পুলিশের জালে। বুধবার, বারাসতে। — নিজস্ব চিত্র
নকল শংসাপত্র বানিয়ে অনেককে পাসপোর্ট পেতে সাহায্য করছে একটি দল। এমনই খবর এসেছিল পুলিশের কাছে।
এ ভাবে পাওয়া তিনটি পাসপোর্ট নম্বরও হাতে এসেছিল পুলিশের। তা থেকে পাওয়া যায় বারাসত এলাকার তিনটি ঠিকানা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্টধারীরা কেউই থাকেন না সেই ঠিকানায়। কপালে ভাঁজ পড়ে পুলিশের।
বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য এই ভাবে নকল শংসাপত্র দিয়ে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সোনারপুরের সুভাষগ্রামের বাসিন্দা নীহাররঞ্জন দেবনাথের নাম উঠে আসে। তাঁকে জেরা করতেই ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়েছে বেড়াল। জানা গিয়েছে, যাঁদের কাছে ঠিকানা বা জন্মের শংসাপত্র নেই (তাঁদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন), তাঁদের নকল শংসাপত্র বানিয়ে পাসপোর্ট পেতে সাহায্য করতেন নীহাররা। আর সেই কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধেও। এঁরা সেই সব অফিসার, যাঁরা শংসাপত্র পরীক্ষা করে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে ‘নো অবজেকশন’ রিপোর্ট দেন।
ভাস্করবাবু জানান, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ডিআইবি অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। উঠে এসেছে সন্দেহভাজন আরও কয়েক জন ডিআইবি কর্মীর নামও। এই চক্রে আরও কারা জড়িত ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নীহার ছাড়াও ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সুব্রত ওরফে চঞ্চল চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস এবং বিপ্লব ঘোষ নামে আরও তিন যুবক। এঁরা দুই ২৪ পরগনার বাসিন্দা। বেআইনি নথি দিয়ে
পাওয়া ৮টি পাসপোর্টও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
কী ভাবে চলত এই চক্র?
পাসপোর্ট পেতে গেলে ন্যূনতম দু’টি প্রমানপত্র থাকতেই হয়। এক, বয়সের প্রমানপত্র। দুই, ঠিকানার প্রমানপত্র। বয়সের প্রমানপত্র হিসেবে প্রয়োজন বার্থ সার্টিফিকেট বা মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড (সম্প্রতি প্যান কার্ড বা আধার কার্ডও নেওয়া শুরু হয়েছে)। ঠিকানার প্রমানপত্র হিসেবে ভোটার কার্ড-সহ বেশ কিছু নথি নেওয়া হয়।
ভাস্করবাবুর অভিযোগ, এ রকম বেশ কিছু লোক আছেন, যাঁদের সেই সব কোনও প্রমানপত্রই নেই। কিন্তু তাঁরা বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট পেতে চান। তাঁদের ওই সব প্রমানপত্র জোগাড় করে দেওয়ার কাজ ছিল এই চক্রের।
কী করে পাওয়া যেত এই সব নথি?
পুলিশ সুপার জানান, কয়েকটি ফোটোকপির দোকান বেছে নিয়েছিলেন এঁরা। সেখানে যাঁরা ভোটার কার্ড-সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জেরক্স করাতে যেতেন, সেই দোকানে লুকিয়ে সেই নথির একটি করে প্রতিলিপি রেখে দেওয়া হতো। শংসাপত্র নেই এমন যাঁদের
পাসপোর্ট প্রয়োজন, তাঁদের ছবি ওই প্রতিলিপির উপরে সেঁটে ফের জেরক্স করা হতো। ফলে, ওই ব্যক্তি সহজেই অন্যের নামে একটি ঠিকানার প্রমানপত্র পেয়ে যেতেন।
এ বার জন্মের শংসাপত্র। ভাস্করবাবুর কথায়, ‘‘নকল অ্যাডমিট কার্ড বানিয়ে নিতেন এঁরা। প্রয়োজনে আদালতে গিয়ে হলফনামাও তৈরি করে নিতেন।’’ কারও জন্মের প্রমানপত্র না থাকলে ওই হলফনামাও নেয় বিদেশ মন্ত্রক।
ভাস্করবাবু এ দিন জানান, নকল শংসাপত্র পাওয়া লোকগুলি যখন পাসপোর্টের আবেদন করতেন, তখন তাঁরা চক্রের নির্দেশ মতো, ইচ্ছে করেই দু’টি ঠিকানা দিতেন। নকল শংসাপত্রে যে ঠিকানা রয়েছে, সেটিকে অস্থায়ী আর বারাসতের আশপাশে কোনও একটি ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা বলে পাসপোর্টের আবেদন করা হতো।
এর ফলে, আবেদনের পরে পুলিশ তদন্তের জন্য তা বারাসতের পুলিশের কাছেই আসত। সন্দেহ করা হচ্ছে, পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজসেই এটা করা হতো যাতে বারাসতের ওই অভিযুক্ত তদন্তকারীরা অনায়াসে সেই ব্যক্তির নামে ‘নো অবজেকশন’ রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতে পারেন বিদেশ মন্ত্রকে।
এর ফলে অন্যের নামে অনায়াসে পাসপোর্ট পেয়ে যেতেন কোনও ধরনের শংসাপত্র না থাকা মানুষগুলিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy