Advertisement
০৭ মে ২০২৪
কোভিড পরিস্থিতিতে দুর্দিন গৃহশিক্ষকদের
Home Tutors

১৫ হাজার রোজগার নেমে এসেছে পাঁচে 

স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করলে তাঁদের আর্থিক সুরাহা হবে বলে মনে করেন বহু গৃহশিক্ষক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৮
Share: Save:

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের আর্টস পড়ান মাস্টারমশাই। রোজগার বিরাট অঙ্কের না হলেও সামাজিক সম্মানটুকু ছিল। পথেঘাটে লোকে ‘স্যার’ বলে ডেকে কথা বলত। ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় দেখা হলে প্রণামও করত। চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণায় সে সব মুহূর্তই যেন শান্তির প্রলেপ।

সেই মাস্টারমশাই লকডাউনে বাধ্য হলেন পেশা বদল করতে। কিছু দিন সংসার চালাতে আনাজ বিক্রি করেছেন। হাবড়ার বাসিন্দা রঞ্জয় দাস জানান, তাঁকে ওই পেশায় দেখে বহু অভিভাবক হয় নিজেরাই এগিয়ে এসে দরদাম না করে বেশি বেশি করে আনাজ কিনেছেন। অনেক অভিভাবক আবার ঠিক উল্টো। সংকোচ এড়াতে তাঁর সামনে দিয়ে মাথা নিচু করে দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছেন।

পলাশ দাসকেও লকডাউনের সময়ে অন্য পেশা খুঁজে নিতে হয়েছিল। গৃহশিক্ষক সুবীরকুমার পালের বাড়ি আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর্থিক সঙ্গতি ছিল না, বাড়ি মেরামত করার। সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা পর্যন্ত পাননি। গৃহশিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে সাহায্য করা হয়েছিল।

এই সব গৃহশিক্ষকেরা বহু দিন ধরেই চাইছেন, স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করুন। হাবড়ার শ্রীনগর এলাকার বাসিন্দা রবীন সাহাও পেশায় গৃহশিক্ষক। স্কুলশিক্ষকদের একাংশের প্রাইভেট টিউশনের কারণে তাঁর রুজিরোজগারে টান পড়েছিল আগে থেকেই। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। টাকার অভাবে মাকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তান। রবীন জানান, গাড়ি ভাড়া করে মাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য ছিল না। পেটে জল জমে যায় মায়ের। হাবড়ায় চিকিৎসা করান। তাতেও ধারদেনা করতে হয়েছিল। কিন্তু মাকে বাঁচাতে পারেননি। অগস্ট মাসে রবীনের মা মারা গিয়েছেন। মাস্টারমশাইয়ের কথায়, ‘‘লকডাউনের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত টিউশন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। আর্থিক কারণেই মায়ের উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে পারিনি। চিকিৎসার জন্য যা দেনা করেছিলাম, তা এখনও শোধ করছি। জুলাই মাস থেকে টুকটাক পড়ানো শুরু করেছি। তবে এখনও সব স্বাভাবিক হয়নি।’’ রবীন জানান, আগে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন মেরেকেটে ৪ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

রবীনের বক্তব্য, ‘‘স্কুলশিক্ষকদের উচিত, গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করা। তাঁরা তো সরকারের কাছ থেকে বেতন পান। আমরা কয়েকজনকে পড়িয়ে সংসার চালাই। আমাদের রোজগারে তাঁরা কেন ভাগ বসাবেন?’’

লকডাউনের দিনগুলিতে অভাব-অনটন থাকলেও অনেক গৃহশিক্ষক সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে বেসরকারি ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারেননি। গৃহশিক্ষকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গৃহশিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছিল। বনগাঁ শহরের বাসিন্দা অনেক স্কুলশিক্ষকও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে গৃহশিক্ষকদের গোপনে বাড়ি গিয়ে আর্থিক সাহায্য তুলে দিয়েছিলেন।

স্কুলশিক্ষকেরা গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করলে তাঁদের আর্থিক সুরাহা হবে বলে মনে করেন বহু গৃহশিক্ষক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Home tutors Distress Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE