অগত্যা: এই পেশা বেছে নিতে হয়েছে সুভাষকে। নিজস্ব চিত্র
এমএ পাশ করেছেন। বিএড পড়েছেন। ইচ্ছে ছিল, বড় কোনও স্কুলে শিক্ষকতা করবেন। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এখনও পড়ান বটে। গ্রামের গরিব পরিবারের কয়েকজন খুদে পড়ুয়ার বাড়িতে বসে তাঁর ক্লাস। যে যা দেয়, ৫০-১০০ করে টাকা পান। বাকি সময়টা জুতো সারাই করেন ‘মাস্টারমশাই।’ জীবনের শুরুতে দিনমজুরি করে, জুতো সেলাই করে পড়ার খরচ চালাতে হত। চুয়াল্লিশ বছরে এসেও জীবনটা বিশেষ এগোয়নি সুভাষচন্দ্র দাসের।
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের গোবিন্দকাটি গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ ইতিহাসে এমএ করেছেন। পরে বিএড করেন। বেসরকারি কলেজে বিএড পড়ার সময়ে সাহায্য পেয়েছিলেন তৎকালীন স্থানীয় বিধায়ক গোপাল গায়েন, বর্তমান বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলদের।
সুভাষ জানান, ২০১৫ সালের শেষের দিকে উচ্চ প্রাথমিকের টেট পরীক্ষায় বসেছিলেন। ইন্টারভিউয়ে ডাক পান। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়োগ-সংক্রান্ত দুর্নীতির খবরগুলি দেখে মনে হয়, স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ হলে আমি এতদিনে কোনও বড় স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক হয়ে ছাত্র পড়াতাম।’’
এখন প্রতিদিন ভোরে উঠে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত জনা পঁচিশ দুঃস্থ পড়ুয়াকে পড়ান সুভাষ। বেলা বাড়লে যোগেশগঞ্জের চৌমাথায় নিজের খুপরি দোকানে বসেন জুতো সেলাইয়ের কাজ নিয়ে। উপার্জন মাস গেলে ২-৩ হাজার টাকা, জানালেন সুভাষ। বলেন, ‘‘খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। ২০০৭ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ পাশ করি। শিক্ষক হওয়ার জন্য বিএড করা জরুরি ছিল। প্রয়োজন ছিল লাখখানেক টাকা। ট্রেনে ঘুরে জুতো সেলাই করে টাকা জমানো শুরু করি।’’ প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়কের অর্থানুকূল্যে পরে সেই ডিগ্রিও পেয়েছেন।
এলাকায় বেশিরভাগ দরিদ্র, পিছিয়ে থাকা মানুষের বসবাস। একটু বড় হতেই ছেলেমেয়েরা ধামা-কুলো তৈরি করা, জুতো সেলাইয়ের পেশায় চলে যান। সুভাষ ভেবেছিলেন, তাঁর ভাগ্যের চাকা হয় তো অন্য পথে এগোবে। ভেবেছিলেন, তিনি সরকারি চাকরি পেলে এলাকার আরও পাঁচটা ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষায় উৎসাহ পাবে। কিন্তু সুভাষ নিজেই পড়ে গেলেন একই আবর্তে।
বাড়ির বড় ছেলে তিনি। ভাইয়ের সংসারে থাকেন। সুভাষের কথায়, ‘‘বছরখানেক আগে মা হৃদরোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য কয়েক লক্ষ টাকার দরকার ছিল। জোগাড় করতে পারিনি। কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন মা।’’ হতাশায় ডুবে যায় অসহায় সন্তানের গলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy