Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ে হলেই মৃত্যু, পর পর চার বারের পর গ্রেফতার বাবা-মা

ছোট জনের মৃত্যুর পরে পড়শিদের সন্দেহ হয়, পর পর মেয়ে জন্মানোয় মা-বাবাই সন্তানকে খুন করছেন না তো?

তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মাল্য প্রামাণিক  
বাগদা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

পর পর চার কন্যাসন্তান। তিন জনেরই মৃত্যু হয়েছে জন্মের কয়েক দিন পরে। ছোট জনের মৃত্যুর পরে পড়শিদের সন্দেহ হয়, পর পর মেয়ে জন্মানোয় মা-বাবাই সন্তানকে খুন করছেন না তো?

বাবা-মায়ের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় সেই সন্দেহ গাঢ় হয়। পরে এক পড়শি অভিযোগ দায়ের করেন থানায়। পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই দম্পতিকে। বারো দিনের শিশুটির দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বেটি বঁচাও, বেটি পড়াও’ বা রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের বার্তা যে সমাজের সর্বস্তরে এখনও পৌঁছয়নি, তারই প্রমাণ মিলল বাগদার সিন্দ্রাণীর বাবুপাড়ায়।

মৃত সদ্যোজাত। —নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মণিকুমার বিশ্বাস ও রানি বিশ্বাসের প্রথম সন্তান জন্মায় বছর পাঁচেক আগে। পেশায় কৃষিজীবী মণির এটা তৃতীয় বিয়ে। স্ত্রী বাংলাদেশি।

আরও পড়ুন: ভিক্টোরিয়া স্মরণেও হিন্দু সেনার উৎসাহ

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই দম্পতির প্রথম কন্যাসন্তান জন্মায় বছর পাঁচেক আগে। কয়েক দিন বেঁচে ছিল সে। হঠাৎই মারা যায়। চার বছর আগে দ্বিতীয় মেয়ের জন্ম হয়। জন্মে পরে দেড়মাস পর্যন্ত সে ছিল পড়শি গীতা মণ্ডলের হেফাজতে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘ মেয়ে জন্মানোয় মণি খুব অসন্তুষ্ট ছিল। চিৎকার চেঁচামিচি করত। বাচ্চাটাকে অযত্নে রাখত।’’ এই মেয়েটিই এখনও বেঁচে। গীতার দাবি, ‘আমি চোখে চোখে না রাখলে হয় তো একেও মেরে ফেলত।’’

বছরখানেক আগে বিশ্বাস দম্পতির তৃতীয় কন্যাসন্তান হয়। মাত্র তেইশ দিনের মাথায় সেও হঠাৎ মারা যায়। জন্মের বারো দিনের মাথায় চতুর্থ মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই হইচই শুরু হয় এলাকায়। রানি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে পঞ্চায়েতের আশাকর্মীরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছিলেন। তাঁদেরই এক জন সাগরিকা অধিকারী বলেন, ‘‘ওরা মেয়ে সন্তান চাইত না। মেয়ে হওয়ার আশঙ্কায় গর্ভপাত করাতে চেয়েছিল। আমরা বারণ করি। অনেক বোঝাই। সন্দেহ হওয়ায় নিয়মিত খোঁজ খবরও রাখছিলাম। কিন্তু যা সন্দেহ ছিল, এখন দেখছি সেটাই সত্যি হল!’’

কী ভাবে জানাজানি হল ঘটনা?

পুলিশ জানতে পেরেছে, সোমবার সকালে কান্নাকাটির শব্দ পেয়ে পড়শিরা মণির বাড়িতে আসেন। দেখেন, সদ্যোজাত সন্তানটি মারা গিয়েছে। কী ভাবে মেয়ে মারা গেল, জানতে চাইলে মণি-রানিরা সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পাড়া-পড়শিরা। আশাকর্মীরা জানাচ্ছেন, সুস্থ সন্তানেরই জন্ম দিয়েছিলেন রানি। রবিবারও তাকে সিন্দ্রাণী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শিশুটি সুস্থ আছে বলে জানান চিকিৎসক। খবর যায় থানায়। পুলিশ এসে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়। প্রথমে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিশ্বাস দম্পতিকে। চুমকি হালদার নামে এক পড়শির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রাতের দিকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দু’জনকেই। পুলিশ জানিয়েছে, আগের মেয়েরা কী ভাবে মারা গেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: আঠারো মাস আরব সাগরে ঘাটালের যাজ্ঞিক, উদ্ধারে বিদেশ মন্ত্রকে দরবার স্ত্রীর

গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেয়ে হয়েছে বলে ওরা বাচ্চাকে অযত্নে ঠান্ডা মেঝেতে শুইয়ে রাখত। ঠিক মতো খেতেও দিত না। ওর বাচ্চাকে প্রতিবেশীরা মিলে দুধ কিনেও খাইয়েছেন। মণির দ্বিতীয় মেয়েটিকে নিজেদের কাছেই রেখেছেন পড়শিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Girl child খুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE