরি হয়ে যাচ্ছে আস্ত একটা ট্রাক। বেড়ে গিয়েছে বাইক চুরি। সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক পাচারকারীরা। মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করে প্রহৃত হচ্ছেন মহিলা। বাড়ছে খুন-জখম, ধর্ষণ। সাম্প্রতিক কালে বনগাঁ থানা এলাকায় একের পর এক নানা অপরাধ মূলক এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও এ সবের বিরুদ্ধে পুলিশকে সে ভাবে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। এমনটাই অভিযোগ এলাকার মানুষের।

ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরাও। বনগাঁর নবনির্বাচিত পুরপ্রধান তৃণমূলের শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘শহরে পুলিশকে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রাতে পুলিশি টহল বাড়ানোর প্রয়োজন।’’ বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য শহরে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে ঠিকই, তবে তা বিক্ষিপ্ত ভাবে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’’

দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অতীতের মতো পুলিশের ভূমিকা জোরদার হচ্ছে না বলেও মানুষের দাবি। রাতের টহল কার্যত উধাও। রাত নামলেই শহরের রাস্তাগুলিতে নম্বরহীন বাইকের দাপাদাপি, অচে‌না মানুষের আনাগোনা। বনগাঁ শহর জুড়ে আইনশৃঙ্খলার এ হেন নিম্নগতির জন্য পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাব, এবং পুলিশের একাংশের সঙ্গে দুষ্কৃতী বা চোরাকারবারিদের গোপন সম্পর্কের কথাই মুখে মুখে ফিরছে শহরবাসীর।

শুধু পুলিশের ভূমিকাই নয়, এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিশেষত শাসকদলের নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শাসক দলের নেতারা সব দেখে শুনেও পুলিশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারছেন না। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে বলবেন তাঁরা তাঁদেরই সরকারের পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে বা কথা বললে সে ক্ষেত্রে নিজেদের সরকারের ভাবমূর্তিই খারাপ হতে পারে।

“শহরে পুলিশকে আরও তৎপরতা বাড়াতে হবে।
বিশেষ করে রাতে পুলিশি টহল বাড়ানোর প্রয়োজন।” —শঙ্কর আঢ্য, পুরপ্রধান।

“এক নম্বর রেলগেট এলাকায় যুবক খুনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।
মূল অভিযুক্তের আমডাঙায় বাড়ি। ওকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অন্য বিষয়গুলিও যেমন, ট্রাক,
মোটরবাইক চুরি বা কেপমারির ঘটনা নিয়েও তদন্ত চলছে।” — ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের ভূমিকা যে যথোপোযুক্ত নয়, দুষ্কৃতীদের দাপট বাড়তে থাকাই তার প্রমাণ। পুলিশের একাংশ শাসক দলের নেতাদের নির্দেশে কাজ করছেন।’’ বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দের অভিযোগ, ‘‘বনগাঁর আইনশৃঙ্খলা এতটাই ‘ভাল’ যে মানুষ আজ কোনও ঘটনাতেই পুলিশের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না। আমাদের একটি দলীয় কার্যলয় দখ‌ল হয়ে গেল। পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও তারা কোনও ব্যবস্থা নিল না।’’

থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা থেকে পুলিশের কাছে কোনও সাহায্য চেয়ে না পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন শহরবাসী। পাশাপাশি, কারণে-অকারণে থানায় ঢেকে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে।

কেন পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে পারছে না?

পুলিশেরই একটি সূত্রের খবর, মানুষের সঙ্গে পুলিশের জনসংযোগের অভাবের কারণেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া দুষ্কৃতীদের ধরতে যে ‘সোর্স’ লাগে তারও অভাব রয়েছে।

অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন যে অযৌক্তিক নয়, পরপর নানা ঘটনাই তার প্রমাণ। বনগাঁর এক নম্বর রেলগেট এলাকায় জুয়ার ঠেকে কিছুদিন আগে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। মূল অভিযুক্ত ধরা পড়েনি। পুরভোটের দিন বনগাঁ শহরের দত্তপাড়া এলাকায় রাস্তার উপর এক ভবঘুরেকে খুন করে ফেলে রাখা হয়েছিল। আজও সেই ঘটনার কিনারা হয়নি। বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ এলাকা থেকে রাতে একটি খালি ট্রাক চুরি হয়ে গিয়েছে দিন কয়েক আগে। কিনারা হয়নি সেই ঘটনারও। সম্প্রতি একই দিনে শহরের রামনগর রোড এবং বাটারমোড় এলাকায় দুটি কেপমারির ঘটনা ঘটেছে। মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, রামনগর রোডের মুখে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে গত কয়েকমাস ধরেই কেপমারদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। পুলিশ সব জেনেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

কিনারা হয়নি

• ২৫ এপ্রিল: ভবঘুরে খুন।

• ৩০ এপ্রিল: ইছামতীতে যুবকের দেহ।

• ১২ জুন: বাটা ও রামনগর মোড়ে কেপমারি।

• ১৭ মে: রেলগেট এলাকায় জুয়ার আসরে কুপিয়ে খুন।

• ২৭ মে: হেরোইন বিক্রির প্রতিবাদ করায় জয়পুরে প্রহৃত মহিলা।

• ২ জুন: মতিগঞ্জে ট্রাক চুরি।

• ৭ জুন: পারমাদন অভয়ারণ্যে মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার।

• ৯ জুন: হরিহরপুরে শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে মাকে ধর্ষণ।

শুধু বনগাঁ থানা এলাকাই নয় মহকুমার অন্য থানা এলাকাতেও সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা নিয়েও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বাগদার পারমাদনে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে দুষ্কৃতীরা এক মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে রেখে পালিয়ে যায়। এখনও কেউ ধরা পড়েনি। বাগদার হরিহরপুরে এক বছরের শিশুর গলায় রামদা ঠেকিয়ে মাকে গণ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এলাকার দুই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। তারা বংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। গোপালনগর থানার মোল্লাহাটি এবং বামডাঙার মাঝে কিছুদিন আগে এলাকা দখল নিয়ে দু’দল দুষ্কৃতীর বোমাবাজি এবং গুলি চালনার ঘটনা ঘটেছে।

তবে পুলিশের ব্যর্থতা মানতে রাজি নন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এক নম্বর রেলগেট এলাকায় যুবক খুনের বিষয়টি আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মূল অভিযুক্তের আমডাঙায় বাড়ি। ওকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অন্য বিষয়গুলিও যেমন, ট্রাক, বাইক চুরি বা কেপমারির ঘটনাগুলি নিয়েও তদন্ত চলছে।’’ বাগদার ঘটনা দুটিও শীঘ্রই কিনারা হবে বলে ভাস্করবাবু জানিয়েছেন।

bongaon criminal police inactive bongaon police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy