একজনের বেয়াই, অন্যজনের ভাই— আদালতে অভিযুক্ত দু’জনের হয়ে ‘প্রক্সি’ দিয়ে তারা রাতারাতি শোরগোল ফেলে দিয়েছে কাকদ্বীপে!
কলেজ জীবনে ক্লাস পালানোর জন্য বন্ধুদের প্রক্সি-র (একের হয়ে অন্যের হাজিরা) সাক্ষী ছাত্রজীবনে কে না থেকেছেন। কিন্তু তা বলে আদালতেও একই ঘটনা? বৃহস্পতিবার কাকদ্বীপ আদালত অবশ্য এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকল।
সরকারি আইনজীবী সত্যরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ কাকদ্বীপের এসিজেএম শিশিরকুমার মেউর। পূর্ণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।’’
ঘটনাক্রমের দিকে নজর রাখলে তাজ্জব হতে হয় বইকি।
পুলিশ জানায়, ঢোলাহাট থানার মেহেরপুরে জমিজমা নিয়ে বিবাদ চলছিল দুই পরিবারের মধ্যে। এ বছর মে মাসের গোড়ার দিকে মহাদেব হালদারের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ দায়ের হয় আট জনের বিরুদ্ধে। আলিপুর আদালতের থেকে ৭ সেপ্টেম্বর আগাম জামিন পান তিন জন। ওই দিনই কাকদ্বীপ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুখদেব পণ্ডিত এবং প্রেমানন্দ পণ্ডিত-সহ পাঁচ জন। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
১৩ সেপ্টেম্বর মহাদেববাবু আদালতকে জানান, সুখদেব এবং প্রেমানন্দ বলে যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা আসল অভিযুক্তই নয়! অভিযোগ শুনে বিচারকেরও চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
মহাদেববাবু বলেন, ‘‘আদালতে আমাদের এক আত্মীয় গিয়েছিলেন। তিনি ফোনে জানান, অভিযুক্ত বলে যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা আসল লোকই নয়। ভুল লোককে পাঠানো হয়েছে জেলহাজতে। খোঁজখবর করে মহাদেববাবু জানতে পারেন, অভিযুক্তেরা দিব্যি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’’
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, নিজেকে ‘প্রেমানন্দ’ পরিচয়ে যে আত্মসমর্পণ করেছে, সে আসলে অভিযুক্তের ভাই রূপানন্দ পণ্ডিত। আর ‘সুখদেব’ পরিচয়ে যে আত্মসমর্পণ করেছে, সে সুখদেবের বেয়াই দীনেশ সর্দার।
মহাদেববাবুর আইনজীবী কালীশঙ্কর প্রধান বলেন, ‘‘আদালতকে ঠকানোর চেষ্টা হয়েছে। এ রকম ঘটনা কাম্য নয়।’’
রূপানন্দ ও দীনেশের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের পরে প্রতারণা এবং ষড়যন্ত্রের ধারাও যোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী। ধৃত দু’জনেই আপাতত ডায়মন্ড হারবার জেলে। ২১ সেপ্টেম্বর তাদের ফের আদালতে তোলার কথা।
আইনজীবীদের অনেকের অনুমান, আত্মীয়দের বাঁচাতেই এই কাজ করেছে ওই দু’জন। তবে আদালতের চোখে ধুলো দেওয়ার ঘটনায় কার মদত রয়েছে, তা-ও তদন্ত করে দেখা উচিত পুলিশের, মনে করছেন মহাদেববাবুর আইনজীবী। ভুয়ো পরিচয় দিয়ে ওই দু’জনের আত্মসমর্পণের কথা মেনে নিয়েছে অভিযুক্তদের পরিবারও। তবে তাদের ধারণা ছিল, বাকিরা যেহেতু জামিন পেয়েছে, এই দু’জনও পেয়ে যাবে। পরিবারের আরও যুক্তি, কর্মসূত্রে ওই দিন কলকাতায় থাকায় আসল দুই ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy