Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
School Reopening

School Renovation: ‘সব পড়ুয়াকে বসতে দেওয়াই সমস্যা’

সন্দেশখালি ২ ব্লকেরও অনেক স্কুলের বিভিন্ন জিনিস মেরামতির জন্য লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১৮
Share: Save:

এখনও শিয়রে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। স্কুল কবে খোলা হবে, তা নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক বিস্তর। রাজ্য ইতিমধ্যে স্কুল খোলার ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ছেলেমেয়েদের পা পড়েনি স্কুলে। কী অবস্থায় আছে পরিকাঠামো, তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালির মতো নদীবেষ্টিত এলাকার অনেক স্কুল খুলতে হলে মেরামতির জন্য লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন সূত্রের খবর, মূলত ৭টি বিষয়ে মেরামতির খরচ জানতে চাওয়া হয়েছিল। ক্লাসঘর, মিড ডে মিলের রান্নাঘর, শৌচাগার, পানীয় জলের কল, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। এ ছাড়াও, ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুনাশের খরচও জানাতে বলা হয়েছিল স্কুলগুলিকে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বেশিরভাগের পাঁচিল না থাকায় সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি। নবীনগঞ্জ এফপি স্কুলের সংস্কারের জন্য প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন বলে দাবি করা হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির মধ্যে সব থেকে বেশি মেরামতির খরচ জানিয়েছেন স্বরূপকাটি এফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন মণ্ডল। এই স্কুলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন বলে দাবি। নিরঞ্জন বলেন, ‘‘স্কুলে ৪টি পাখা লাগিয়েছিলাম খুব কষ্টে অর্থ সংগ্রহ করে। ভোটের পরে এসে দেখলাম, ২টি ফ্যান চুরি হয়ে গিয়েছে। আর ২টি ফ্যান ভাঙচুর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শৌচাগারের ৬টি দরজা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শৌচাগার নোংরা করা হয়েছে।” নিরঞ্জন আরও জানান, বহুদিন ধরে ৩টি ক্লাস ঘর, রান্না ঘর ও অফিস ঘর বেহাল। এখন আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে। হাওয়া দিলে দেওয়াল থেকে বালি ঝরে পড়ে। তাঁর মতে, আড়াই লক্ষ টাকাতেও সব মেরামত হবে কিনা সন্দেহ। স্কুলের নিজস্ব পানীয় জলের কল নেই, শুধু পাইপ বসানো আছে বলেও জানালেন তিনি।

জুনিয়র ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি মেরামতি প্রয়োজন দুলুদলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুল ও দুর্গাপুর বাইলানি হাইস্কুলের। দুলদুলি স্কুলের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। প্রধান শিক্ষক পলাশ বর্মণ বলেন, ‘‘৩টি ভবনের মধ্যে ২টি মেরামত করা যাবে না। পুরোপুরি ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। ক্রমশ খারাপ হতে হতে এখন এমন অবস্থা হয়েছে, এই ভবন ভেঙে ফেলে নতুন না করলে ৯০০ জন পড়ুয়াকে বসতে দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। একটি ভবনের উপরে নতুন করে তৈরি কয়েকটি ঘরই যা ভাল আছে বলে জানালেন তিনি। পলাশ আরও জানান, মিড ডে মিলের রান্না ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। প্রায় ১০০টি বেঞ্চ মেরামত করা দরকার।

সন্দেশখালি ২ ব্লকেরও অনেক স্কুলের বিভিন্ন জিনিস মেরামতির জন্য লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। সন্দেশখালি রাধারানি হাইস্কুল ৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকার জন্য আবেদন করেছে। প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘স্কুলের একটা তিনতলা ভবন ভগ্ন অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। দ্রুত ভেঙে ফেলে নতুন ভবন তৈরি করতে প্রায় ১ কোটি টাকা লাগতে পারে। জেলা থেকে নবান্ন— সর্বত্র জানিয়েছি। কোনও ফল হয়নি।’’ বিকাশ জানান, স্কুলে প্রায় ১৩০০ পড়ুয়া রয়েছে। স্কুল খুললে ছাত্রদের এই বিপজ্জনক ভবন বাদ দিয়ে ক্লাসে বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব, তা বোঝা যাচ্ছে না। শৌচাগার সংস্কার করা দরকার, প্রায় ৩০টি বেঞ্চ খারাপ হয়ে গিয়েছে বলেও জানালেন তিনি।

অন্য দিকে, সন্দেশখালি আতাপুর কেনারাম হাইস্কুলের তরফে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা মেরামতির জন্য আবেদন করেছে। স্কুল সূত্রের খবর, স্কুলের ৪টি পানীয় জলের কলের মধ্যে ৩টি অকেজো হয়ে গিয়েছে। রান্না ঘর ও ছাত্রীদের শৌচাগারের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। শিক্ষকদের শৌচাগারও বেহাল। প্রায় ৪০টি বেঞ্চ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, ‘‘আমপান, ইয়াসের পরে বার বার স্কুলে ত্রাণ শিবির হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের প্রথম দিকে থাকার ব্যবস্থাও ছিল। ভোটের সময়ে পুলিশের ক্যাম্প হয়। সব মিলিয়ে স্কুলের বেশ কিছু জিনিসের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, ঝড়েও ক্ষতি হয়েছে।”

এই ব্লকের দাউদপুর এইসএল শিক্ষানিকেতনের নীচের তলার প্রত্যেকটি ঘরে ইয়াসের পরে প্রায় হাঁটুসমান জল জমে যায়। ছাত্রদের শৌচাগারের দেওয়াল ভেঙে গিয়েছে। মিড ডে মিলের খাওয়ার ঘর, ছাত্রী ও শিক্ষকদের শৌচাগারে এখনও জল জমে আছে। স্কুলের সামনের মাঠে জল আছে। প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘স্কুলের মাঠে জল জমে যে অবস্থা হয়েছে, তা সংস্কার করা খুব দরকার। মেরামতির জন্য প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আবেদন করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Reopening expenses
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE