Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
South 24 Parganas

শাসক দলের গোষ্ঠীকোন্দল অব্যাহত দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, নেতারা ফিরতেই মারপিট

তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ফের গুলি-বোমাবাজির অভিযোগ উঠল বাসন্তীর শিমুলতলা এলাকায়।

টহল: বাসন্তীর গ্রামে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

টহল: বাসন্তীর গ্রামে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বাসন্তী ও ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০২:৫২
Share: Save:

দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে অশান্তির খবর ক্রমাগত সামনে আসছিল। তা রুখতে বুধবার সকালে ক্যানিংয়ে দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে এক সঙ্গে চলার বার্তা দেওয়া হয় নেতৃত্বকে। তবে সেই বার্তা যে দলের নিচুতলার কর্মীদের কানে পৌঁছয়নি, তার প্রমাণ মিলল রাতের মধ্যেই। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে ফের গুলি-বোমাবাজির অভিযোগ উঠল বাসন্তীর শিমুলতলা এলাকায়। এই ঘটনায় দুই যুব তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন। এদের মধ্যে ইজাজ আহমেদ লস্কর নামে একজনের পায়ে গুলি লাগে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। দু’জনকেই ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শটার বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। একজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় যুব তৃণমূল কর্মী ইজাজ ও রশিদ আলি গায়েনের উপরে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও এলাকায় এ দিক ও দিক পড়ে থাকতে দেখা যায় বোমার সুতলি।

বাসন্তী ব্লকের যুব তৃণমূল নেতা আমানুল্লা লস্কর বলেন, “বাসন্তীর তৃণমূল নেতা আব্দুল মান্নান গাজির ছেলে রাজা গাজির নেতৃত্বেই এই হামলা হয়েছে। পরিকল্পনা করেই যুব তৃণমূল কর্মীদের উপরে হামলা করা হয়েছে। ওরা এলাকায় যুব তৃণমূল করতে না দিতে চায় না।” অভিযোগ অস্বীকার করে রাজা বলেন, “এরা দুষ্কৃতী। সন্ধ্যায় শিমূলতলা বাজারে বন্দুক নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। মানুষকে ভয় দেখাচ্ছিল। এলাকার মানুষই তাদের বন্দুক কেড়ে মারধর করেছে। এই ঘটনায় কোনও রাজনীতি নেই।” ঘটনার পরে অবশ্য আর জেলা সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

বুধবার রাতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়ও। ভাঙড়ের পদ্মপুকুর গ্রামে বেশ কয়েকজন যুব তৃণমূল কর্মীর বাড়ি, মোটরবাইক ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমল কর্মীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ভাঙড় ১ ব্লকে এলাকা দখল নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছে তৃণমূল ও যুব তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে। দিন কয়েক আগে ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি বাদল মোল্লার উপরে বোমাবাজি ও তাঁকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে ভাঙড় ১ (এ) ব্লক তৃণমূলের সভাপতি কাইজার আহমেদ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকে এলাকাছাড়া কাইজার।

বুধবার রাত ১০টা নাগাদ বাসন্তী হাইওয়ে লাগোয়া পদ্মপুকুরে কাইজার অনুগামী মিঠু মোল্লার রবারের গোডাউনে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ভাঙড় থানার পুলিশ। আসে দমকলের একটি ইঞ্জিনও। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে আসে। মিঠুর অভিযোগ, যুব তৃণমূল কর্মীরাই তাঁর গোডাউনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

অভিযোগ, ঘটনার পরে মিঠু মোল্লা, কালো মোল্লা সহ ৫০-৬০ জনের একটি দল পাল্টা আক্রমণ করে ওই এলাকার যুব তৃণমূল কর্মী আতিয়ার মোল্লা, জাকির মোল্লা, মোজাম মোল্লা-সহ বেশ কয়েকজনের বাড়ি, মোটরবাইক ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা নুর বানু বিবি, সখিনা বিবিরা বলেন, “রাত ১টা নাগাদ ওরা বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ করে দিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। বাধা দিতে গেলে মারধর করে। আমরা এলাকায় যুব তৃণমূল করি বলেই কাইজার অনুগামীরা তাণ্ডব চালিয়েছে।”

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কাইজার বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার কোনও লোক জড়িত নেই। আমি দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার বাইরে রয়েছি। ওই এলাকায় কী হচ্ছে তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। দিন কয়েক আগে ভাঙড়ে আব্বাস সিদ্দিকির দলবদলের সঙ্গে যুব তৃনমূলের গন্ডগোল হয়। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।” যুব তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, এলাকার কাইজার অনুগামী তৃণমূল কর্মীরা নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ইদানীং আব্বাস সিদ্দিকির আহলে সুন্নাতুল জামাতে নাম লিখিয়েছেন।

ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি শওকত মোল্লা বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। আমরা এই ঘটনাকে কোনও ভাবেই সমর্থন করি না। পুলিশকে বলব, নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

South 24 Parganas TMC Basanti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE