Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মেলেনি অর্থ, বেহাল ভবন নিয়ে চিন্তায় বহু স্কুল কর্তৃপক্ষ

Schools reopening: প্রয়োজন সংস্কার, খোলার জন্য প্রস্তুত নয় অনেক স্কুলই

দুরবস্থা: মাঠ ঢেকেছে আগাছায়, ভবনের গায়ে শ্যাওলা। ক্যানিংয়ের একটি স্কুলে।

দুরবস্থা: মাঠ ঢেকেছে আগাছায়, ভবনের গায়ে শ্যাওলা। ক্যানিংয়ের একটি স্কুলে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২১ ০৯:৩৩
Share: Save:

নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে খুলছে স্কুল। সোমবার এ কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু স্কুল ভবন সংস্কার না করে বিদ্যালয় শুরু করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ।

আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠন পাঠন শুরু হবে। স্কুল খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া মহলের বড় অংশ। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দুই জেলার বহু স্কুলেই সংস্কারের প্রয়োজন। অনেক স্কুলে বিদ্যুতের লাইন, জল সরবরাহ ব্যবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ক্লাসরুম, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চেরও মেরামত দরকার। ইয়াসের জেরেও উপকূল এলাকার অনেক স্কুলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রশাসনের তরফে কিছু দিন আগেই স্কুলগুলির কাছে সংস্কারের জন্য কত অর্থ প্রয়োজন তা জানতে চাওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ সেই হিসেব দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কুলের হাতে টাকা না আসায় সংস্কারের কাজ থমকে রয়েছে। স্কুল খোলার আগে আদৌ সংস্কারের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়েই তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। পাশাপাশি গত কয়েক মাসে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলি হয়েছেন। ফলে অনেক স্কুলেই শিক্ষক-শিক্ষিকা সংখ্যা কমেছে। কী ভাবে পঠন পাঠন চলবে, তা নিয়েও অনেকে চিন্তিত।

হিঙ্গলগঞ্জের কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, “স্কুল খুলছে এটা খুবই আনন্দের খবর। এত দিন পর আবার পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা হবে ভেবে ভাল লাগছে। তবে স্কুলের পরিকাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন। সেই কাজ তো এখনও শুরুই হল না। এটা খুব চিন্তার বিষয়।” সন্দেশখালি ২ ব্লকের সন্দেশখালি রাধারানি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিকাশচন্দ্র পাল বলেন, “স্কুল পরিষ্কার থেকে শুরু করে বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, জানালা, দরজার সংস্কার দরকার। তাছাড়া বিদ্যুৎয়ের লাইন ও পানীয় জলের কাজ করাতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা দরকার। দফতরকে সে কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু টাকা না আসায় কাজ শুরুই হয়নি। জানি না কবে টাকা হাতে পাব।” হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ বর্মণও জানান, এখনও সংস্কারের টাকা হাতে পাননি। তাঁর কথায়, “আর টাকার অপেক্ষায় থাকলে হবে না। স্কুল তহবিলের টাকাতেই কাজ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি চরমে। ফলে ৬ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে কাজ চালাতে হয়। স্কুলের তহবিল থেকেই তাঁদের বেতন দেওয়া হয়। তহবিলের টাকায় সংস্কারের কাজ করতে হলে, আংশিক সময়ের শিক্ষকদের টাকা কী ভাবে দেব জানি না।”

হাবড়ার প্রফুল্লনগর বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, “প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার ফলে চেয়ার, টেবিল বেঞ্চের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে পড়ুয়াদের শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে বসানোর মতো পরিকাঠামো স্কুলে নেই।” ক্ষয় ক্ষতি মেরামত করতে স্কুল কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার টাকা অবশ্য পেয়েছে। তবে সেই টাকায় স্কুল চত্বর সাফ-সুতরো করা ছাড়া আর কিছু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সত্যজিৎ।

ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা মণ্ডল বলেন, “আমপানে স্কুলের পাঁচিল ভেঙে গিয়েছিল। মেয়েদের নিরাপত্তার স্বার্থে ধার দেনা করে স্কুলের পাঁচিল তৈরি করা হয়েছে। সেই টাকা এখনও পাইনি। নতুন করে সংস্কারের জন্যও কোনও টাকা আসেনি।” মথুরাপুর কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রাধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন, “প্রায় ৯০ হাজার টাকা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। কিন্ত ওই টাকা বিডিও মারফত টেন্ডার হয়ে কাজ শুরু হবে। তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। সরাসরি স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দিলে কাজ দ্রুত করা যেত। এত কম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।”

রাজনৈতিক সভা, মিছিল, খেলা, পুজোর কেনাকাটা, ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখা— সবই তো হল। তা হলে স্কুলগুলো বন্ধ থাকবে কেন? এই প্রশ্ন তুলে শিক্ষকমহল এবং অভিভাবকদের একটা অংশের ক্ষোভ ছিল। অবশেষ স্কুল খোলার সরকারি ঘোষণায় খুশি শিক্ষকেরা। খুশি অনেক অভিভাবকও। বনগাঁর বাসিন্দা বিমল প্রামাণিক বলেন, “সামনেই ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক। পড়াশোনা হয়তো চলছে, কিন্তু স্কুল না থাকায় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছিল। আশা করি, এবার স্বাভাবিক হবে।”

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, স্কুল সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সেই টাকা ব্লক প্রশাসনকে পাঠানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফেই খুব দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রদ্যোৎ সরকার বলেন, “ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্কুলকে টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্রুত বাকি স্কুলগুলিও টাকা পেয়ে যাবে।”

করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল খোলা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে কোনও কোনও মহলে। তবে চিকিৎসকদের একটা অংশ এক্ষেত্রে আশ্বস্ত করেছেন। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “অভিভাবকদের প্রায় সকলকেই টিকাকরণের আওতায় আনা গিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা টিকা পেয়েছেন। ফলে স্কুল খোলা যায়। তাছাড়া পড়ুয়ারা তো স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যে থাকবে। আমাদের চিন্তা মূলত বয়স্ক মানুষ, ও যাঁদের অন্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের নিয়ে। অল্প বয়সীদের নিয়ে চিন্তা অনেকটাই কম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE