Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নাবালিকার বিয়ের খবর পেলেই সেখানে ছুটছেন বিজলি, জবারা

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার মুখে ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার বেড়ে যায় পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন স্কুলে, সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে সে কথা। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই সব মেয়েদের অনেকের বিয়েও হয়ে যায়।

শান্তশ্রী মজুমদার
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার মুখে ছাত্রীদের স্কুলছুটের হার বেড়ে যায় পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন স্কুলে, সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে সে কথা। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই সব মেয়েদের অনেকের বিয়েও হয়ে যায়।

তবে নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই বিয়ের আসরে ছুটে যান প্রশাসনের কর্তারা। কথা বলেন পাত্র ও পাত্রীর অভিভাবকদের সঙ্গে। কিন্তু তাঁরা চলে যাওয়ার পরে রাতের অন্ধকারে সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

পাথরপ্রতিমা ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে এগুলিই হল চেনা ছবি। তবে তার মধ্যেই আশার আলো হল দিগম্বরপুর পঞ্চায়েত। সৌজন্যে, ওই পঞ্চায়েতের মহিলাদের সমবায় সঙ্ঘ এবং ছাত্রীদের দল। এই দুই বাহিনীর যৌথ চেষ্টায় গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি নাবালিকা বিয়ে আটকেছে পুলিশ-প্রশাসন।

দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে জৈব চাষ সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য মহিলাদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল সারদা সঙ্ঘ। এই সংগঠনটিই এখন ওই এলাকায় নাবালিকা বিয়ে আটকানোর অন্যতম অস্ত্র। সঙ্ঘের নেত্রী বিজলী প্রামাণিক, জবা ভট্টাচার্যদের দাবি, গত এক বছরে ওই পঞ্চায়েতে পাঁচটি নাবালিকার বিয়ে আটকেছেন তাঁরা। এই কাজে তাঁরা দিগম্বরপুর পূর্ব নবীনচন্দ্র হাইস্কুলের কয়েকজন ছাত্রীকে পাশে পেয়েছেন। ওই ছাত্রীরাই এলাকায় নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে পঞ্চায়েত এবং সমবায় গোষ্ঠীর মহিলাদের জানাচ্ছে। তারপরে সকলে মিলে পাত্রীর অভিভাবকদের কাছে গিয়ে বিয়ে দিতে নিষেধ করছেন।

সারদা সঙ্ঘের অধীনে ওই পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে কয়েকটি সমবায় সমিতিও রয়েছে। শুধু নাবালিকার বিয়ে আটকানো নয়, মহিলাদের উপরে সামাজিক অত্যাচার ঠেকানো, মদের ঠেক ভাঙার জন্যও মহিলাদের সংগঠিত করছে এই সংগঠন।

সুস্মিতা প্রামাণিক, পূজা দাসের মতো ছাত্রীদের কথায়, ‘‘অনেক মেয়ে পড়তে চাইলেও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় নজর রাখছি। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলেই আমরা পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বোঝাচ্ছি। তাতে কাজও হচ্ছে।’’ সম্প্রতি ওই ছাত্রীদের অনুরোধেই দিগম্বরপুরের এক নাবালিকা বিয়ে করতে অস্বীকার করে স্কুলে এসে জানিয়েছে, সে পড়াশোনা করতে চায়। সরস্বতী পুজোর দিন পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ দুর্গাপুর এলাকায় এক নাবালিকার বিয়ে আটকেছেন সঙ্ঘের সদস্যেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষিজীবী পরিবারে ‘ভাল’ পাত্রের সন্ধান পেলেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহু দিনের। মেয়ের বয়স ১৩-১৪ হলেই তার বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা শুরু হয়। নবীনচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার রায় জানান, সমবায় সঙ্ঘের সদস্যেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানোর পরে গত বছরের তুলনায় তার স্কুলে ছাত্রীদের স্কুল ছুটের হার কমেছে। কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এলাকার বাকি স্কুলগুলিতেও প্রায় একই ছবি।

স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান রবীন্দ্রনাথ বেরার কথায়, ‘‘নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য আমরা নিরন্তর প্রচার করছি। সঙ্ঘের মহিলারা এবং স্কুল ছাত্রীদের একাংশ এই কাজে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। দিন কয়েক আগেই এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। তার পড়াশোনার ভার আমরাই নিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minor Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE