E-Paper

সুন্দরবনের মধু যাবে আমেরিকায়

জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের মউলেদের থেকে সরাসরি মধু কিনে তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে বোতলে ভরে পাঠানো হবে বাজারে।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৩৩
মধু প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে।

মধু প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

সুন্দরবনের মহিলাদের হাতে প্রক্রিয়াজাত মধু পৌঁছবে আমেরিকার বাজারে। গোসাবা ব্লকের বালি দ্বীপে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত মধু প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা। সুন্দরবনের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে এগিয়ে এসেছে একাধিক বেসরকারি সংস্থা। তাদের প্রচেষ্টায় প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হয়েছে। কাজ শুরু হওয়ার মুখে।

দিন কয়েক আগে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর রাজেন্দ্র জাখের। তিনি বলেন, “এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করতে পারলে এঁদের জঙ্গল নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। আর সেটা কমলে বাঘে মানুষে সংঘাতও কমে যাবে।”

জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের মউলেদের থেকে সরাসরি মধু কিনে তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে বোতলে ভরে পাঠানো হবে বাজারে। শুধুমাত্র রাজ্যের বাজারে নয়, ই-কমার্স থেকে শুরু করে দেশের অন্য বাজার, এমনকি আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশের বাজারে পাঠানো হবে এই মধু। ইতিমধ্যেই এই মধু নিজেদের গুণগত মানের জন্য আমেরিকার বাজারে বিক্রির ছাড়পত্র পেয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

গ্রামেরই তিরিশ জন মহিলাকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ‘ভ্যালু নেটওয়ার্ক ভেঞ্চার’, ‘সাসটেইনেবল গ্রিন ইনিসিয়েটিভ’ ও ‘বালি নেচার ক্লাবে’র যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই মধু প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, এই প্রকল্পে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনের নদীর চরে ম্যানগ্রোভ রোপণ ও পরিচর্যার মধ্য দিয়ে ম্যানগ্রোভ রক্ষার কাজ করেছেন। প্রকৃতির প্রতি তাঁদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে স্বনির্ভরতার এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। ‘বাহা মৌ’ বা ‘বাহা মধু’ নামে বাজারে আসবে সুন্দরবনের এই মধু। ইতিমধ্যেই কো-অপারেটিভ তৈরি করে কাজ শুরু করা হয়েছে।

সুন্দরবনের মধুর কদর বিশ্ব জুড়ে। চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। শুধুমাত্র সুন্দরবনের গ্রামের মহিলারাই এই কাজের সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সংস্থার নির্দেশক অনিল মিস্ত্রি বলেন, “বন দফতর মউলেদের কাছ থেকে যে দামে মধু কেনে, তার থেকে কিছুটা বেশি দাম আমরা মউলেদের দেব। সেই মধুকেই জলীয় বাষ্পমুক্ত করে, সঠিক ভাবে পরিশোধন করে বোতলে ভরার পরে বাজারে বিক্রি করা হবে। প্রকল্প সফল হলে আগামী দিনে সুন্দরনের অন্য দ্বীপগুলিতেও একই ভাবে নতুন ইউনিট চালু করা হবে।” উদ্যোক্তাদের তরফে সন্দীপ রায়চৌধুরী বলেন, “আমরা মূলত সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ রক্ষা ও ম্যানগ্রোভ রোপণ নিয়ে কাজ করি। সেই কাজে এই গ্রামের মহিলারা যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমরা খুশি। তাই ওঁদের স্বনির্ভর করতে এই উদ্যোগ করা হয়েছে। আমেরিকার পাশাপাশি যাতে আরও কিছু পাশ্চাত্যের দেশে এই মধু বিক্রি করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।”

এই কাজে সুযোগ পেয়েছেন জয়ন্তী জানা, পূর্ণিমা মণ্ডল, সুস্মিতা প্রধান, মিতালি জানা, অন্তরা প্রধানেরা। তাঁরা বলেন, “আমরা এই কাজের সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি। এতে আমাদের আর্থিক সহায়তা হবে। এখান থেকে প্রাপ্য লভ্যাংশ আমাদের মধ্যে সমান ভাবে বণ্টন করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans america

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy