E-Paper

দু’জনের মৃত্যুতে ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি-আতঙ্ক, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়ছে। ক্ষুদিরাম সরণিতেই বর্তমানে ৬-৭ জন ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি।

সমীরণ দাস 

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৯

—প্রতীকী চিত্র।

জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দিনকয়েক আগে বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই ওয়ার্ডের অন্তর্গত রানিয়া ক্ষুদিরাম সরণির বাসিন্দা বিপ্লব সর্দারের (৪৯)। এর পরে শনিবার বাঙুর হাসপাতালে মারা যান বিপ্লবের ভ্রাতৃবধূ বন্দনা সর্দার (৪৪)। পরিবারের দাবি, দু’জনেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তবে পুরসভার দাবি, বিপ্লবের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হলেও, বন্দনার মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গির উল্লেখ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় ডেঙ্গির সংক্রমণ বাড়ছে। ক্ষুদিরাম সরণিতেই বর্তমানে ৬-৭ জন ডেঙ্গিতে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি। অভিযোগ, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার জেরেই ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ দিন পুরপ্রতিনিধি এলাকায় এলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা।

বিপ্লব সর্দার।

বিপ্লব সর্দার।

বন্দনার স্বামী কল্যাণ সর্দার বলেন, “লক্ষ্মীপুজোর দিন ডেঙ্গিতে দাদার মৃত্যু হয়। দাদাকে দাহ করে এসে আমি জ্বরে পড়ি, ডেঙ্গি ধরা পড়ে। আমি সুস্থ হয়ে ফিরতে না ফিরতেই আমার স্ত্রী ও ১২ বছরের মেয়েও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়। মেয়ে এখন একটু ভাল আছে। তবে স্ত্রীকে ফেরাতে পারলাম না। ওর মৃত্যুর শংসাপত্রে ডেঙ্গি লেখা নেই ঠিকই, তবে হাসপাতালের অন্য নথিতেই ডেঙ্গির উল্লেখ আছে।” তাঁর দাবি, প্রশাসন আগে তৎপর হলে এ ভাবে দু’জনের মৃত্যু হত না।

বন্দনা সর্দার।

বন্দনা সর্দার।

রবিবার ক্ষুদিরাম সরণিতে গিয়ে দেখা গেল, কলকাতা পুরসভা লাগোয়া এই এলাকায় এখনও পাকা রাস্তা নেই। সরু রাস্তার পাশে নিকাশি নালাগুলি নিয়মিত সাফাই হয় না বলে দাবি। দেখা গেল, অধিকাংশ নালা খোলা। কোথাও নালা উপচে যাচ্ছে নোংরা জলে। যত্রতত্র জমেছে আবর্জনাও। অভিযোগ, বার বার বলেও নালার সংস্কার ও নিকাশি নালা ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল, শিখা হাজরা বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় কোনও কাজ হয় না। রাস্তাঘাট খারাপ। আবর্জনা সাফাই হয় না। রাস্তায় আলো নেই। অথচ পাশেই কলকাতা পুরসভা।”

এ দিন পুরকর্মীদের নিয়ে এলাকায় আসেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি দেবব্রত মণ্ডল। খোলা নর্দমা-সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো হয়। তবে পুরপ্রতিনিধিকে ঘিরে ধরে ক্ষোভ উগরে দেন বাসিন্দারা। দেবব্রত পরে বলেন, “পুরসভার তরফে যা যা করার, সবই করা হয়। মানুষকেও তো সচেতন হতে হবে। ব্যক্তিগত শৌচাগারের জলও উপচে বাইরে চলে আসছে। অনেক জায়গায় এলাকাবাসীর অসচেতনতার ফলে জল জমে থাকে।”

এলাকা ঘুরে দেখা গেল, একাধিক বাড়িতে কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত, কয়েক জন হাসপাতালে ভর্তি। অনেকেই ভয়ে এলাকা ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে অনেকে বাড়ি না ফিরে অন্যত্র থাকছেন। লক্ষ্মীকান্ত দাস নামে এক বাসিন্দা বলেন, “আমার ১৭ বছরের নাতনির ডেঙ্গি হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সুস্থ হওয়ার পরে আপাতত এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখেছি।”

যদিও রাজপুর-সোনারপুরের পুরপ্রধান পল্লব দাস বলেন, “ওই এলাকায় এক জনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। অন্য জনের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি নয়। পুরসভার তরফে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকায় মেডিক্যাল দল পাঠানো হয়েছে। আরও কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর নেই।” তাঁর আরও দাবি, “এ বার ডেঙ্গি সংক্রমণ তুলনায় অনেকই কম। অন্যান্য ওয়ার্ডেও তেমন সংক্রমণের খবর নেই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dengue Rajpur Sonarpur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy