Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Indian Railways

আয় বন্ধ, রেল-হকার, দোকানদারেরা সমস্যায়

সমস্যায় পড়েছেন এই শাখার প্রায় হাজার দশেক হকারও। হাসনাবাদ শাখার ট্রেনে ১৭ বছর ধরে ফল বিক্রি করছেন বরুণহাটের বাসিন্দা শিবপদ কর্মকার।

বন্ধ দোকান। কোনও রকমের চা বিক্রি করছেন মহিলা। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ দোকান। কোনও রকমের চা বিক্রি করছেন মহিলা। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২৭
Share: Save:

ট্রেন চললেও উঠতে দেওয়া হচ্ছে না হকারদের। প্ল্যাটফর্মে যাঁরা নানা পসরা সাজিয়ে বসতেন, তাঁদেরও দোকান খুলতে দেওয়া হচ্ছে না। এর জেরে সঙ্কটে পড়েছেন রেলের উপর নির্ভরশীল হকার ও দোকানদাররা।

হাসনাবাদ স্টেশনে প্রায় ৪০ বছর ধরে চা,পানের দোকান চালান বছর পঞ্চান্নর কানাই সানা। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী। ছেলে এ বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। মেয়ে কলেজ ছাত্রী। দোকান চালিয়ে যা আয় হত, তা দিয়েই সংসার ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেন কানাই। প্রায় আট মাস পর ট্রেন চালু হওয়ায় ভেবেছিলেন এ বার অন্তত সংসারের হাল ফিরবে। কিন্তু তাঁর চায়ের দোকান খুলতে দেয়নি পুলিশ। কানাই বলেন, “রোজ ডাল ভাতটাও জুটছে না। ধার দেনা করতে হচ্ছে। এই বয়সে কোনও কাজও পাচ্ছি না। ছেলে বাধ্য হয়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে যাচ্ছে। মেয়ে পাশের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতে যাবে বলে ঠিক করেছিল। মেয়েকে এই কাজ করতে দেখতে পারব না, তাই যেতে দিইনি।” দোকান বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন এই স্টেশনে থাকা প্রায় ৩০টি দোকান মালিক।

সমস্যায় পড়েছেন এই শাখার প্রায় হাজার দশেক হকারও। হাসনাবাদ শাখার ট্রেনে ১৭ বছর ধরে ফল বিক্রি করছেন বরুণহাটের বাসিন্দা শিবপদ কর্মকার। লকডাউনে দীর্ঘদিন কাজ ছিল না। এখন ট্রেন চললেও হকারদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই গ্রামে দিনমজুরের কাজে লেগেছেন তিনি। শিবপদ বলেন, “আমি দিনমজুরের কাজ করতাম না। তাই কেউ কাজে নিতে চায় না। একদিন কাজ পেলে চারদিন বসে থাকতে হয়। বাড়িতে তিনটি বাচ্চা আছে। সংসার চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।” দীপক ঘরামি নামে আর এক হকারের কথায়, “এখনও কোনও কাজ পাইনি। তাই ধার দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। জানি না এ ভাবে কতদিন চালাতে পারব। রেল যদি আমাদের থেকে মাসিক কিছু টাকা নিয়েও ট্রেনে উঠতে দেয়, তা হলেও রাজি। তাতে সংসারটা অন্তত চালাতে পারতাম।” মধুসূদন সরকার নামে হাসনাবাদ শাখার এক হকার জানালেন, তিনি ট্রেনে বেশ কয়েক বছর ধরে মোমো, বার্গার ইত্যাদি বিক্রি করেন। এমনকী অর্ডার দিলে বিরিয়ানি বা ফ্রায়েড রাইসও বিক্রি করতেন। এখন ট্রেনে উঠতে দিচ্ছে না বলে বাড়ির পাশেই একটি দোকান করেছেন। তবে দিনে ১০০ টাকারও বিক্রি হচ্ছে না। অথচ আগে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হত। হাসনাবাদের বাসিন্দা জয়দেব ঘোষ ৩৫ বছর ধরে ট্রেনে ফল বিক্রি করেন। এখন দিনে ১৫০ টাকার বিনিময়ে একটা ফলের দোকানে কাজ পেয়েছেন। জয়দেব বলেন, “আগে দিনে প্রায় ৪০০ টাকা আয় হত। এখন ১৫০ টাকা হচ্ছে। এই টাকায় সংসার চালাতে পারছি না। কিন্তু কোনও উপায় নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways hawkers shopkeepers income
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE