E-Paper

‘গুলি লেগে বাঁ হাতটা অকেজো, ওরা কি একটু শান্তিতে বাঁচতে দেবে না!’

ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি এ বাংলায় পুরনো ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটও ব্যতিক্রম নয়। সে বার যে সব পরিবারে হানা দিয়েছিল সন্ত্রাস, এ বার ভোট নিয়ে কী বলছেন তাঁরা?

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৮
A day in a village

আসছে পঞ্চায়েত নির্বাচন, চিন্তায় তালদা গ্রাম। — ফাইল চিত্র।

সেটা ছিল ২০০৮ সাল। ১৪ মে পঞ্চায়েত ভোটের দিন। আরএসপি ও সিপিএমের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় বাসন্তীর আমঝাড়া পঞ্চায়েতের উত্তর তালদা গ্রাম।

নিজের মেয়ে কনক হালদারকে সে দিন চোখের সামনে গুলি খেয়ে মরতে দেখেছেন পদ্মবালা হালদার। পরিবারের আরও দুই সদস্য, রামকৃষ্ণ হালদার ও মধুসূদন হালদারও মারা যান গুলিতে। নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন পদ্ম। খোয়া গিয়েছে বাঁ হাত।

সে দিনের ঘটনা ভোলা সম্ভব নয় তাঁর কাছে। পঞ্চায়েত ভোট এলেই পুরনো আতঙ্ক আরও তীব্র হয়। পদ্ম বলেন, “হিংসার রাজনীতি চাই না। শুধু শান্তিতে থাকতে চাই।” পনেরো বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের দিন রাজনৈতিক সংঘর্ষের ওই ঘটনায় তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আরও সাত জন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। পদ্ম একটা হাত খুইয়েছেন, অন্যান্যরাও বরাত জোরে প্রাণে বেঁচেছেন।

সে দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ভরতচন্দ্র হালদার। তিনি বলেন, “এতগুলো খুন-জখম যারা করল, তাদের তেজ এখনও দেখার মতো। এখনও আমাদের পরিবারের উপরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। খুনিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা চলছে। ঘটনায় যাঁরা সাক্ষী, তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। আমাকে খুনের চেষ্টা চালাচ্ছে।”

রাজ্যে পালাবদলের পরে বাসন্তীতে বামেদের ইদানীং তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। বিধানসভা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত— সর্বত্রই তৃণমূলের দাপট। অনেক জার্সির অদল-বদল ঘটেছে। লড়াই, রেষারেষি থেকেই গিয়েছে।

উত্তর তালদা গ্রামে এখনও যেন সেই ছাই চাপা আগুন। ভরত বলেন, “আমরা আরএসপি করতাম। পরে জয়ন্ত নস্করের (প্রয়াত বিধায়ক) হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিই আমি ও আমার পরিবার।’’ অনেক আরএসপি কর্মীই আসেন তৃণমূলের ছাতার তলায়। গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সিপিএম-আরএসপি-র সেই লড়াই এখন ভোল পাল্টে তৃণমূলের মূল সংগঠনের সঙ্গে যুবদের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে নতুন করে ঠিক এই গ্রামে অশান্তি না হলেও আমঝাড়া পঞ্চায়েতের আশপাশের গ্রামে ইদানীং একাধিক বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি আমঝাড়া পঞ্চায়েতের ভারতীর মোড় এলাকার খাঁপাড়ায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হয়েছেন চার জন। একাধিক জায়গায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ হালদার, রঞ্জিত সর্দারেরা বলেন, “রাজনীতির লড়াই আমরা বুঝি না। কিন্তু প্রতি বার পঞ্চায়েত ভোট এলেই এখানে অশান্তি শুরু হয়ে যায়।’’

তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জয়দেব হালদার বলেন, “আমরাও চাই, শান্তিতে ভোট হোক।’’ যুব তৃণমূলের সুন্দরবন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বাপি হালদারের কথায়, ‘‘দলের মধ্যে কোনও বিবাদ নেই। স্থানীয় কিছু সমস্যা নিয়ে মাঝে মধ্যে সামান্য বিবাদ তৈরি হয়। তবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সমস্ত মিটে যাবে।”

বাসন্তীর বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, ‘‘ভোটের আগে যারা এলাকায় বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করছে, আমি তার তীব্র বিরোধিতা করছি। পুলিশ-প্রশাসনকে বলব, যারা এদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।”

পদ্ম বলেন, ‘‘রাজনীতির হানাহানি সহ্য হয় না। ওরা আমাদের একটু শান্তিতে বাঁচতে দিক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

basanti Panchayat Election

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy