Advertisement
E-Paper

মিড ডে মিলের পাতে পড়ে পড়ুয়াদেরই চাষ করা আনাজ

কয়েক বছর আগেও ছিল আর পাঁচটা সরকারি স্কুলের মতো। যেখানে ব্ল্যাকবোর্ডও নড়বড়ে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সাহায্যে ভোল বদলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লকের বাসুলহাট অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের। এখন অন্য সরকারি স্কুলগুলির সামনে এই স্কুলকে নজির বলা যেতেই পারে।    

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৬

কয়েক বছর আগেও ছিল আর পাঁচটা সরকারি স্কুলের মতো। যেখানে ব্ল্যাকবোর্ডও নড়বড়ে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সাহায্যে ভোল বদলেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা ব্লকের বাসুলহাট অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের। এখন অন্য সরকারি স্কুলগুলির সামনে এই স্কুলকে নজির বলা যেতেই পারে।

এখন নামকরা যে কোনও বেসরকারি স্কুলের প্রায় সমকক্ষ বলেই মনে হবে। জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে ঝাঁ চকচকে এমন স্কুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় সবার। পুরো স্কুলই সিসি টিভির আওতায় রয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে বার্ষিক মাত্র সাড়ে ১৩ হাজার টাকা অনুদান মেলে। বাকিটা ভর্তুকি দেন প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর নিজেই। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলটাকে সুন্দর করে সাজাতে চেয়েছিলাম। তাই চেষ্টা করি।’’

বেলা ১১টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত স্কুল চলে। কিন্তু তিলকবাবু স্কুলে আসেন সকাল ছ’টায়। নিজে হাতে স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার করেন। কর্মীর অভাব রয়েছে। তবে নিজে হাতে শৌচালয় পরিষ্কার করতে কুন্ঠাবোধ করেন না তিলকবাবু। তিনি জানান, স্কুলে প্রায় ছ’টি শৌচালয় রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান নিয়ে ওই সব শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া স্কুল চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ২০১২ সালে নির্মল স্কুল পুরস্কারও মিলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘সে জন্য স্কুলের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আমিই দেখভাল করি।’’ শুধু নির্মল স্কুল নয়। স্কুলের ঝুলিতে শিশুমিত্র বিদ্যালয় ও জেলার সেরা স্কুলের শিরোপাও এসেছে।

মিড ডে মিলের খাবারে পড়ুয়াদের পাতে পড়ে ভাত়-ডাল তাজা আনাজ ও ডিম। সব স্কুলেই তৈরি হয়। আনাজগুলি চাষ করা হয় স্কুলের মধ্যেই। প্রথম দিকে চাষিরা এসে চাষের কাজকর্ম দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা মিলে এই ফসলগুলি ফলান। মরসুমি ফসলের চাষ করা হয় এখানে। তিলকবাবু মনে করেন, স্কুলে ফলানো আনাজ হল দূষণহীন। যা পড়ুয়াদের শরীরের পক্ষে ভাল। তা ছাড়া তারা পেট ভরে খুব ভাল ভাবে এই ফসলের রান্না খায়।

আনাজের পাশাপাশি রঙিন মাছের চাষ করা হয় স্কুলে। স্কুলের অ্যাকোরিয়ামে ওই মাছই রাখা হয়। অনেক সময় পড়ুয়াদের আবদারে তাঁদের হাতেও মাছ তুলে দেন তিলক স্যার।

স্কুল পড়ুয়ারা বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করে। জীবনবিমা সংস্থার তরফে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলের তরফে জানা গিয়েছে, বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবেই শিশুরা নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়। সে জন্যই আগে বিশুদ্ধ জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে বসানো হয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের যন্ত্র।

শুধু খাওয়া-দাওয়া বা পরিচ্ছন্নতার দিকে নন। তিলকবাবুর নজর আছে শিশুদের পড়াশোনার দিকেও। যদি কোনও পড়ুয়া পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। তাহলে স্কুলের প্রাক্তনীরা তাকে স্কুলের পরে পড়াবে—এমনটাই প্রথা এই স্কুলের। সপ্তাহে তিন দিন পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের বিশেষ ভাবে পড়া দেখানোর দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে স্কুল থেকেই।

ফলতা পঞ্চায়েত এলাকায় ১৯৪২ সালে ওই স্কুল স্থাপিত হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে পথ চলা। ২০০৫ সালে স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে এসেছেন তিলকবাবু। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে তিলকবাবু। নিজের আয়ের প্রায় সবটাই স্কুলের জন্য খরচ করেন। কিন্তু এ নিয়ে তাঁর কোনও সমস্যাও নেই। তাঁর কথায়, ‘‘স্কুলের বেতনের উপর আমার কোনও নজর নেই। যৌথ পরিবারে থাকি। এখন স্কুলের জন্য চেনা পরিচিত এমনকী নিজের স্ত্রীর কাছ থেকেও টাকা নিতে আমার লজ্জা করে না।’’

Mid Day Meal School Cultivation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy