Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Namkhana-Bakkhali train Service

নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেল লাইন চালু হবে কি, প্রশ্ন

নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে বকখালি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন হত। এলাকার কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী মানুষের বসবাস। তাদের উৎপাদিত ফসল ও মাছ সরাসরি শিয়ালদহে নিয়ে যেতে কম খরচে।

নামখানা স্টেশন।

নামখানা স্টেশন। —ছবি : সংগৃহীত

সমরেশ মণ্ডল
নামখানা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৬
Share: Save:

প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে রেলকে হস্তান্তর না করায় প্রায় দেড় দশক ধরে থমকে নামখানা-বকখালি রেল প্রকল্পর কাজ। এ নিয়ে শাসক-বিরোধী চাপানউতোরও আছে। একই কারণে প্রায় দেড় দশক ধরে থমকে নামখানার চন্দ্রনগর থেকে বকখালি পর্যন্ত রেল প্রকল্পও।

এক সময়ে রেল বাজেটে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সুন্দরবন এলাকাকে রেলের মানচিত্রে সংযুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। সেই মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে রায়দিঘি এবং নামখানায় রেললাইন সম্প্রসারণের শিলান্যাসও করেছিলেন তিনি। তারপরে কেটে গিয়েছে প্রায় তেরো বছর। কিন্তু কাজ আর তেমন এগোয়নি। সম্প্রতি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অবিলম্বে ওই প্রকল্প-সহ জমিজটে থমকে থাকা রাজ্যের প্রকল্পগুলির প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে রেলের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৯-১০ আর্থিক বর্ষে নামখানা থেকে চন্দ্রনগর পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রেল লাইনের জন্য রেল বরাদ্দ করেছিল ৭৮.৯ কোটি টাকা। চন্দ্রনগর থেকে বকখালি পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার লাইন তৈরির জন্য ২০১১-১২ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয়েছিল ৬১.৮৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে, কাকদ্বীপ থেকে বুধাখালি পর্যন্ত ১৭.১ কিলোমিটার নতুন রেল লাইনের জন্য ২০১১-১২ অর্থবর্ষে বরাদ্দ হয়েছিল ১৬৫.৩৫ কোটি টাকা।

২০০৯ সালে ভোটে জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের নানা প্রান্তে রেল যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনকে রেলের মানচিত্রে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি বলেছিলেন, সুন্দরবনের মানুষের স্বার্থে সাগর, নামখানা, বকখালি, রায়দিঘি পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হবে। সমগ্র সুন্দরবনবাসীকে রেল মানচিত্রে যুক্ত করা হবে। সেই মতো শিয়ালদহ-লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের শিলান্যাস করেছিলেন। একই ভাবে, শিয়ালদহ-নামখানা শাখায় নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণের শিলান্যাস হয়েছিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নামখানা স্টেশনের কাছে তাঁর উপস্থিতিতে শিলান্যাস হয়েছিল।

প্রথম পর্যায়ে রেললাইন পাতার কথা হয়েছিল, নামখানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রনগর পর্যন্ত। ওই রেলপথের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩০০ মিটার হাতানিয়া-দোহানিয়া নদী রয়েছে। তার উপরে সেতু হয়েছে পরে। ফলে বকখালি থেকে নামখানা স্টেশনে আসা কিছুটা হলেও সুবিধা হয়েছে। আগে ওই ব্রিজ না থাকায় মানুষকে নদী পেরোতে হত নৌকো, বার্জে। খরচও হত বেশি। সে সময়ে ওই নদীর উপরে রেলব্রিজ করারও তোড়জোড় হয়েছিল। জমিদাতাদের পরিবারের এক জনকে রেলে চাকরি দেওয়ার শর্তে কৃষকদের সম্মতি মিলেছিল। রেললাইনের কাজ দেখভালের জন্য নারায়ণপুরের কাছে অস্থায়ী রেলের অফিস তৈরি হয়েছিল। জমি জরিপ থেকে শুরু করে নদীর উপরে রেল সেতুর তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। রেল লাইনের জন্য শিলা পোঁতার কাজ শেষ হওয়ার পরে কোনও কাজ এগোয়নি।

নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেললাইন চালু হলে বকখালি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন হত। এলাকার কৃষিজীবী ও মৎস্যজীবী মানুষের বসবাস। তাদের উৎপাদিত ফসল ও মাছ সরাসরি শিয়ালদহে নিয়ে যেতে কম খরচে। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী প্রণব মাইতি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন জমিজটে আটকে থাকায় নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেলের কাজ শুরু করা যায়নি। আবার নতুন করে রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে রেলের কাজ শুরু হবে। যার ফলে এলাকার অর্থনীতি ও পর্যটন কেন্দ্রের মানোন্নয়ন ঘটবে। এমনকী, নতুন করে কিছু কর্মসংস্থানও হবে। আশা করছি, এ বার আর জমি অধিগ্রহণ করতে তেমন সমস্যা হবে না।’’

সিপিএমের নামখানা এরিয়া কমিটির সম্পাদক সজল ঘোড়ুই বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার রেল লাইনের কাজ শুরু করার আগে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তৎকালীন সময়ে জমি অধিগ্রহণ করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে তা সমাধান না করেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়।’’ তাঁর মতে, শুধু রেল লাইন করলে হবে না, বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য রেলের কোনও ছোট কারখানা তৈরি হলে আরও ভাল হয়।

স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি শ্রীমন্ত মালি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরে নামখানা থেকে বকখালি পর্যন্ত রেলের কাজ বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র সরকার। টাকা বরাদ্দ করেনি। আমরা সকলে জমি দিতে প্রস্তুত ছিলাম। আবার নতুন করে রেলের কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষের উপকার হবে। আমরা জমি দেওয়ার জন্য সব রকমের সহযোগিতা করব সরকারকে।’’

স্থানীয় বিজেপি নেতা অনুপ সামন্তের মতে, তৃণমূল পরিচালিত সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এই প্রকল্পের এমন হাল। তাঁর কথায়, ‘‘এই সরকারকে জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব দিলে প্রকল্প কখনও বাস্তবায়িত হবে না। কেন্দ্র নিজে এসে জমি অধিগ্রহণ করলে আমাদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। এরা উন্নয়ন চায় না, শুধু কাটমানি খেতে চায়।’’

সাধারণ মানুষ শুধু চান, রাজনৈতিক আকচা-আকচি বন্ধ করে দ্রুত রূপায়িত হোক স্বপ্নের রেল প্রকল্প।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways namkhana bakkhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE