Advertisement
E-Paper

দমদমের পর এ বার ডেঙ্গিতে ছাত্রীর মৃত্যু বেলঘরিয়ায়

নীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরেও জ্বর না কমায় গত শুক্রবার তাকে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ-তে তার চিকিৎসা চলছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর রূপালি সরকার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ওর হার্ট ঠিক মতো পাম্প করছে না, লিভারেও সংক্রমণ রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৬
মৃত আরশিয়ানা পারভিন। নিজস্ব চিত্র।

মৃত আরশিয়ানা পারভিন। নিজস্ব চিত্র।

দমদমের পরে এ বার বেলঘরিয়া।

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বুধবার দুপুরে মৃত্যু হল অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর। আরশিয়ানা পরভিন (১২) নামের ওই ছাত্রীকে মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। বুধবার বেলঘরিয়ার বাসিন্দা ওই বালিকা সেখানেই মারা যায়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক শক’।

কামারহাটি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের টেক্সম্যাকো কলোনির ‘গারদ’ এলাকার বাসিন্দা আজিম আনসারির বড় মেয়ে আরশিয়ানা। বেলঘরিয়া টেক্সম্যাকো এস্টেট স্কুলের ওই পড়ুয়া গত সপ্তাহ থেকেই জ্বরে আক্রান্ত। পরিবার সূত্রে খবর, স্থানীয় চিকিৎসককে দেখানোর পরেও জ্বর না কমায় গত শুক্রবার তাকে কামারহাটি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ-তে তার চিকিৎসা চলছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর রূপালি সরকার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ওর হার্ট ঠিক মতো পাম্প করছে না, লিভারেও সংক্রমণ রয়েছে। ওই দিনই মেয়েটিকে এনআরএস-এ ভর্তির ব্যবস্থা করি।’’

আরশিয়ানার বাড়ির পাশের নিকাশি নালা। নিজস্ব চিত্র

শুধু আরশিয়ানাই নয়। কামারহাটির ওই ওয়ার্ডে আরও কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানাচ্ছেন রূপালি নিজেই। তাঁর কথায়, ‘‘ওয়ার্ডের সব থেকে খারাপ অবস্থা টেক্সম্যাকোর শ্রমিক কলোনি এলাকা। ওখানে ঢুকে কাজ করার অধিকার নেই আমাদের। ওঁরাও সাফাই করে না। বারবার জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ পাশাপাশি তাঁর দাবি, শেষ দিন দুই ওই এলাকায় জোর করে সাফাই করেছেন তিনি।

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, চারদিকে ঝোপঝাড়। নিকাশি নালা উপচে নোংরা জলে ভাসছে চারদিক। মশার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। কোথাও আবার বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক ভেঙে জলে ভাসছে রাস্তা। স্থানীয়েরা জানান, এলাকার অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত। বাসিন্দা রবিকান্ত সিংহ বলেন, ‘‘এলাকা কে পরিষ্কার করবেন জানি না। টেক্সম্যাকো বলছে পুরসভার দায়িত্ব। আর পুরসভা বলে টেক্সম্যাকোর। এই টানাপড়েনে আমাদের অবস্থা খারাপ।’’

অভিযোগের কথা মানতে নারাজ টেক্সম্যাকো কর্তৃপক্ষ। সংস্থার জনকল্যাণ বিভাগের দায়িত্বে থাকা রাজারাম সিংহ বলেন, ‘‘মানুষ ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। তাই এলাকা পরিষ্কার রাখা ওঁর দায়িত্বে পড়ে। নোংরা সাফ করলে কি কেউ বাধা দেয়? এ নিয়ে এ দিন সকালেই ওঁর সঙ্গে বৈঠক করেছি।’’

ইতিমধ্যেই গত দু’সপ্তাহে দমদমে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন দু’জন। সেই তালিকায় এ বার ঢুকল আরও একটি নাম। যদিও সমস্যা ততটা গুরুতর নয় বলেই দাবি কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহার। তিনি বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত মানেই তো ডেঙ্গি নয়। পুর এলাকায় বেশ কয়েক জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা এখন সুস্থ। কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছিল, তাঁরাও এখন সেরে উঠেছেন। ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। ওই মেয়েটি ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছে বলে কোনও কাগজও পাইনি। যতদূর শুনেছি ওর ফুসফুসে জল জমেছিল।’’ তবে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও চার-পাঁচ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বাসিন্দা রয়েছেন বলে জানাচ্ছেন বিমলবাবু নিজেই। যদিও এ জন্য তিনি টেক্সম্যাকোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন,‘‘এখনও পর্যন্ত রাজ্যে সাত জন ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। এই দু’টি অভিযোগও যাচাই করে দেখা হবে। ডেঙ্গি রুখতে সব রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ডেঙ্গি নিয়ে চাপানউতোরের মাঝেই এ দিন বিকেলে মেয়ের দেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বিহারের বাড়িতে রওনা দেওয়ার পথে আজিম বলেন, ‘‘ডেঙ্গি কবে হল, কেন হল জেনে কী হবে! আমার মেয়ে তো আর ফিরবে না।’’

Dengue Unknown Fever Mosquito
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy