Advertisement
E-Paper

চাল উড়ে গেল পুরো বাড়িটারই

এক সপ্তাহ আগে, গত শুক্রবার নৈহাটির দেবকে একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ জনের। তার পরে নৈহাটি এলাকার সব বাজি কারখানা বন্ধ করে দেয় পুলিশ

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৫
উড়ে গিয়েছে বাড়ির ছাদ। নৈহাটিতে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

উড়ে গিয়েছে বাড়ির ছাদ। নৈহাটিতে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

গত কয়েকদিন ধরে যা ছিল মজার বিষয়, বৃহস্পতিবার দুপুরে তা হয়ে উঠল ভয়ঙ্কর। বাজির মশলা নষ্ট করতে গিয়ে যে এমন ঘটনা ঘটবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি নৈহাটি গৌরীপুরের বাসিন্দারা। বিস্ফোরণে তাঁদের বাড়িটাই ভেঙে পড়বে তা ভাবতেও পারেননি সুশীল যাদবও।

এক সপ্তাহ আগে, গত শুক্রবার নৈহাটির দেবকে একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ জনের। তার পরে নৈহাটি এলাকার সব বাজি কারখানা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। গত কয়েকদিনে পুলিশ বাজি কারখানাগুলি থেকে বেশ কয়েক কুইন্টাল বাজির মশলা এবং রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করে। সেই মশলাগুলি গত চার দিন ধরে গঙ্গার ধারে নষ্ট করা হচ্ছিল। তা দেখতেও আসছিলেন অনেকেই। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, এতে ওই এলাকা ঘন ঘন কেঁপে উঠছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে দফায় দফায় যে পরিমাণ বাজির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছিল, সেগুলি পরদিনই নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল। গত দু’দিনে ৩০০ কেজি রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল সেই মশলাই।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকালয় থেকে আড়াইশো মিটার দূরে দীর্ঘদিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া গৌরীপুর জুট মিলের একটি ফাঁকা জায়গায় গর্ত খুঁড়ে প্রায় ৩০০ কেজি বাজির মশলা ফেলা হয়েছিল। লোকজনকে দূরে সরিয়ে তার পরে ওই রাসায়নিকে আগুন দেওয়া হয়। তার পরেই ঘটে বিকট বিস্ফোরণ।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘বাজির মশলা নিষ্ক্রিয় করার যে নিয়ম রয়েছে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড সেই নিয়ম মেনেই কাজ করেছে। কিন্তু রাসায়নিকের যা পরিমাণ ছিল, তাতে তা দু’ভাগে ভাগ করে আগুন দিলে বিস্ফোরণের তীব্রতা অর্ধেক হত। তা হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো যেত।’’

গত কয়েকদিন ধরে বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় এলাকার বাসিন্দারা মোবাইলে ছবি তুলেছেন। ফলে এ দিনও অনেকেই গঙ্গার ধারে অনেক দূর থেকে মোবাইল তাক করে বসে ছিলেন। তাঁদেরই এক জন রাজু পাসোয়ান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মোবাইলে ভিডিয়ো করছিলাম। গত কয়েকদিন দেখে বুঝে গিয়েছিলাম কখন আগুন আর ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাবে। এ দিন কিন্তু আগের মতো হল না। মাটি কেঁপে উঠল। সঙ্গে তীব্র শব্দ। আমরা তিন জন পড়ে গেলাম। মোবাইলও হাত থেকে ছিটকে গেল। পরে দেখলাম শুধুই ধোঁয়া।’’

সুশীল যাদব বলেন, ‘‘কোনও রকমে দিন এনে দিন খাওয়া সংসার আমাদের। আমার বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। দেওয়ালের চারদিকে বড় বড় ফাটল। এখন আমি কী করব? শুনলাম, মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন!’’

ঘটনার পরে জনতার ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হতে ময়দানে নেমে পড়েন এলাকার বিধায়ক, পুরপ্রধান-সহ পুরসভায় অন্যান্য কর্তারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা ক্ষয়ক্ষতি দেখেন। পুরপ্রধান অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আটটি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই সেই বাড়িগুলির মেরামতির কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’

বিধায়ক পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘এ দিন রাতের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। অল্প ক্ষতি হয়েছে যে বাড়িগুলির, সেগুলিও মেরামত করে দেওয়া হবে।’’

এ দিনের মতো ঘটনা মিটে গেলেও, এলাকার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ফের বোমার মশলা নিষ্ক্রিয় করার কাজ হবে না তো? এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘বাজি তৈরির যে রাসায়নিক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তার সবই নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু এলাকায় তল্লাশি বাকি। সেখান থেকেও বাজির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হবে। সেগুলি থেকে ওই এলাকায় বিস্ফোরণ হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হবে। তবে, আর ওই এলাকায় বাজির রাসায়নিক নিষ্ক্রিয় করা হবে না।’’

Bomb Blast Explosion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy