একই দিনে দু’টি কর্মসূচি ঘিরে ঠাকুরবাড়ির পরিবেশ সরগরম। এক দিকে মমতা ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে আমরণ অনশন কর্মসূচি, অন্য দিকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে চলছে বার্ষিক মতুয়া ধর্ম মহাসভা ও রাস উৎসব।
বুধবার সকাল থেকেই ঠাকুরবাড়ি চত্বরে মতুয়াদের জনসমাগম। মাইকে বক্তৃতা, ডাঙ্কা, নিশান, কাঁসির শব্দ—সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ, অন্য দিকে প্রতিবাদের আগুন।
ঠাকুরবাড়ির বড়মা, প্রয়াত বীণাপানি ঠাকুরের ঘরের সামনে তৈরি হয়েছে অনশন মঞ্চ। সেখানে বসে আছেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের গোসাঁই, ভক্তেরা। ২৪ জন অনশন করছেন বলে জানানো হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরী বলেন, “এসআইআর-এর অজুহাতে মতুয়া এবং দেশভাগের বলি ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে। আমরা চাই, ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারতে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী সব মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষকে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব এবং ভোটাধিকার দেওয়া হোক।”
সংগঠনের সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক নরোত্তম বিশ্বাসের হুঁশিয়ারি, “কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি যদি এখানে এসে সদর্থক বার্তা না দেন, তবে এই অনশন চলবে অনির্দিষ্টকাল।”
অনশনরত মতুয়া গোসাঁই রঞ্জিত বাইন বলেন, “আমরা ভয় পাচ্ছি, ভবিষ্যতে আমাদের অবস্থাও যেন মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের মতো না হয়!”
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের আশঙ্কা, এসআইআর প্রক্রিয়ায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে, যার মধ্যে এক কোটি মানুষ মতুয়া উদ্বাস্তু সম্প্রদায়ের হতে পারেন।
একই সময় ঠাকুরবাড়ির নাটমন্দির প্রাঙ্গণে শুরু হয় শান্তনু ঠাকুর নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের বার্ষিক মতুয়া ধর্ম মহাসভা ও রাস উৎসব। সকাল থেকে সেখানেও ভক্তদের ঢল নেমেছে। শান্তনু ঠাকুরের দাবি, “একই দিনে অনশন কর্মসূচি রাখা হয়েছে আমাদের ধর্মমহাসভা বানচাল করার জন্য। এটা একেবারেই রাজনৈতিক চাল।”
তিনি বলেন, “এই অনশন কোনও মতুয়া করছেন না। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিম ও রোহিঙ্গা ভূতুড়ে ভোটারদের দিয়ে অনশন করানো হচ্ছে। মতুয়ারা নিজেরাই দেখে নিন, কারা তাঁদের নাম ভাঁড়িয়ে আন্দোলন করছে।”
অনশন কর্মসূচির মুখ হলেও মমতা ঠাকুর নিজে উপস্থিত ছিলেন না এ দিন। তিনি জানিয়েছেন, সংসদীয় কাজের সূত্রে ভোপালে আছেন, সেখান থেকে গোয়া যাবেন। ৭ নভেম্বর ফিরবেন। তবে অনশন মঞ্চে তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে অনশনের সূচনা করেন।
শান্তনুর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ মমতা ফোনে বলেন, “শান্তনুর মুখ থেকেই বেরিয়ে এল আসল রূপ। মতুয়ারা নাগরিকত্বের জন্য লড়ছেন, আর তিনি তাঁদের রোহিঙ্গা বলছেন! প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে মতুয়া উদ্বাস্তুদের দেশ থেকে তাড়ানোর চক্রান্ত চলছে। শরীরে ঠাকুর পরিবারের রক্ত থাকলে এই কথা কখনও বলতে পারতেন না।”
এ দিন অনশন কর্মসূচি উপলক্ষে পুলিশ মোতায়েন ছিল। যা নিয়ে শান্তনুর কটাক্ষ, ‘‘পুলিশ এখন তৃণমূলের হয়ে দালালি করছে।’’
সব মিলিয়ে মতুয়া সমাজের মধ্যে বিভাজনের রেখা এ দিন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)