E-Paper

লকডাউনের সময় টোপ দেন কেরামতরা, এই সময় থেকেই ফুলেফেঁপে ওঠে বেআইনি বাজির কারবার

বছর পাঁচেক আগেও ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোচপোল এলাকায় বাজির কারবার সে ভাবে চোখে পড়ত না। এখন ঘরে ঘরে মহিলারা হাত লাগিয়েছেন। কেন কয়েক বছরে এত রমরমা হল এই কারবারের?

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৯
বছর কয়েক আগে বাজি ফেটে জখম হন এই মহিলা।

বছর কয়েক আগে বাজি ফেটে জখম হন এই মহিলা। —নিজস্ব চিত্র।

বছর পাঁচেকের মধ্যে বদলে গিয়েছে এলাকার চেহারা-চরিত্র।

বছর পাঁচেক আগেও ইছাপুর-নীলগঞ্জ পঞ্চায়েতের মোচপোল এলাকায় বাজির কারবার সে ভাবে চোখে পড়ত না। অথচ, সেখানেই এখন ঘরে ঘরে মহিলারা হাত লাগিয়েছেন এই কারবারে। কেন কয়েক বছরে এত রমরমা হল এই কারবারের? কী ভাবেই বা পুলিশ-প্রশাসন ও নেতাদের সামনে কারবার চালাতেন কেরামত আলি, আজিবর রহমানেরা?

স্থানীয়দের দাবি, চার বছর আগে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বেআইনি বাজি তৈরির কারখানাটি চালু হয়েছিল। তার পরেই আসে লকডাউন-পর্ব। সেই সময়ে চারদিকে মন্দা। গ্রামের অনেকের হাতেই কাজ ছিল না। বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছিল না। দিনে দু’তিনশো টাকাও তখন অনেক পরিবারের কাছে অনেক। গ্রামবাসীরা অনেকে জানালেন, সে সময়ে আজিবর রহমান, কেরামত আলিরা টোপ দেন, এক হাজার বাজিতে আঠা ও প্লাস্টিকের মোড়ক লাগালে ১১০ টাকা। বাড়ির সকলে মিলে এই কাজে সাহায্য করতে পারে। কারবারিরাই বাজি দিয়ে যেতে এবং বাড়ি থেকে নিয়ে যেত। তাই সহজে আয়ের এই রাস্তা ধরেন অনেকেই। রাতারাতি ফুলেফেঁপে ওঠে বাজির কারবার। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক মহিলার কথায়, ‘‘কাজটা বিপজ্জনক জেনেও সে সময়ে টাকার জন্য হাত লাগিয়েছিলাম।’’

তবে আপত্তিও কম হয়নি। মোচপোলের বহু মানুষ শুরুতে প্রতিবাদ করেছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, শাসক দলের নেতা এবং পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে সেই আপত্তি বেশি দিন টেঁকেনি। কয়েক জন গ্রামবাসী জানালেন, মূলত তৃণমূল কর্মী আজিবর রহমান এবং কেরামত আলির নেতৃত্বেই শুরু হয়েছিল কারবার। গ্রামের যুবক মান্নাত গাজি বলেন, ‘‘বিপজ্জনক কাজ চলছে বুঝতে পেরে, কী ধরনের মশলা ব্যবহার করা হচ্ছিল, তা জানাতে বলেছিলাম ওঁদের। বাজির আড়ালে বোমা তৈরি হচ্ছে কি না, সেই সংশয় ছিল। কিন্তু শাসক দলের লোকজন শাসানি দিয়ে আমাদের চুপ করিয়ে দিয়েছিল।’’

গ্রামের অনেকে জানালেন, পুলিশের সহযোগিতা কখনওই মেলেনি। ‘প্রভাবশালীদের’ চাপও ছিল বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে বাজি কারবারিরাও নিজের মতো করে স্থানীয়দের উপরে প্রভাব খাটাতেন। যেমন, মান্নাত গাজি জানালেন, এলাকায় এক যুবক বাড়ি বাড়ি ঘুরে মহিলাদের বোঝাতেন, বলতেন এই কাজ না করতে। বাজির কারবারি মহিলাদের একজোট করে উল্টে ওই যুবকের বাড়িতেই পাঠিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে ওই মহিলারা যুবককে বলেন, রোজ তাঁদের জনপিছু ৩০০ টাকা করে দিলে তাঁরা কাজ ছেড়ে দেবেন।

গ্রামের এক বাসিন্দা জানালেন, এলাকার এক ইমামও মহিলাদের বুঝিয়েছিলেন। তখন বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদের ইমামের বাড়ি পাঠানো হয়। তারা গিয়ে জনপিছু দৈনিক ২০০ টাকা করে দাবি করে। ঘটনাটি জানিয়ে ওই বাসিন্দা বলেন, ‘‘বুঝতেই পারছেন, এর পরে আর কেউ হাঙ্গামার ভয়ে লোকজনকে বোঝাতে যায়নি।’’

পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাজি কারবারিদের এই ‘কৌশলের’ পিছনেও রাজনৈতিক মাথা থাকা অসম্ভব নয়। এত বড় বিস্ফোরণের পরে কি ফের মাথা তুলবে বাজি তৈরির ব্যবসা? এই মুহূর্তে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ। এক দল মহিলা জানালেন, তাঁরা এখন এককাট্টা, আর ব্যবসা চালু করতে দেবেন না। এক জনের কথায়, ‘‘গ্রামে আর এই কারবার আমরা চলতে দেব না। প্রয়োজনে কারবারিদের পিটিয়ে তাড়াব।’’

এই নিয়ে এ দিন পুলিশ বা শাসকদলের তরফে কিছু বলতে চাওয়া হয়নি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dattapukur Coronavirus Lockdown

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy