বনগাঁ ১ নম্বর গেটে যশোর রোড, এখানেও হওয়ার কথা প্রস্তাবিত উড়ালপুল। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ আইনি জটিলতা পেরিয়ে শুরু হতে চলেছে যশোর রোডে পাঁচটি আরওবি বা রেলসেতু তৈরির কাজ। মঙ্গলবার এমনই দাবি করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, “যশোর রোডে পাঁচটি আরওবি তৈরির কাজ দুর্গাপুজোর পরেই শুরু হবে। রেলসেতুর মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। এখন কাজ শুরু করতে কোনও বাধা নেই। এর জন্য জমিও চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে।”
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোডের উপরে পাঁচটি রেলসেতু তৈরি হওয়ার কথা। বারাসতের কাজিপাড়া, অশোকনগর রেলগেট, হাবড়া ১ ও ২ নম্বর রেলগেট এবং বনগাঁ শহরে ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় প্রস্তাবিত রেলসেতু তৈরি হবে। নারায়ণ জানান, পুরসভা, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ, বন দফতর, বাজার কমিটির প্রতিনিধি ও প্রস্তাবিত রেলসেতু এলাকা যাঁরা দখল করেছেন, তাঁদের সঙ্গে পুজোর আগেই ওই সব এলাকায় গিয়ে আলাদা বৈঠক করা হবে।
শারদোৎসবের পরে প্রস্তাবিত এলাকা ফাঁকা করার কাজ শুরু হবে। ওই এলাকায় কোনও ব্যক্তি মালিকানার জমি থাকলে, রাজ্য সরকার তাঁকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেই জায়গা কিনে নেবে। তবে সে রকম কোনও জমি নেই বলেই জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানা গিয়েছে।
বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “যশোর রোডে রেলসেতু আমরা করব। কিন্তু কোনও মানুষকে জোর করে উচ্ছেদ করা হবে না। তাঁদের কর্মতীর্থে বা হাটের জায়গায় ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। পুরসভার কোনও জায়গায় বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। যদি ৪০০ গাছ কাটা হয়, ১৬০০ গাছ লাগানো হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচটি রেলসেতু তৈরির জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার কথা। ২০১৭ সালে বনগাঁয় গাছ কাটা শুরু হয়। রেলসেতু তৈরির জন্য ওই সময়ে মাটি পরীক্ষা ও সমীক্ষার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে বৃক্ষপ্রেমীরা পথে নেমে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা জানান, সড়ক সম্পসারণ বা রেলসেতুর বিরুদ্ধে তাঁরা নন, কিন্তু গাছ বাঁচিয়ে সে সব করতে হবে।
যশোর রোডের ধারে ৩৫০টিরও বেশি প্রাচীন গাছ কেটে ফেলার উপরে হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরে সেই মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর করা ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাছ কাটার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই স্থগিতাদেশ সম্প্রতি খারিজ করেছে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, যশোর রোডে ৩৫৬টি গাছ কেটে রেলের উড়ালপুল করার পক্ষে ২০১৮ সালে কলকাতা হাই কোর্টের আদেশই বহাল রাখা হল।
রাজ্য সরকারের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে জানান, কাজ থমকে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬০০ বলে দাবি করেছেন তিনি। গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণের অনুমতি সাপেক্ষে একটি গাছ কাটা হলে পাঁচটি করে গাছ লাগাতেও রাজ্য সরকার প্রস্তুত বলে আদালতকে জানান তিনি।
এ দিকে, যশোর রোডের দু’পাশের গাছগুলি অক্ষত রাখা, পরিচর্যা করার দাবি জানিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল এপিডিআর-এর বারাসত ও বনগাঁ শাখার পক্ষ থেকে। ওই স্মারকলিপিতে বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর ও বারাসতের কয়েক হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছিলেন। স্বাক্ষর করেছিলেন বিশিষ্টজনেরাও। যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর দাবিতে বনগাঁ ও বারাসতে সম্প্রতি জনসভাও করা হয় এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপির কপি উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসক ও বিভাগীয় বনাধিকারিককে প্রদান করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, যশোর রোডের যে গাছের সারি কেটে ফেলার পরিকল্পনা হচ্ছে, সেগুলি শতাব্দীপ্রাচীন। বারাসত থেকে বনগাঁ সীমান্ত পর্যন্ত, যশোর রোডের দু’ধারে আছে গাছগুলি৷ আমপান, ইয়াসের তাণ্ডবের সামনে তারাই জনজীবনকে অনেকাংশে রক্ষা করেছিল৷ স্মারকলিপিতে যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণের বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের মতে, যশোর রোডের প্রায় সমান্তরাল রেলপথটিই হতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার স্থায়ী ও সুষ্ঠু সমাধান। রেল চলাচলের দু’টি লাইন ক্রমে তিন লাইনে রূপান্তরিত করে, ট্রেনের সংখ্যা ও কামরা বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়। দীর্ঘ রাস্তার রেল ক্রসিংগুলিতে ফুটব্রিজ হলে যানজটের সমাধানও হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাচীন গাছগুলি বাঁচানো যাবে বলে তাঁদের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy