ঘরহারা: গৌরী ও সবিতা। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িওয়ালা পাততাড়ি গোটানোর কথা জানিয়ে দিয়েছেন। পেতলের বালতি, টেবিল ফ্যান, ঘরের আসবাবপত্র হাতবদল করে পাওনাদারদের দেনা মিটিয়ে শ্যামনগরে আদি বাড়ির দিকে রওনা দিলেন গৌরী-সবিতারা। অস্ত্র কারবারি মনোতোষ দে-র সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। কিন্তু মনতোষের সঙ্গে নাম জড়ানোয় বিব্রত দু’জনেই। যে কারণে গোটাতে হল বসিরহাটের ঠিকানা। শহর ছাড়ার আগে দু’জনে বলে গেলেন, ‘‘ভাল মানুষের ছদ্মবেশে লোকটা আমাদের শেষ করে দিল।’’
কয়েক দিন আগে কলকাতা স্টেশন থেকে বাংলাদেশি দুই জঙ্গি-সহ ধরা পড়ে মনোতোষ। ক্রমশ বসিরহাটে একের পর এক ডেরার সন্ধান মিলতে থাকে তার। জানা যায়, একাধিক বিয়েও সেরে ফেলেছিল মনতোষ। গৌরী নিজেকে প্রথমে মনতোষের স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। পরে লালবাজারে গিয়ে আবার জানিয়ে আসেন, মনোতোষ তাঁর কাকা। সবিতাকে অবশ্য শুরু থেকেই মনোতোষের শাশুড়ি বলেই চিনত লোকে।
বসিরহাট শহরে দেড় কিলোমিটার ব্যবধানে দুই ভাড়া বাড়িতে মনতোষের দুই স্ত্রীর অস্তিত্ব জানাজানির পরে বিস্ময় ছড়ায় সব মহলে। গৌরী ও আফরোজা নামে স্ত্রী পরিচয়ে থাকা দুই মহিলা একে অন্যের সম্পর্কে খবর রাখতেন না বলে দাবি করলেও বিষয়টি খুবই অস্বাভাবিক ঠেকেছে তদন্তকারীদের কাছে। তদন্ত যত এগিয়েছে, জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে অন্তত দশবার বাড়ি বদলেছে মনতোষ। বসিরহাটের মৈত্রবাগান এবং স্কুলবাড়ি এলাকায় তার ভাড়া বাড়ি দু’টি থেকে গুলি, বন্দুকও উদ্ধার হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মৈত্রবাগানের বাড়িতে মনতোষের স্ত্রী-শাশুড়িকে আর থাকতে দিতে রাজি নন বাড়িওয়ালা দেবাশিস চক্রবর্তী। পড়শিরাও আপত্তি করছেন বলে দাবি তাঁর। সোমবার রাতে সেখানে এসেছিলেন গৌরী-সবিতা। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে যান।
মঙ্গলবার সকালে ফের এসেছিলেন। তাঁদের ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করার অনুমতি মেলে পুলিশের তরফে। ম্যাটাডরে মালপত্র নিয়ে এলাকা ছাড়েন দুই মহিলা।
তাঁদের দেখতে এ দিন উপচে পড়েছিল ভিড়। এ দিকে, সকাল থেকে একে একে জড়ো হতে থাকেন পাওনাদারেরা। তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘কয়েক হাজার টাকা বাকি আমার দোকানে। ওঁরা এখান থেকে চলে যাচ্ছেন শুনে সেটাই চাইতে এসেছি। কিন্তু ওঁরা বলছেন, হাতে টাকা নেই। কী যে করি!’’
এমন বক্তব্য শোনা গেল আরও কয়েকজনের কাছ থেকে। শেষমেশ আলোচনার পরে ঠিক হয়, বাড়ির কিছু কিছু জিনিস পাওনাদারদের হাতে দিয়ে যাবেন গৌরীরা। কাউকে টেবিল ফ্যান, কাউকে পেতলের বালতি, হাঁড়ি দিয়ে দেনা কিছু কিছু দেনা মেটান তাঁরা। কয়েক হাজার টাকা বিদ্যুতের বাকি পড়েছে। তবে সেই টাকা নেননি বাড়ির মালিক।
বসিরহাট শহরের ভঞ্জপাড়া এবং মার্টিনবার্ন রোডের পাশে বিদ্যুৎ দফতরের অফিসের পিছনে বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে থেকেছে মনতোষ। ওই বাড়ির মালিক শম্ভু কুণ্ডু জানালেন, বছরখানেক ছিল মনতোষ। সঙ্গে থাকতেন গৌরী-সবিতা। গৌরীকে সেখানে ভাইঝি এবং সবিতাকে বৌদি বলে ডাকত ওই ব্যক্তি। ওই বাড়িতে থাকার সময়েই মনোতোষ বসিরহাটের ধোপাপাড়ার শ্যামল দে নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গৌরীর বিয়েও দিয়েছিল। কয়েক দিন যেতে না যেতে ছাড়াছাড়ি হয়। অন্য এক মহিলাকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিল মনতোষ। সে ওই বাড়িতে থাকত না। তবে আফরোজার ছবির সঙ্গে তার মিল পাননি শম্ভুবাবু। সে আবার মনতোষের আরও এক স্ত্রী কিনা, তা নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy