Advertisement
০৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Basirhat

বসিরহাট উত্তরের বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার! শেষাংশে উল্লেখ ‘তৃণমূলের সম্মান রক্ষা কমিটি’, অন্তর্কলহ?

বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বাড়ির কাছেই পড়ল ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার। নীচে লেখা, ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়।

(বাঁ দিকে) বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার এবং বিধায়ক রফিকুল ইসলাম (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার এবং বিধায়ক রফিকুল ইসলাম (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪৯
Share: Save:

বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার পড়ল তাঁরই বিধানসভা এলাকায়। বিধানসভা ভোটের পর থেকে এলাকায় বিধায়কের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে পোস্টারে। পোস্টারের নীচে লেখা রয়েছে, ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’। এই নামে তৃণমূলের কোনও সাংগঠনিক শাখা নেই। পোস্টারে একটি ফোন নম্বরও দেওয়া আছে। যার কোনও অস্তিত্ব নেই। তা হলে কে বা কারা পোস্টার সাঁটালেন, তৃণমূলের কেউ? না কি বিরোধী শিবির? তা নিয়ে চাপানউতর তৈরি হয়েছে বসিরহাটের রাজনীতির অন্দরমহলে।

বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মুরারিশায় বাড়ি বিধায়কের। শনিবার সকালে সেই মুরারিশাতেই বিভিন্ন জায়গায় বিধায়কের ছবি-সহ এই ধরনের পোস্টার পড়েছে। ‘বিতর্কিত’ পোস্টার পড়েছে মুরারিশা চৌমাথায়। তা ছাড়া বিধায়কের অফিস এবং তাঁর বাড়ির আশপাশেও পোস্টার দেখা গিয়েছে। পোস্টারে লেখা, “এই ব্যক্তির নাম রফিকুল ইসলাম। পেশায় বসিরহাট উত্তরের বিধায়ক। আগে বিধানসভায় যেতেন লাল পোশাকে, পরবর্তীতে সবুজ পোশাকে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে এঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” এমনকি বিধায়কের পরিবারের কাছ থেকেও তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে লেখা হয়েছে পোস্টারে।

প্রসঙ্গত, রফিকুল অতীতে সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬ সালের বসিরহাট উত্তর থেকে সিপিএমের টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন। পরে দল পরিবর্তন করেন। ২০২১ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হন। বিধায়কের দলবদলের কথার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে ‘বিতর্কিত’ পোস্টারে। স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় দলের বেশ কিছু প্রচার কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল বিধায়ককে। তবে ২০২১ সালে বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই এলাকার কর্মসূচিতে তাঁর দেখা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই নিয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিধায়কের সঙ্গে। রফিকুলের বক্তব্য, ‘তৃণমূল কংগ্রেস সম্মান রক্ষা কমিটি’ বলে কোন কমিটি রয়েছে বলে তাঁর জানা নেই। ওই পোস্টারদাতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই ভুইফোঁড়েরা কোন দল থেকে এসেছেন, তা-ও জানি না। এঁরা কেউই তৃণমূলের নন। এলাকার সকলেই জানেন, আমি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিধায়ক। তাঁরা আমাকে দু’বার জিতিয়েছেন। মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তা এলাকার মানুষই জানেন।” এই পোস্টার বিতর্ককে একাংশের ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই মনে করছেন বিধায়ক। কোনও দলের নাম না করে রফিকুল বলেন, “কিছু স্বার্থান্বেষী লুটপাট করে খান। তাঁরা নিন্দা করতেই পারেন। তাঁদের নিন্দায় সাধারণ মানুষ টলবেন না।” বিধায়কের দাবি, তৃণমূল দলগত ভাবে তাঁর উপর ভরসা রেখেছে।

মুরারিশা এলাকাটি হাসনাবাদ ব্লকের মধ্যে পড়ে। তৃণমূলের হাসনাবাদ ব্লক সভাপতি এস্কেন্দার গাজিকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল এই পোস্টার নিয়ে। তিনি আবার পোস্টারের দায় সিপিএমের দিকেই ঠেলে দিয়েছেন। এস্কেন্দার বলেন, “এটি বিরোধীদের চক্রান্ত। রফিকুল আগে সিপিএমের সঙ্গে ছিলেন। তাই সিপিএমের পক্ষ থেকে এই পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলেই আমরা মনে করছি।”

পোস্টারের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি দলের ব্লক সভাপতির। তবে বিধায়ককে যে এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না, সে কথাও জানিয়েছেন এক্সেন্দার। এই নিয়ে দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলেও দাবি ব্লক সভাপতির। গত ৩০ অক্টোবর বিধায়কের নিজের বুথ মুরারিশায় তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী হয়েছিল। সেখানেও বিধায়কের দেখা মেলেনি বলে জানান ব্লক সভাপতি। যদিও রফিকুলকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তিন দিন আগেও ব্লক সভাপতির সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। এর নেপথ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ইঙ্গিত রয়েছে কি না, তা নিয়েও কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিধায়ক। রফিকুলের কথায়, “কেউ নিজের ব্যক্তিগত মতামত জানাতেই পারেন। বসিরহাট ২ ব্লক-সহ চারটি জায়গায় দলের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম।”

যদিও হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি এবং সিপিএম নেতা সুবিদ আলি গাজি এটিকে ‘তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব’ হিসাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। এই পোস্টার বিতর্কের সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি তাঁর। সুবিদ বলেন, “সামনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। রফিকুল যাতে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রার্থী না হতে পারেন, তার জন্যই এই ক্ষোভ তৃণমূলের ভেতরে। সিপিএম এই ধরনের রাজনীতি করে না। সরাসরি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখে।”

এই পোস্টার বিতর্ক বিকেলে মুরারিশা চৌমাথায় বসিরহাট-মালঞ্চ সংযোগকারী রাস্তা অবরোধ করেন বিধায়কের অনুগামীরা। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তার উপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Basirhat North 24 Parganas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy