ইটভাটাগুলিতে প্রশাসনের নজরদারি কতটা, বসিরহাটে ইটভাটায় বিস্ফোরণের পরে এই প্রশ্ন উঠছে। বসিরহাট মহকুমা জুড়ে প্রায় সাড়ে তিনশো ইটভাটা আছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ইটভাটাগুলি কী ভাবে চলছে, সে ব্যাপারে তেমন নজরদারি থাকে না।
বুধবারের দুর্ঘটনার পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন দফতরকে নিয়ে জেলাশাসক বৈঠক করবেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে এমন ঘটনা ফের না ঘটে।’’
হিঙ্গলগঞ্জের বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকার একটি ইটভাটায় বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেল, শ’দুয়েক শ্রমিক কাজ করছেন। ইট পোড়ানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। চিমনির বেশ কিছুটা জায়গায় প্লাস্টারে ফাটল চোখে পড়ল। কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে গিয়েছে। চিমনির কিছুটা দূর পর্যন্ত ওঠার জন্য একটি লোহার সিঁড়ি আছে। জানা গেল, ধোঁয়া পরীক্ষার জন্য সরকারি কর্মীরা এলে তাঁদের যাতে নমুনা সংগ্রহ করতে সুবিধা হয়, তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ীই এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ভাটার কর্মীরা কেউ মনে করে বলতে পারলেন না, আদৌ কোনও দিন ধোঁয়া পরীক্ষা করতে বা ভাটা পরিদর্শনে সরকারি কর্মীরা এসেছিলেন কি না!
কয়েক জন শ্রমিক জানালেন, তাঁরা উত্তরপ্রদেশ থেকে এসেছেন। মাসে ১৩-১৪ হাজার টাকা বেতন পান। ইট পোড়ানো, আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে চুল্লিতে কয়লা দেওয়ার কাজ করেন। নভেম্বর মাসের শেষ বা ডিসেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় ইট পোড়ানোর কাজ। চলে মাস ছ’য়েক।
প্রায় ১২৫ ফুট লম্বা চিমনি সংস্কারের বিষয়ে ভাটা কর্মীদের সাফাই, ‘‘বেশি পুরনো চিমনি নয় এটা। কয়েক বছর আগে তৈরি হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আবার সংস্কার হবে।’’
শ্রমিকদের থাকার জায়গা ইটভাটা চত্বরেই। কিন্তু সেই জায়গাও নিরাপদ নয়। মাটির ঘর ভেঙে পড়তে পারে যখন-তখন। হাসনাবাদ ব্লকের পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েত এলাকার একটি ভাটাতে গিয়েও দেখা গেল, চিমনির উপরের দিকের বেশ কয়েক ফুট অংশ জুড়ে প্লাস্টার খসে ইট বেরিয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ অবস্থা। কেন চিমনি সংস্কার করা হয়নি? ভাটার এক কর্মী জানান, ইট তৈরির কাজ বন্ধ আছে বেশ কিছু দিন। কাজ শুরু হলে নিশ্চয়ই সংস্কার করবেন মালিক।
উত্তর ২৪ পরগনা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি উদয়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘ইটভাটার চিমনি নিয়ম করে দু'তিন বছর পর পরই সংস্কার করতে হয়। মালিকেরা তা করেন। তা না হলে বিপদ হতে পারে, সেটা সকলে জানেন। বসিরহাটে যে ইটভাটার চিমনি ভেঙে পড়ল, এর পিছনে অন্য চক্রান্ত থাকতে পারে। তা না হলে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিমনি ভেঙে পড়ার ঘটনা কোনও দিন শুনিনি।’’
উদয়চন্দ্র আরও বলেন, ‘‘শ্রমিকদের থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে অনেক ভাটায়। তবে কিছু মালিক তা করে উঠতে পারেন না।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)