Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
DA Case

কেন বন্ধ ছিল স্কুল, জবাবদিহি চেয়ে বিক্ষোভ বহু এলাকায়

রায়দিঘির টাঙ্গিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এ দিন বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। ধর্মঘটের দিন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও এক সহকারী শিক্ষক স্কুলে আসেননি।

ক্ষোভ: অশোকনগর স্কুলের সামনে জমায়েত। —ছবি: সুজিত দুয়ারি

ক্ষোভ: অশোকনগর স্কুলের সামনে জমায়েত। —ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৭
Share: Save:

ধর্মঘটের জেরে শুক্রবার স্কুল বন্ধ ছিল। পঠন পাঠন হয়নি। মিড ডে মিল রান্না হয়নি। এরই প্রতিবাদে শনিবার সকালে স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানালেন এলাকার বাসিন্দারা।

অশোকনগরের রাজীবপুর এভি হাই স্কুলে শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন কিছু অভিভাবক। তাঁদের এক জনের কথায়, “আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। শুক্রবার স্কুলে এসেছিল। গেটে তালা থাকায় বাড়ি ফিরে আসে। আমরা এ দিন স্কুলে তালা দিয়েছি। প্রধান শিক্ষকের কাছে কৈফিয়ত চাই, কেন শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকল।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুল গেটের বাইরে এ দিন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদেরও দেখা গিয়েছে। যদিও দলীয় পতাকা ছিল না। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা স্কুলে এসেছিলেন বলে জানান অশোকনগরের যুব তৃণমূল নেতা প্রদীপ সিংহ।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরেনকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ দিন স্কুলে এসে দেখলাম গেটে তালা দেওয়া। বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের অবশ্য আমার অভিভাবক বলে মনে হয়নি। বাইরের লোকজন।” শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ধর্মঘট ছিল। পাশাপাশি, স্কুলে অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী হিসাবে নিয়োগ, স্বচ্ছতার সঙ্গে শূন্যপদ পূরণের দাবিও ছিল। আমার স্কুলে গত দশ বছর ধরে পদার্থবিদ্যার কোনও শিক্ষক নেই। এ সব কারণে শিক্ষকেরা ধর্মঘটে শামিল হয়েছিলেন। আমিও নৈতিক সমর্থন করেছি। স্কুলে পড়ুয়ারা আসেনি বলে মিড ডে মিল রান্না হয়নি।”

ওই স্কুলের সরকারি কর্মী তথা হাবড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “শুক্রবার স্কুলে এসেছিলাম। তালা বন্ধ দেখে ফিরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। সমস্যা থাকলে মেটাতে হবে। স্কুল বন্ধ রাখা ঠিক নয়।” এ দিন সাড়ে ১১টা নাগাদ পঠন-পাঠন শুরু হয়ে স্কুলে। হেমনগর থানার দক্ষিণ যোগেশগঞ্জ পশ্চিম হেমনগর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এ দিন শিক্ষকদের স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দা ও কিছু অভিভাবক। ১১টা থেকে প্রায় আধ ঘণ্টা স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তিন শিক্ষক। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে স্কুল চালু হয়।

অভিভাবক পঙ্কজ মিস্ত্রি বলেন, ‘‘শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকবে, সে কথা আগে থেকে জানানো হয়নি। বাচ্চারা দীর্ঘ সময় করে ফিরে গিয়েছে। মিড ডে মিলও বন্ধ ছিল। এটা কেন হল, শিক্ষকদের কাছে জানতে চাই। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিন বাড়তি সময় ক্লাস করে পুষিয়ে দেবেন।”

টাকির উত্তরপল্লি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এ দিন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা স্কুলে এসে ঢুকতে না পেরে পুলিশের দ্বারস্থ হন। পরে তালা ভেঙে স্কুল চালু করা হয়।

রায়দিঘির টাঙ্গিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়েও এ দিন বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। ধর্মঘটের দিন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ও এক সহকারী শিক্ষক স্কুলে আসেননি। এ দিন শিক্ষকেরা স্কুলে গিয়ে দেখেন, তাঁদের বসার ঘর-সহ শ্রেণিকক্ষে তালা লাগানো। পরে অন্য শিক্ষকদের ঢুকতে দেওয়া হলেও ধর্মঘটে শামিল হওয়া দুই শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কাবেরী দাস সরকার বলেন, “আমি আগেই জানিয়েছিলাম, ধর্মঘট সমর্থন করব। ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদেরও সে কথা জানিয়েছিলাম ওই দিন স্কুলে না আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অভিভাবকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধর্মঘট বানচাল করার জন্য ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠান।’’ যদিও স্কুল ওই দিন খোলেনি। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মঘটের দিন আমরা দু’জন স্কুলে না যাওয়ায় বাকি শিক্ষকদের ক্লাস নিতে দেওয়া হয়নি। আজ তৃণমূল নেতৃত্বে একাংশ ও কিছু বাসিন্দা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। বিষয়টি স্কুল পরিদর্শকে জানাব।” মথুরাপুর ২ ব্লকের বিডিও তাপসকুমার দাস বলেন, “ওই স্কুলের বিস্তারিত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” রায়দিঘির বিধায়ক অলোক জলদাতা বলেন, ‘‘ধর্মঘট কেউ করতেই পারেন। তবে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে রাখাটা ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DA Case Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE