Advertisement
E-Paper

কোথা থেকে আসছে এত আগ্নেয়াস্ত্র, প্রশ্ন গ্রামবাসীদের

পুলিশ জানিয়েছে, মণি দাস ও সুকদেব দাস নামে ওই দুই ভাইয়ের বাড়ি বর্ধমান জেলার অবিরামপুর এলাকায়। মণির ডান হাতে এবং সুকদেবের ডান পায়ের ঊরুতে গুলি লেগেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩৫
two injured of gunfire at Habra

জখম দুই যুবককে নিয়ে আসা হয়েছে হাসপাতালে। ছবি: সুজিত দুয়ারি

হাবড়ায় গুলি চালানোর কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। রবিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হাবড়া থানার জিওলডাঙার রাঙাবালি পাড়ায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন দুই ভাই। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কেন গুলি চলল, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। গুলি চলার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।

পুলিশ জানিয়েছে, মণি দাস ও সুকদেব দাস নামে ওই দুই ভাইয়ের বাড়ি বর্ধমান জেলার অবিরামপুর এলাকায়। মণির ডান হাতে এবং সুকদেবের ডান পায়ের ঊরুতে গুলি লেগেছে। নিউটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসাধীন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বারাসতের পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় সোমবার বলেন, “গুলি চালানোর কারণ স্পষ্ট নয়। জখম যুবকেরা পুলিশকে তদন্তে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কারণ জানতে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তবে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোনও মহিলা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে গুলি চলতে পারে। পুলিশ সুকদেবের মোবাইলটি নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, মোবাইলটি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দু’টি কার্তুজের খোল, দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া একটি হেলমেট উদ্ধার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকদেব ও মণি চেন্নাইতে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তাঁরা হাবড়ায় রাঙাবালিপাড়া এলাকায় মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। রবিবার তাঁরা কাছেই বাণীপুর লোক উৎসবে গিয়েছিলেন। রাত ৮টা নাগাদ সেখান থেকে মামার বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। কাছেই কাঁঠালবাগান এলাকায় মাসির বাড়িতে রাতে দুই ভাইয়ের খাওয়ার কথা ছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সুকদেব মামার বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে একটি ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটিতে বসে ফোনে কথা বলছিলেন। অভিযোগ, ওই সময় বাইকে দুই দুষ্কৃতী এসে দাঁড়ায়। সুকদেবের সঙ্গে কোনও কারণে তাদের বচসা-ধস্তাধস্তি বাধে। ওই সময় একজন সুকদেবকে গুলি করে। সুকদেবের চিৎকার শুনে মণি ভাইকে বাঁচাতে গেলে দুষ্কৃতীরা তাঁকেও গুলি করে। মণি ও সুকদেবের মামি গীতা দাস ঘটনাস্থলেই ছিলেন। গীতার কথায়, “আমাদের কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। দুষ্কৃতীদের উদ্দেশ্য ছিল ভাগ্নের মোবাইল ছিনতাই করা। আমার দিকেও ওরা বন্দুক তাক করেছিল। কাউকে চিনতে পারিনি।” ঘটনার পর গ্রামের মানুষ দুই ভাইকে ভ্যানে করে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।

বাসিন্দারা জানান, এখন ছোটখাটো গোলমালের ঘটনাতেও বোমা-গুলি চলছে। দুষ্কৃতীরা কোথা থেকে এত অস্ত্র পাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের কড়া পদক্ষেপের দাবি জানান তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ দাস বলেন, “রাস্তার পাশে বাড়ি। বৌ-বাচ্চা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।” বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ, কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়ার পর পুলিশ নড়েচড়ে বসেছিল। কিছু পুরনো আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। তারপরও আগ্নেয়াস্ত্র যে এলাকায় থেকে গিয়েছে তা রবিবারের রাতের ঘটনায় প্রমাণিত। অভিযোগ, কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই সহজেই মিলছে আগ্নেয়াস্ত্র।

সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার বোমা-গুলি চলেছে এলাকায়। পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর ১৮ মে রাতে মিন্টু বিশ্বাস ওরফে মিন্টা নামে এক দুষ্কৃতীর নেতৃত্বে একদল যুবক হাবড়ার শ্রীনগর এলাকায় হামলা চালায়। গুলিতে রাজু ঘোষ এবং শান্তনু রায় নামে দু’জন জখম হয়েছিলেন। গত বছর মে মাসেই নগরথুবা পদ্মারপাড় এলাকায় ঘরের মধ্যে বোমা ফেটে এক মহিলা জখম হয়েছিলেন। গত বছর মথুরাপুর দাসপাড়া এলাকা থেকে ২০টি বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ।

ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, “পুলিশ প্রশাসনের উদাসীনতায় গুলি চলেছে। ঘটনাটি তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। এলাকার লোকজন তো বলছেন, অন্য কারও উপর হামলা চালাতে গিয়ে ভুলবশত পথচারীর উপর গুলি চালানো হয়েছে।” সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূল মহড়া চালাচ্ছে। দুষ্কৃতীরা জানাচ্ছে তারা আসরে নেমে পড়েছে।” হাবড়ার বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, “পারিবারিক গোলমালে ঘটনাটি ঘটেছে। দুষ্কৃতীরা ওদের বর্ধমান থেকে ফলো করছিল। হাবড়ায় তৃণমূলের গুলি বোমা লাগে না। বিরোধীদের পঞ্চায়েত ভোটে ‘জ়িরো’ করে দেওয়া হবে।”

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার দুষ্কৃতীরা দেশি পাইপগান ব্যবহার করেছিল। তাদের খোঁজ চলছে। পুলিশের দাবি, নিয়মিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা ও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হয়।

Habra Gunfire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy