Advertisement
E-Paper

রান্নার গ্যাস ভরে ছুটছে অটো

বাসন্তী ব্লক জুড়ে বেআইনি ‘কাটা গ্যাসের’ কারবার চলছে। শুধু বাসন্তী নয়, একই ছবি পাশের ব্লক ক্যানিংয়েও। এই অঞ্চলে এলপিজি’র ‘ডোমেস্টিক সিলিন্ডার’ থেকে গ্যাস ভরা হচ্ছে যাত্রিবাহী অটোয়।

  প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:২৬
বেআইনি: বাসন্তীর ডকঘাট রোডে অটোয় ভরা হচ্ছে এই গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি: বাসন্তীর ডকঘাট রোডে অটোয় ভরা হচ্ছে এই গ্যাস। নিজস্ব চিত্র

বাসন্তী ব্লক জুড়ে বেআইনি ‘কাটা গ্যাসের’ কারবার চলছে। শুধু বাসন্তী নয়, একই ছবি পাশের ব্লক ক্যানিংয়েও। এই অঞ্চলে এলপিজি’র ‘ডোমেস্টিক সিলিন্ডার’ থেকে গ্যাস ভরা হচ্ছে যাত্রিবাহী অটোয়। এই ভাবে গ্যাস ভরাটা বিপজ্জনক হলেও এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক ভাবে চুপ এলাকার পুলিশ-প্রশাসন। অটো চালকদের দাবি, এলাকায় গ্যাস পাম্প না থাকায় এ ভাবেই অটোয় গ্যাস ভরতে হচ্ছে।
ক্যানিং ও বাসন্তী ব্লকে কম-বেশি প্রায় আড়াই হাজারের মতো ‘গ্রিন অটো’ চলে। পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমাতেই পরিবহণ দফতরের তরফ থেকে আগের পেট্রোল অটোগুলিকে ‘গ্রিন অটো’য় পরিবর্তন করা হয়েছিল। সে সময় থেকেই ক্যানিং, বাসন্তী-সহ আশেপাশের এলাকায় লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়েছে বেআইনি কাটা গ্যাসের রমরমা। বর্তমানে ওই এলাকায় দেড়শোর বেশি বেআইনি কাটা গ্যাসের দোকান রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। প্রতিদিন সেখানে ‘ডোমেস্টিক’ এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বিপজ্জনক ভাবে গ্যাস ভরা হয় অটোয়।
কোথা থেকে মিলছে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত এত গ্যাস সিলিন্ডার?
এই অঞ্চলের অনেক বাড়িতেই জ্বালানির বিকল্প ব্যবস্থা আছে। কাঠ বা কয়লার উনুনে রান্না হয়। এই সব বাড়িও গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। কিন্তু গ্যাসের উপরে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হওয়ায় এই সব পরিবারে সিলিন্ডার উদ্বৃত্ত হয়। এই সব সিলিন্ডার অনেকেই খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দেয় বলে জানা গেল। সেগুলি কিনে নেয় কাটা গ্যাসের কারবারিরা। প্রধানমন্ত্রীর ‘উজ্জ্বলা’ প্রকল্পের গ্যাসও অনেক পরিবার কাটা-গ্যাসের কারবারিদের কাছে বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ।
কিন্তু পুলিশ কেন আটকাচ্ছে না?
কাটা গ্যাসের কারবারিদের দাবি, পুলিশকে এ জন্য প্রতি মাসে মাসোহারা দিতে হয়। শুধু মাসোহারা নয়, পুলিশ ক্যাম্পে রান্না, থানায় অনুষ্ঠান-সহ সব কিছুতেই বিনামূল্যে গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। এমনকী, রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকেও প্রতি মাসে সিলিন্ডার দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসন্তীর এক বেআইনি গ্যাস কারবারি বলেন, “প্রতি মাসে পাঁচশো থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত মাসোহারা দিতে হয় স্থানীয় থানাকে। যার যেমন ব্যবসা, সেই হিসেবেই মাসোহারা নির্ধারিত। শুধু স্থানীয় থানা নয়, উপর মহলের পুলিশ কর্তাদেরও মাঝে-মধ্যে টাকা পাঠাতে হয়।’’
এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান।
কিন্তু অটো চালকরা কেন গ্যাস পাম্প থেকে গ্যাস না নিয়ে কাটা-গ্যাসে অটো চালান?
অটো চালকদের দাবি, এলাকায় কোনও গ্যাস পাম্প নেই। সে কারণেই তাঁরা বাধ্য হয়ে কাটা গ্যাস ব্যবহার করেন। কিন্তু গ্যাস কারবারিরা অটো চালকদের এই দাবি মানছেন না। তাঁদের পাল্টা-দাবি, শুধু পাম্পের অভাবের জন্য নয়, পাম্পের গ্যাসের তুলনায় ‘ডোমেস্টিক’ গ্যাসে বেশি ‘মাইলেজ’ পাওয়া যায়। পাম্পের গ্যাসে কেজি প্রতি ১৮-২২ কিলোমিটার মাইলেজ মেলে। কাটা গ্যাসে কেজি প্রতি মেলে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার মাইলেজ। বর্তমানে বাসন্তী ও ক্যানিং এলাকায় ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে কাটা-গ্যাস।
এলাকায় গ্যাস পাম্প না থাকার জন্যই কাটা-গ্যাসের রমরমা বলে যে দাবি অটো চালকেরা করেছেন, তা মানতে চাননি বারুইপুর পুলিশ জেলার পরিবহণ আধিকারিক অসীমকুমার পাল।
তাঁর দাবি, বাড়তি লাভের আশাতেই কাটা-গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। তিনি বলেন, “যে এলাকায় গ্যাস পাম্প গড়ে ওঠেনি, সেখানে এলপিজির সঙ্গে পেট্রলে চলার ‘ডুয়েল সিস্টেম’ দেওয়া হয়েছে অটোগুলিতে। কিন্তু পেট্রোলের দাম বেশি। কাটা-গ্যাসে ‘মাইলেজ’ও বেশি। সে জন্য পেট্রলে অটো না চালিয়ে কাটা গ্যাসেই অটো চালান তাঁরা।” তবে এলাকায় এখনও কেন গ্যাস পাম্প তৈরি হয়নি, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
‘ডোমেস্টিক’ সিলিন্ডার থেকে কাটা-গ্যাস অটোয় ভর্তি করতে গিয়ে যে কোনও সময়ে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় মানুষজনের। পুলিশ-প্রশাসনকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন তাঁরা।

Crime Auto Basanti Block
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy