Advertisement
E-Paper

Migratory worker: গোটা বছর ‘শ্রমিক’, পরীক্ষার সময়ে দেখা মেলে কিছু পড়ুয়ার

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই গরিব পরিবারের। বয়স আঠারোর দোরগোড়ায়।

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২২ ০৮:০৩
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

খাতায়-কলমে নাম আছে ঠিকই। তবে সারা বছর স্কুলে ওদের দেখা মেলে না। ক্লাসে যখন ভূগোল বা বিজ্ঞান পড়াচ্ছেন শিক্ষক, তখন নোট নেওয়ার বদলে বহু দূরে ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে ব্যস্ত ছোট ছোট হাতগুলো। বিশেষত, একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েই ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে যাচ্ছে অনেকে। উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ব্লকের বহু স্কুলেই এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের।

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, এই ছাত্রছাত্রীদের বেশিরভাগই গরিব পরিবারের। বয়স আঠারোর দোরগোড়ায়। এই বয়সে বাড়িতে বসে শুধু পড়াশোনা অনেকের কাছেই বিলাসিতা। এমনটা মনে করেন খোদ অভিভাবকদেরই একাংশ। পড়ুয়ারাও অনেকে চাইছে, কাজ করে সংসারের হাল ধরতে। সঙ্গে রয়েছে নিজেদের শখপূরণের তাগিদ। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের শংসাপত্র থাকলে কাজের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুবিধা মেলে। তাই পরীক্ষাটুকু দিতে স্কুলে হাজির হয় ওরা।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ বর্মণ জানালেন, তাঁর স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৫০ জন পড়ুয়া নিয়মিত আসে না। শুধু পরীক্ষার সময়ে আসে। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওরা তামিলনাড়ু, বেঙ্গালুরু, কেউ বা আন্দামানে শ্রমিকের কাজ করে। এরা কেউ মা-বাবার সঙ্গে চলে গিয়েছে। কেউ আবার একাই গিয়েছে।’’ তিনি জানান, ছাত্রীদের মধ্যেও এই প্রবণতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মা-বাবা শ্রমিকের কাজে গেলে মেয়েকে বাড়িতে একা রাখতে চান না। সে ক্ষেত্রে মেয়েকেও সঙ্গে নিয়ে যান তাঁরা।

এই স্কুলের নেবুখালি গ্রামের এক ছাত্রী ও তার ভাই দু’জনেই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। দু’জনে বাবা-মায়ের সঙ্গে তামিলনাড়ুতে সেলাইয়ের কাজ করে। তাদের বাবা বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। কাজ করতে পারি না। বাজারে অনেক ধারদেনা। তাই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী যা উপার্জন করছে, তা দিয়ে ঋণমুক্ত হচ্ছি। সন্তানেরা শুধু পড়াশোনা করলে খাওয়া জুটবে না।’’

অনেক পড়ুয়া আবার নিয়মিত স্কুলে আসতে চাইলেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে পেরে ওঠে না। উল্টে পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। কানাইকাটির বাসিন্দা এই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র সব দিন স্কুলে আসে না। প্রধান শিক্ষক জানালেন, ছেলেটি তার বাবার সঙ্গে গ্রামে পাথর মিস্ত্রির কাজ করে। যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে ছাত্রটি নিজের পড়ার খরচ চালায়।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের যোগেশগঞ্জ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক নিখিলচন্দ্র মণ্ডল জানান, তাঁর স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৪০ জন পড়ুয়া ভিন্ রাজ্যে কাজ করে। পরীক্ষার খবর পেলে পরীক্ষা দিতে স্কুলে আসে। কারণ হিসেবে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা অনেকেই মনে করে, সরকারি চাকরির বাজার ভাল নয়। ভবিষ্যতে শ্রমিকের কাজই করতে হবে। এই মানসিকতার জন্য ওদের মধ্যে পড়াশোনায় অনীহা। পাশাপাশি, সংসারে অভাবও বড় কারণ।’’

এই ব্লকের গোবিন্দকাটি শিক্ষানিকেতনেও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২৫ জন এমন পড়ুয়া মেলে। সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগর হাইস্কুলেরও একই অবস্থা। বর্তমানে এই স্কুলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৫০ জন পড়ুয়া ভিন্ রাজ্যে কাজ করছে। এই ব্লকের দক্ষিণ আখড়াতলা রবীন্দ্রশিক্ষা নিকেতনে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গড়ে প্রায় ২০ জন পড়ুয়া ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে যায় প্রত্যেক বছর।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলে ভর্তি হয়ে কাজে চলে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। তবে আমপান এবং করোনার পর থেকে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। আগে সংখ্যাটা স্কুল প্রতি ১০-১৫ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

যদিও পরীক্ষায় বসার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ন্যূনতম উপস্থিতি প্রয়োজন। তা না থাকা সত্ত্বেও কেন পরীক্ষায় কেন বসতে দেওয়া হয় এই পড়ুয়াদের?

অনেক স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানালেন, দরিদ্র পড়ুয়ারা বার বার অনুরোধ করে। তাদের অবস্থার কথা বিবেচনা করেই সহানুভূতির সঙ্গে বিষয়টি দেখা হয়। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে অভিভাবকদের বুঝিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরাতে।

এ বিষয়ে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের এআই ললিত মহাজন বলেন, ‘‘অভিভাবকেরা যদি পড়াশোনা নিয়ে সচেতন না হন, তা হলে এই সমস্যার সমাধান করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। কোনও পড়ুয়া দীর্ঘদিন না এলে আমরা খোঁজখবর নিই। কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, পড়ুয়াকে স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করতে।’’

migrant labour school student Hasnabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy