Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Madhyamik Result 2023

অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা পড়েই এসেছে সাফল্য

উত্তর ২৪ পরগনায় প্রথম ও মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অর্ক মণ্ডল। পরীক্ষার পরে অর্ক ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিল, ৬৯০ পাবে।

পাশের হাসি: মার্কশিট হাতে পাওয়ার পরে ছাত্রীরা। বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক 

পাশের হাসি: মার্কশিট হাতে পাওয়ার পরে ছাত্রীরা। বনগাঁর কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক 

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৩ ০৯:১৮
Share: Save:

বই মুখে করে সারা দিন বসে থাকত না কেউ। কেউ ছবি আঁকে, কেউ বাজনা বাজায়, কারও শখ খেলা, গল্পের বই পড়া। কিন্তু প্রায় সকলেই জানাচ্ছে, মারকাটারি ফল করতে গেলে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা পড়ার কোনও বিকল্প নেই।

উত্তর ২৪ পরগনায় প্রথম ও মাধ্যমিকে তৃতীয় হয়েছে টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অর্ক মণ্ডল। পরীক্ষার পরে অর্ক ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিল, ৬৯০ পাবে। অব্যর্থ নিশানায় ওই নম্বরই পেয়েছে সে। অর্কর বাড়ি বসিরহাট পুরসভার ময়লাখোলা এলাকায়। গল্পের বই পড়ার শখ আছে। গানবাজনা ভালবাসে, ছবিও আঁকে। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় সে। বাবা কিরণচন্দ্র মণ্ডল মনিহরি দোকান চালান। মা অপর্ণা সব সময়ে উৎসাহ জুগিয়েছেন পড়াশোনায়। মিশনের মহারাজ ও গৃহশিক্ষকদের অবদানের কথাও বলে সে। মিশনের প্রধান শিক্ষক স্বামী পূর্ণাময়ানন্দ বলেন, ‘‘অর্ক মেধাবী ছাত্র তো বটেই, সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা-ভক্তিও রয়েছে। জীবনে বড় হতে গেলে তা প্রয়োজন।’’ অর্ক জানায়, ভাল ফল করার জন্য একটি বিষয়ে একাধিক বই পড়ত সে। দিনে ৬-৭ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। প্রতিটি বিষয়ে গৃহশিক্ষক ছিল।

উত্তরের বেড়াচাঁপা দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌম্যদীপ মল্লিকও একই নম্বর পেয়ে তৃতীয় হয়েছে মাধ্যমিকে। মেধা তালিকায় এক থেকে দশের মধ্যে থাকবে বলে আশা ছিল তার। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সৌম্যদীপ। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় আগ্রহী সে। সায়েন্স অলিম্পিয়াডে এক বার রাজ্যে চতুর্থ হয়েছিল সৌম্যদীপ। বাবা সন্দীপ রসায়নের শিক্ষক। বললেন, "ছেলেকে ছোটবেলা থেকেই বইমুখী করেছিলাম। কী ভাবে নম্বর পেতে হয়, সেই পদ্ধতি শিখিয়েছিলাম।’’

বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সমাদৃতা সেন ৬৮৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে চতুর্থ হয়েছে। বনগাঁ শহরে রামনগর রোড সংলগ্ন এলাকায় তার বাড়ি। বাবা উদয় ও মা শম্পা দু'জনেই স্কুলে পড়ান। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে গবেষণা করতে চায় সমাদৃতা। আপাতত একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে নিজের স্কুলেই পড়তে চায়। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করত সমাদৃতা। অবসর সময়ে গান করতে, ছবি আঁকতে আর গল্পের বই পড়তে ভালবাসে সে। শম্পা বলেন, ‘‘ছোট থেকে মেয়েকে কখনও পড়তে বসতে বলতে হয়নি।’’

দশের মধ্যে থাকবে, তা একেবারেই ভাবেনি মাধ্যমিকে ষষ্ঠ হওয়া বিদিশা কুণ্ডু। টিভিতে ফল প্রকাশের খবর দেখতে গিয়ে নিজের নাম শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলে সে। এ বার কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৮৭ নম্বর পেয়েছে বিদিশা। বনগাঁ শহরের রেল বাজার এলাকায় বাড়ি তাদের। বাবা কিশোরকুমার ও মা ববি দু'জনেই স্কুলে পড়ান। ভবিষ্যতে বিদিশা চিকিৎসক হতে যায়। সে জানায়, ৭ জন গৃহশিক্ষক ছিল। অবসর কাটে গান গেয়ে, ছবি এঁকে বা গল্পের বই পড়ে।

মাধ্যমিকে ৬৮৬ নম্বর পেয়ে সপ্তম হয়েছে বসিরহাট পূর্ণচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুচেতনা রায়। তার ইচ্ছা, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা অধ্যাপনা করবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচতে, গাইতে ও ছবি আঁকতে পারদর্শী সুচেতনা। পুকুরে ছিপ ফেলে মাছও ধরতেও জানে। বাবা তিমিরবরণ ও মা শুভ্রা সাহা রায় মেয়ের সাফল্যে খুশি। যদিও সুচেতনা জানায়, আর একটু বেশি নম্বর আশা করেছিল। শুভ্রা বলেন, ‘‘দিনে ৮-১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করত মেয়ে। নিজের চেষ্টায় এই ফল করেছে ও।’’

মাধ্যমিকে ক্যানিং মহকুমার মধ্যে প্রথম ও রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তাঁতকল মোড় এলাকার বাসিন্দা শিবম পাঠক। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪। ক্যানিংয়ের নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট স্কুলের ছাত্র সে। শিবমের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। শিবম জানায়, তার সাফল্যের পিছনে বাবা মানস, মা কাকলি, দিদি তিতলি ও স্কুলের শিক্ষকদের বড় অবদান রয়েছে। শিবমের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দাস বলেন, “আমাদের স্কুল একেবারেই নতুন। পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারাই মূলত আমাদের ছাত্রছাত্রী। আমাদের পড়ুয়া ভাল রেজাল্ট করতে পারায় আমরা গর্বিত।’’

৬৮৪ নম্বর পেয়ে নবম স্থানে রয়েছে কাকদ্বীপের বামানগর সুবলা হাই স্কুলের ছাত্র অভীক আদকও। তার বাড়ি কাকদ্বীপের বামানগর এলাকায়। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতে, গল্পের বই পড়তে ভালবাসে অভীক। ভবিষ্যতে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। সেই প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে। বাবা অমলকুমার প্রাক্তন আর্মি অফিসার। কর্মসূত্রে বাড়ির বাইরে বেশি থাকেন। মা, কাকা, জ্যেঠুরা তাকে সব সময়ে উৎসাহ দিতেন বলে জানায় অভীক।

ভবিষ্যতে আইএএস অফিসার হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চায় তনয় টিকাদার। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে সে। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের এই ছাত্রের বাড়ি অশোকনগরে। বাবা অভিজিৎ ব্যবসা করেন। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পড়ত তনয়। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পড়ার সময় আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভূগোল প্রিয় বিষয়। অবসর সময়ে তনয় গান শুনতে ভালবাসে।

টাকি রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র তন্ময় ঘোষও ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে। তার বাড়ি টাকি পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তন্ময় ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায়। পড়াশোনার পাশাপাশি গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকতে ভালবাসে তন্ময়। বাবা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল হাইস্কুলের শিক্ষক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী পূর্ণাময়ানন্দ জানান, ক্লাসে প্রথম হত তন্ময়। তাই ভাল ফল করবে, এমন প্রত্যাশা ছিলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Result 2023 Madhyamik 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE