আয়তনে প্রায় কলকাতা পুলিশ এলাকার সমান। অথচ আলাদা করে বাহিনী মোতায়েন করে ব্যাটেলিয়ন তৈরি করা হয়নি সেখানে। ডিভিশনও রয়েছে মাত্র একটি। চারটি থানা রয়ে গিয়েছে এখনও খাতায়-কলমেই। সেগুলির ভবনও তৈরি হয়নি। গোটা ডিভিশনে যে একটি মাত্র রিজার্ভ ফোর্স রয়েছে, তাতে সব মিলিয়ে সদস্য সংখ্যা মাত্র ৩৫-৪০ জন! বারুইপুর পুলিশ জেলা থেকে কলকাতা পুলিশে সংযুক্তির পরে এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভাঙড় ঘিরে পরিস্থিতি এখনও এমনই।
ওয়াকফ-গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ নাজেহাল হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠছে, শুধু কি এলাকা সংযুক্তির পর্যায়েই রয়ে গেল সবটা? কেন পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করা হল না? গন্ডগোলে আক্রান্ত নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের ক্ষোভ, বছর ঘুরে গেলেও আলাদা রিজার্ভ ফোর্স তৈরির আবেদনই গ্রাহ্যই হল না। উল্টে উপরতলার নির্দেশ কার্যকর করতে গিয়ে মার খেতে হচ্ছে!
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে গন্ডগোলে সাত জনের প্রাণ যাওয়ার পরে ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের অধীনে আনার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো গত ৮ জানুয়ারি থেকে বারুইপুর পুলিশ জেলার ভাঙড় ও কাশীপুর থানা ভেঙে কলকাতা পুলিশের অধীনে পথ চলা শুরু করে ভাঙড় ডিভিশনের উত্তর কাশীপুর, পোলেরহাট, ভাঙড় এবং চন্দনেশ্বর থানা। মাধবপুর, বোদরা, হাতিশালা ও বিজয়গঞ্জ নামে আরও চারটি থানার কথা ঘোষণা করা হয় সেই সময়ে। কিন্তু সেগুলি এখনও শুধু খাতায়-কলমেই রয়ে গিয়েছে বলে খবর। যদিও সংযুক্তির সময়ে কলকাতা পুলিশের নানা মহল থেকে দাবি করা হয়েছিল, কলকাতা পুলিশের মোট এলাকা কমবেশি ৩১১ বর্গকিলোমিটার। সেখানে ভাঙড়ের দু’টি ব্লক মিলিয়েই আয়তন প্রায় ২৭৩ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু এই প্রায়-সমান এলাকা দেখভালের জন্য যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন, তা বাহিনীতে কোথায়?
প্রশ্ন ওঠে, কলকাতা পুলিশ এলাকা যেখানে ৯টি ডিভিশনে ভাগ করে সামলানো হয়, যেখানে প্রতিটি ডিভিশনের জন্য আলাদা করে ফোর্স রয়েছে এবং ব্যাটেলিয়ন থেকে বাহিনী নিয়ে গিয়ে সামাল দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেখানে ভাঙড়ের মতো বিশাল এলাকায় এর কোনও কিছুই না করে সামলানো যাবে কী করে?
কিন্তু এই প্রশ্নগুলির উত্তর যে খোঁজা হয়নি, তা গত সোমবার থেকে ভাঙড়ে তৈরি হওয়া অশান্ত পরিস্থিতি অনেকটাই দেখিয়ে দিয়েছে বলে দাবি বাহিনীর মার খাওয়া সদস্যদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশের প্রায় ১৩ হাজার শূন্য পদ রয়েছে। কবে তা পূরণ হবে, তা জানা নেই। প্রগতি ময়দান থানার কাছে ভাঙড় ডিভিশনের জন্য আলাদা করে ব্যাটেলিয়ন তৈরি করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ভাঙড় ডিভিশন লালবাজারের অধীনে আসার পরে জেলা পুলিশের ৫০ জনকে ডেপুটেশনে কলকাতা পুলিশের অধীনে কাজ করতে নেওয়া হয়েছিল। ১১৫ জন মহিলা কনস্টেবলকেও রাজ্য পুলিশ থেকে ভাঙড়ে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে অফিসার, কনস্টেবল নিয়ে ভাঙড়ে প্রতি থানায় ৬০-৬৫ জন করে পুলিশকর্মী রয়েছেন। আর রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে আছেন মাত্র ৩৫-৪০ জন। স্থানীয়দের দাবি, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে ভাঙড়ের চারটি থানার সমস্ত বাহিনী মিলিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ডেকে নেওয়া হয় কাছের কেএলসি থানাকেও।
কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয় কি?— সংযুক্তির পরে এই প্রথম তৈরি হওয়া আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও পরিস্থিতি সামলাতে নাজেহাল হতে হবে না তো, উঠছে সেই প্রশ্নও। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক অফিসার যদিও বলেন, ‘‘কড়া হাতেই সবটা সামলানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে ভাঙড় ডিভিশন ঘিরে আলাদা ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)