Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মতুয়াদের উচ্ছ্বাসে ভাসল ঠাকুরনগরে

বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল উৎসব। মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরে বাজি ফাটিয়ে মতুয়ারা উল্লাস প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডঙ্কা-কাঁসি বাজিয়ে, লাল-সাদা মতুয়াদের নিশান নিয়ে ভক্তেরা ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে জড়ো হতে থাকেন।

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কুশপুতুল পোড়ানো হল ঠাকুরনগরে। নিজস্ব চিত্র

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কুশপুতুল পোড়ানো হল ঠাকুরনগরে। নিজস্ব চিত্র

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:২৭
Share: Save:

লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাশ হওয়ায় মতুয়াদের একটা বড় অংশের মানুষ খুশি। তাঁরা মনে করছেন দীর্ঘদিনের দাবিকে মান্যতা দিল কেন্দ্র সরকার।

বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল উৎসব। মতুয়াদের পীঠস্থান গাইঘাটার ঠাকুরনগরে বাজি ফাটিয়ে মতুয়ারা উল্লাস প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ডঙ্কা-কাঁসি বাজিয়ে, লাল-সাদা মতুয়াদের নিশান নিয়ে ভক্তেরা ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়িতে জড়ো হতে থাকেন। মুখে ‘হরিবোল’ ধ্বনি।

সুশীলকুমার বিশ্বাস নামে এক বৃদ্ধ মতুয়া ভক্ত বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছিলাম। এত দিন নিজেদের অস্তিত্বহীন মনে হত। কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব বিল এনে আমাদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এখন মনে হচ্ছে, আমরা এ দেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা খুঁজে পেলাম।’’ পাশাপাশি তাঁর মত, ‘‘ঘোষণার সঙ্গে তা কার্যকর করাটাও জরুরি।’’ ঠাকুরবাড়ির মন্দিরে পুজো করেন হরিবর সরকার। তাঁরও মুখে হাসি। বললেন, ‘‘১৯৭১ সালে ও দেশে নির্যাতিত হয়ে এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় আমরা ছিন্নমূল জাতি এ বার স্থায়ীত্ব পেলাম। এখন নিজেকে সত্যি সত্যি এ দেশের বাসিন্দা বলে মনে হচ্ছে।’’

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরবাড়ি থেকে মতুয়ারা একটি পদযাত্রা বেরোয়। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের ব্যানারে পদযাত্রার আয়োজন হয়েছিল। ফ্লেক্সে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বনগাঁর বিজেপির সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের ছবি ছিল। সিএবি বিল পাস করানোর জন্য মতুয়ারা ওই তিন জনকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্লোগান ওঠে মিছিল থেকে।

মতুয়াদের পদযাত্রায় বিজেপির পতাকা নিয়ে কিছু মানুষ ঢুকে পড়েন। এক সঙ্গে উড়তে থাকে নিশান ও বিজেপির পতাকা। ঠাকুরনগর স্টেশনের কাছে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মুখপাত্র অরবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সংসদের উভয় কক্ষে সিএবি বিল পাস হওয়াটা মতুয়াদের জন্য অত্যন্ত সুখবর। এই দাবিতে মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর, বড়মা বীণাপানি ঠাকুর লড়াই করেছেন। কেন্দ্র সরকার ওই বিল পাশ করে জানিয়েছে, উদ্বাস্তুরা নিঃশর্তে দেশের নাগরিকত্ব পাবেন। ফলে মতুয়া সমাজ আজ উৎফুল্ল।’’ এনআরসি নিয়ে বিজেপি এত দিন কোণঠাসা ছিল। সিএবি বিল নিয়ে তারা নতুন উদ্যোমে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ দিন সকালে ঠাকুরনগর স্টেশনে বিজেপি সভা করে। অমিত শাহের ছবিতে মালা পরানো হয়। মতুয়ারাও সেখানে ভিড় করেন। বাজি ফাটানো হয়। বনগাঁ শহরে, গোপালনগরে, চাঁদপাড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় সিএবি নিয়ে বিজেপি মিছিল করে। মিছিল হয়েছে হাবড়াতেও। তবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলে কেন্দ্র ও বিজেপি মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। বিলে কোথাও নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা নেই। একটি কমিটি তৈরি হবে তারা বিবেচনা করে দেখবে, কারা স্থায়ী নাগরিকত্ব পাবেন। মানুষকে বোঝাতে আমরাও পথে নামছি।’’ তবে অনেকেরই প্রশ্ন, ও পার বাংলা থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তু বা মতুয়াদের বেশিরভাগের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড রয়েছে। তাঁরা নিয়মিত ভোট দেন। ইতিমধ্যেই এ দেশের নাগরিক। তা হলে নতুন করে নাগরিকত্বের প্রশ্ন আসছে কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAB NRC Matua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE