E-Paper

বাঁধ বেহাল, উড়েছে ঘুম

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৮:০৪
এ ভাবেই ধস নেমেছে গোসাবার দয়াপুরের নদী বাঁধে।

এ ভাবেই ধস নেমেছে গোসাবার দয়াপুরের নদী বাঁধে। নিজস্ব চিত্র।

ফের মে মাস। আবহাওয়া দফতরের কোনও পূর্বাভাস না থাকলেও ফের দুর্যোগের চিন্তায় ঘুম উড়েছে সুন্দরবনের বহু গ্রামের বাসিন্দাদের। কারণ আয়লা, আমপান, ইয়াসের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলি এই মে মাসেই সুন্দরবনের বুকে আঘাত হেনেছিল। তার উপর সামনেই বর্ষাকাল। তাই বেহাল বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে সুন্দরবনের নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজনের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বহু জায়গায় মাটির বাঁধে বড়সড় ধস দেখা দিয়েছে। গোসাবা ব্লকের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। এই ব্লকে মোট ৩০৭ কিলোমিটার নদী বাঁধের মধ্যে কংক্রিটের তৈরি বাঁধের পরিমাণ মাত্র ২৬ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় আয়লার আঘাতের পর দীর্ঘ ১৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও সুন্দরবন জুড়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ তেমন এগোয়নি। গোসাবা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা-সহ সুন্দরবনের অন্য অংশে দুর্বল মাটির বাঁধই একমাত্র ভরসা। তাঁরা জানান, পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোয়ারের সময়েই বাঁধ ভেঙে যায়। তাই বড় ঘূর্ণিঝড় এলে কি হবে তা ভেবে ঘুম উড়েছে দয়াপুর, ছোট মোল্লাখালি, পাখিরালয়, রাঙ্গাবেলিয়া, কচুখালি, আমতলি, পুঁইজালি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের।

দয়াপুরের বাসিন্দা শিবানন্দ মণ্ডল এবং ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা দীনেশ মণ্ডল বললেন, “প্রতি বছর বর্ষা ও কালবৈশাখীর মরসুমে আমরা ভয়ে থাকি। বিশেষ করে মে মাসের শেষের দিকে যে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় আসে, তা আরও বেশি আতঙ্কের। দুর্বল বাঁধের কারণে দুর্যোগ এলে ফের বন্যার কবলে পড়তে হবে।” সুন্দরবন নদীবাঁধ ও জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটির সম্পাদক চন্দন মাইতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও কোনও সুরাহা হয়নি। এখনও অধিকাংশ বাঁধ মাটির তৈরি। দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয় না, আবার কংক্রিটের বাঁধও তৈরি করছে না।”

রাজ্যের প্রাক্তন সেচমন্ত্রী সুভাষ নস্কর বলেন, “বর্তমান রাজ্য সরকার ইচ্ছা করেই কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করেনি। এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে দিতে হত, বাকি অর্থ কেন্দ্র বরাদ্দ করেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই অর্থ না দেওয়ায় প্রায় চার হাজার কোটিরও বেশি টাকা ফেরত চলে গিয়েছে।” জেলা পরিষদের সদস্য তথা উপাধক্ষ্য অনিমেষ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “যে যে জায়গায় বাঁধের অবস্থা খারাপ, সেখানে মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলিতে অনেক জায়গায় কংক্রিটের বাঁধ তৈরি হয়েছে।”

তবে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এখনও সংশয় কাটেনি। দুর্বল বাঁধ এবং দুর্যোগের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের। গোসাবা ব্লকের সেচ দফতরের আধিকারিক শুভজিৎ দালালের আশ্বাস, “যে সব এলাকায় বাঁধ দুর্বল রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গায় মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। কিছু অংশে জিও টেক্সটাইল দিয়ে বাঁধের ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gosaba

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy