কোথাও প্রকাশ্যে, কোথাও বা গোপনে মাটি বা আবর্জনা আসছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর।
বসতি নির্মাণের জন্য উত্তর ২৪ পরগনার নানা প্রান্তে পুকুর ভরাট হয়ে চলেছে অবাধেই। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসনের কাছে সময়মতো অভিযোগ পৌঁছচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। এ ভাবেই জেলার বিড়া, গুমা, হাবরা, অশোকনগর, গোবরডাঙার মতো কিছু এলাকার পুকুর ভরাট চলছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই পুকুর ভরাটের সঙ্গে স্থানীয় ক্লাব, রাজনৈতিক নেতা বা এলাকার প্রভাবশালীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন। সে জন্য তাঁরা প্রতিবাদ জানাতে পিছিয়ে আসছেন। ফলে, খবর পৌঁছচ্ছে না প্রশাসনের কাছে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) বিজিৎ ধর জানান, পুকুর ভরাট নিয়ে প্রায়ই দফতরে অভিযোগ আসে। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। গুমা-চৌমাথা এলাকায় যশোহর রোডের পাশে বিশাল একটি পুকুর সকলের চোখের সামনে কৌশলে বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, ৯৮ শতকের পুকুরটির মধ্যে ৬ শতকের মালিক সফরা বিবি নামে এক জন। বাকি অংশের মালিক পরিতোষ সরকার নামে আর এক ব্যক্তি। কিন্তু ওই পুকুরটির কোন অংশের ৬ শতক জমি সফরা বিবিদের ভূমি দফতরের নথিতে তার উল্লেখ নেই। পরিতোষবাবুর অভিযোগ, ২০০৯ সালে সফরা বিবিরা পুকুরের উত্তর-পশ্চিম দিকের ৬ শতক জমি পাঁচিলে ঘিরে তার মধ্যে পিলার তুলে নির্মাণ শুরু করেন। সেই সময়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এর পরে আদালতে মামলা করেন পরিতোষবাবু। আদালতের নির্দেশে পুকুরে নির্মাণ বন্ধ হয়।
ঘেরা অংশটিতে নির্মাণ না হলেও আবর্জনা ফেলে ভরাটের কাজ চলছে। সফরা বিবির স্বামী আব্দুল হালিমের দাবি, ‘‘পুকুরে আমরা পাঁচিল দিইনি। ভরাটও করছি না।’’ কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেউ করছে না, অথচ দিব্যি পুকুর ভরাট চলছে।
মাটি ফেলে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে হিজলপুকুর এলাকার একটি পুকুর।
প্রকাশ্যে দিনের আলোয় হাবরা জয়গাছি সুপার মার্কেটের কাছে একটি বিশাল পুকুরের একাংশ ভরাট করে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগেই। পুকুরটিতে স্নান করা বন্ধ হয়ে যায়। এলাকায় দিয়ে দেখা গেল, এখন পুকুরটির বাকি অংশে একটু-একটু করে আবর্জনা ফেলে ভরাট করা চলছে। পুরসভার গাড়িতে করেই আর্বজনা পুকুরে এনে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একই রকম ভাবে হাবরার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের হিজলপুকুরের বড়ালিয়া রোডে ভরাট শুরু হয়েছে বিশাল একটি পুকুর। এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে পুরসভা ও ভূমি দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলার শ্যামল দাসের অভিযোগ, ‘‘বছর খানেক আগে এক বার ভরাটের চেষ্টা হয়। কিন্তু পুরসভাকে বলে আমি কাজ বন্ধ করি। আবার মাটি ফেলা শুরু হয়েছে। এ বারও পুরসভাকে জানিয়েছি।’’
তবে, এই সব পুকুর ভরাটের খবর তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন হাবরা পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস। তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
একই রকম ভাবে গোবরডাঙা পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জামদানি মোড়ের কাছে একটি বড় পুকুরর একাংশে মাটি ফেলে ভরাটের কাজ চলছে। গড়পাড়ার দু’টি বড় পুকুরও ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, পুকুরগুলির ভরাটের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
ছবি তুলেছেন শান্তনু হালদার।