Advertisement
০৩ মে ২০২৪
gosaba

ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা, বেহাল বাঁধ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

সুন্দরবনের মধ্যে গোসাবা ব্লক ন’টি দ্বীপ নিয়ে তৈরি। অর্থাৎ, সব দিকেই জল। অন্যান্য বছর বর্ষার আগে এই সময়ে বাঁধের কাজ হতে দেখেছেন গ্রামবাসী।

পাখিরালয়ে বেহাল নদীবাঁধ। নিজস্ব চিত্র

পাখিরালয়ে বেহাল নদীবাঁধ। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ১০:০১
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা ঘনাচ্ছে। শেষমেশ তা কী চেহারা নেবে, এ তল্লাটে আছড়ে পড়বে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে ঘুম উবেছে গোসাবার বাসিন্দাদের। এখনও বেহাল নদীবাঁধ মেরামতের তেমন উদ্যোগ নেই বলে তাঁদের অভিযোগ।

সুন্দরবনের মধ্যে গোসাবা ব্লক ন’টি দ্বীপ নিয়ে তৈরি। অর্থাৎ, সব দিকেই জল। অন্যান্য বছর বর্ষার আগে এই সময়ে বাঁধের কাজ হতে দেখেছেন গ্রামবাসী। কিন্তু এ বার এখনও সেই তোড়জোড় চোখে পড়েনি বলে তাঁদের দাবি। তার উপরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।

শুধু গোসাবাই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস শুনে গোটা সুন্দরবনের বাসিন্দারাই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। গত কয়েক বছর আমপান, ইয়াসের মতো ঝড়ে বারবার নদীবাঁধ ভেঙেছে। অভিযোগ, তারপরেও সে ভাবে বাঁধ মেরামতিতে নজর দেয়নি প্রশাসন। এর মধ্যেই অমাবস্যা বা পূর্ণিমার কটালে একাধিকবার বাঁধ ভেঙেছে। ঘূর্ণিঝড় প্রবল হলে ফের ঘরদোর ভেসে যাবে, আশঙ্কা গ্রামবাসীদের।

দুর্যোগ থেকে বাঁচতে এলাকার মানুষ বারবারই কংক্রিটের নদীবাঁধের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ হল কই! ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনই গোটা সুন্দরবন জুড়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। প্রাথমিক ভাবে যে ৭৭৮ কিমি নদীবাঁধ সম্পূর্ণ ধুয়ে গিয়েছিল, সেই এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। রাজ্য সরকারের আবেদনে সারা দিয়ে কেন্দ্র প্রথম দফায় ৫০৩২ কোটি টাকা মঞ্জুর করে বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে। বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু হয়।

কিন্তু ২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পরে কিছুটা কাজ হওয়ার পরেই সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। শেষ পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রে ফেরত চলে যায় বলে প্রশাসনের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ হয়েছে সুন্দরবন জুড়ে।

প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলায় তৈরি আছে তারা। সেচ দফতরও জানিয়েছে, তারা কাজে নেমেছে। ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রতীক সিংহ দাবি করেছেন, “ইতিমধ্যেই দুর্বল নদীবাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে। ত্রিপল ও শুকনো খাবার মজুত করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খুলে নজরদারিও চালানো হচ্ছে।’’

প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গোসাবার ৩৮৪ কিলোমিটার নদীবাঁধের মধ্যে মাত্র ১৮ কিলোমিটার কংক্রিটের হয়েছে। কিন্তু বাকি এলাকার দুর্বল নদীবাঁধের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের। তাঁদের অভিযোগ, স্থায়ী বাঁধ তৈরিতে যেমন সরকার উদ্যোগী হয়নি, তেমনই মাটির বাঁধও ঠিকমতো সংস্কার করা হয়নি।

গ্রামবাসীদের দাবি, কালিদাসপুর, বাগনাপাড়া, রাঙাবেলিয়া, পুঁইজালি, আমতলি, দয়াপুর, পাখিরালয় এলাকায় নদীবাঁধর অবস্থা ভাল নয়। লক্ষ্মী মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসীর খেদ, ‘‘দুর্যোগে বাঁধ ভাঙলে গ্রামের পর গ্রাম জলমগ্ন হয়। নোনা জলে বাড়িঘর, পুকুর, চাষের জমি সব নষ্ট হয়ে যায়। গরু-ছাগল নিয়ে ভেসে বেড়াতে হয় আমাদের। জানি না কবে স্থায়ী বাঁধ তৈরি হবে!”

কুমিরমারি পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধের বেহাল দশা। আগে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এই কাজ হতো। কিন্তু এখন সেই প্রকল্প বন্ধ। পঞ্চায়েতের সেই তহবিল নেই যে এত বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ মেরামত করবে। সেচ দফতর ও ব্লকপ্রশাসনকে জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gosaba Cyclone Sunderbans
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE