কাজ নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের বিরোধ চলছিলই। সপ্তাহখানেক আগে কুলতলির নলগড়া ৬ নম্বর নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের সুষমা সর্দার হালদার নামে ওই পার্শ্বশিক্ষিকাকে স্কুলেরই একটি ঘরে আটকে রেখে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন সুষমা। রাজ্য পার্শ্ব শিক্ষক সমন্বয় সমিতি এই ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে।
ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মহলে স্পিড পোস্ট এবং ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছেন বারুইপুরের বাসিন্দা ওই পার্শ্বশিক্ষিকা। বারুইপুর থানায় ডায়েরিও করেছেন তিনি। পুলিশের তরফে সুষমার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। ওই শিক্ষিকা বলেন, “স্কুলে যেতে ভয় করছে। যাতে নিরাপদে কাজটা করতে পারি, প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করুক।”
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হেনস্থার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, ওই শিক্ষিকা দিনের পর দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন, এই অভিযোগ তুলে অভিভাবকদের একাংশ কুলতলি থানায় আগেই গণ-প্রতিবাদপত্র জমা দিয়েছিলেন। সুষমার অবশ্য দাবি, পার্শ্বশিক্ষিকা হিসাবে যেটুকু কাজ করার কথা, তা তিনি করেন। স্থানীয় বিধায়ক গণেশ মণ্ডলের দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের যোগ নেই। উনি যদি নিয়মিত স্কুলে আসেন এবং কাজ করেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসন অবশ্যই নেবে।”
অভিযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ মাইতি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “স্কুলের পঠনপাঠনের কী ভাবে আরও উন্নতি হয়, সেটাই আমার লক্ষ্য।” কুলতলি দক্ষিণ চক্রের স্কুল পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, কিছু দিন আগে এক বার ওই শিক্ষিকা মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তদন্তে অভিযোগের সারবত্তা মেলেনি। নতুন করে হেনস্থার কোনও অভিযোগ মেলেনি।
সুষমা প্রায় ২০ বছর ওই স্কুলে পার্শ্বশিক্ষিকা হিসাবে রয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁর উপরে মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। বছরখানেক আগে গৌরাঙ্গ মাইতি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে আসার পরে সমস্যা শুরু হয়। তাঁকে জোর করে বেশি কাজ করানো হচ্ছিল এবং প্রতিবাদ করলে মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছিল বলে সুষমার অভিযোগ। এমনকি, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বিষয়টি বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানালেও কাজ হয়নি বলে দাবি সুষমার।
সুষমার আরও অভিযোগ, স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা নিজেদের বিধায়কের প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিয়ে সারা বছর স্কুলের কাজে খবরদারি চালান। এমনকি, প্রধান শিক্ষককেও তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করেন। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষক-সহ ওই নেতাদের বিরুদ্ধে কুলতলি থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন সুষমা। তাঁর দাবি, পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। উল্টে সেই খবর পাওয়ার পরে তাঁর উপরে নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে।
এর পরেই গত বুধবার অভিভাবকদের মতামত জানতে বৈঠক ডাকা হয় স্কুলে। অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের পছন্দের অভিভাবকদেরই হাজির করানো হয়েছিল। বকলমে নেতারাই বৈঠক পরিচালনা করেন। তাঁদের নির্দেশেই এবং প্রধান শিক্ষকের মদতে তাঁকে একটি ঘরে তালাবন্দি করে হেনস্থা ও মারধর করা হয় বলে সুষমার অভিযোগ।
রাজ্য পার্শ্বশিক্ষক সমন্বয় সমিতির সভাপতি অলোককুমার সরকার বলেন, “স্কুলের মধ্যে ওই শিক্ষিকার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)