Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Shaman

সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ওঝাই!

একই গ্রামের বাসিন্দা কাবিল ও তাঁর বাবা বাবুরালি জমাদার ওঝা-গুনিনের কাজ করেন। প্রথম দিকে কাবিলও সাপে কামড়ানো রোগীকে গাছের শিকড়বাকড়, ওষুধ দিয়ে ঝাড়ফুঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করতেন।

An image of snake bite

—প্রতীকী চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৭:০২
Share: Save:

কোনও ঝাড়ফুঁক করে সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা নয়। বরং মূল্যবান সময় যাতে নষ্ট না হয়, তাই সাপে কামড়ানো রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলেন খোদ ওঝা! এ ক্ষেত্রে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করায় তাঁর প্রাণ বেঁচেছে। সম্প্রতি জীবনতলা থানার হোমরা পলতা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আসমা গায়েন যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন তাঁকে ছোবল মারে কালাচ সাপ। বাড়িতে ডাকা হয় ওঝা কাবিল জমাদারকে। কিন্তু তিনি এসে ক্ষতস্থান খুঁটিয়ে দেখে আর সময় নষ্ট করেননি। বরং চটজলদি রোগীকে নিয়ে পৌঁছে যান ক্যানিং হাসপাতালে। ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়ায় বেঁচে যান আসমা। চিকিৎসকেরাও ওঝার এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

একই গ্রামের বাসিন্দা কাবিল ও তাঁর বাবা বাবুরালি জমাদার ওঝা-গুনিনের কাজ করেন। প্রথম দিকে কাবিলও সাপে কামড়ানো রোগীকে গাছের শিকড়বাকড়, ওষুধ দিয়ে ঝাড়ফুঁকে সুস্থ করার চেষ্টা করতেন। পরে ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ নেন। সেখানেই সাপে কামড়ানো রোগীর ক্ষতস্থান পরীক্ষা করে কাবিল বুঝতে শিখেছেন যে, কোন সাপ ছোবল মেরেছে। ফলে কাউকে বিষধর সাপ কামড়েছে বুঝলে নিজেই তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ন কাবিল। আর যদি দেখেন বিষহীন সাপে কেটেছে, তা হলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে রোগীকে ছেড়ে দেন। ইতিমধ্যে বিষধর সাপের কামড় খাওয়া ২৮-৩০ জন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাণে বাঁচিয়েছেন কাবিল। এমনকি, সাপ ধরে বন দফতরের হাতেও তুলে দিয়েছেন। কাবিলের কথায়, “সাপের কামড় খেয়ে অনেকে আমার কাছে আসেন। অনেকেই সুস্থ হয়ে যেতেন, কেউ কেউ মারা যেতেন। পরে আমি যুক্তিবাদী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুরো বিষয়ে সচেতন হই। তার পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে কাজ করছি।”

ভাঙড়ে গ্রামীণ এলাকায় সাপে দংশনের হার বাড়ছে বলে সূত্রের খবর। যুক্তিবাদী সংস্থার কর্ণধার বিজন ভট্টাচার্য বলেন, “দিন দিন নগরায়ণের ফলে গড়ে উঠছে বহুতল। রাতারাতি ভরাট হচ্ছে জলাভূমি। ফলে বাস্তু হারিয়ে সাপেরা ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় চলে আসছে। যে কারণে বাড়ছে সাপে কামড়ের হার।”

তবে তার পরেও ভাঙড়ে সাপের কামড়ে মৃত্যুর হার তেমন বেশি নয়। কী ভাবে তা সম্ভব হল? জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হিরণ্ময় বসু বলেন, “আগে ব্লক হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত এভিএস থাকত না। অনেকেই সাপের কামড়ের ক্ষতস্থান দেখে বুঝতে পারতেন না। ফলে সমস্যা তৈরি হত। এখন জেলায় সাপের কামড়ের বিষয়ে প্রশিক্ষণ হওয়ার ফলে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে।”

১৮ জুলাই ভাঙড়-লাগোয়া রাজারহাট থানার আকন্দকেশরী গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী আনিসা লস্করকে সাপে ছোবল মারে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে জিরানগাছা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বেঁচে গিয়েছিল সে। একই গ্রামের বছর সাতাশের যুবক সৌরভ নস্করকে সাপে কামড়ালেও তিনি কাউকে জানাননি। ফলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shaman Snake Bites Bhangar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE