Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
তাহাদের কথা

ইলিশের দেখা নেই, মৎস্যজীবীরা পাড়ি দিচ্ছেন কেরলে

রূপালি শস্যের মরসুম এসে পড়েছে। বাজারে অল্পস্বল্প দেখাও মিলছে। কিন্তু জোগান কম। মাছ ধরার কাজ ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন কেউ কেউ। যাঁরা মাছ ধরতে যাচ্ছেন, তাঁদেরও নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ইলিশ ধরার কাজে যুক্ত শ্রমিকদের খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ প্রথম কিস্তি।ইলিশের আকাল থাবা বসিয়েছে রাজ্যের মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার উপরে। সংসার চালাতে না পেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান মৎস্যবন্দরগুলি থেকে একটি বড় অংশের শ্রমিক সরতে শুরু করেছেন কেরলে। আর শ্রমিক না পাওয়ায় একে একে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ট্রলার মালিকেরা। মাছ ধরার মরসুম শুরু হওয়ার পরে এক মাস কেটে গিয়েছে।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

ইলিশের আকাল থাবা বসিয়েছে রাজ্যের মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার উপরে।

সংসার চালাতে না পেরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান মৎস্যবন্দরগুলি থেকে একটি বড় অংশের শ্রমিক সরতে শুরু করেছেন কেরলে। আর শ্রমিক না পাওয়ায় একে একে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ট্রলার মালিকেরা।

মাছ ধরার মরসুম শুরু হওয়ার পরে এক মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু গভীর সমুদ্র থেকে তেমন ইলিশ উঠছে না। তার সরাসরি প্রভাব পড়ছে মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রায়। লভ্যাংশের উপর অংশীদারী প্রথা এ রাজ্যে চালু থাকায় লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই সংসার চালাতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ডায়মন্ড হারবার ও কাকদ্বীপ থেকে তিন হাজার শ্রমিক চলে গিয়েছেন কেরলে।

শ্রমিকদের সঙ্গে মাছ বিক্রির লভ্যাংশের ভিত্তিতে মালিকের ৬০ শতাংশ ও শ্রমিকের ৪০ শতাংশ পাওয়ার কথা। একটি ট্রলারে প্রায় ১৩ জন মৎস্যজীবী কাজ করেন। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে এক একটি ট্রলার পিছু আট-দশ দিনে প্রায় ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়। দাদন হিসেবে সেই টাকা ট্রলার মালিকেরা শ্রমিকদের দিয়ে দেন ডিজেল, রেশন, বরফ ইত্যাদি কেনার খরচ হিসেবে। মাছ ধরে ফিরলে তা বিক্রি করার পরে শ্রমিকদের লভ্যাংশ থেকে সেই টাকা শোধ হয়।

কিন্তু জুনের গোড়া থেকেই ইলিশের কারবারিরা পর পর তিন বার মাছ ধরতে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। মাছ না পাওয়ায় দাদন শোধ করতে পারছেন না শ্রমিকেরাও। পর্যাপ্ত মাছ না পেয়ে ফিরে এসে সংসার চালাতে হাত পাততে হচ্ছে ট্রলার মালিকদের কাছেই। কিন্তু সেই টাকাও অভাব মেটাতে পারছে না।

পশ্চিমবঙ্গ ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “ইলিশের আকাল চাপে ফেলেছে আমাদেরও। প্রতি যাত্রায় ২০-৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শ্রমিকদের দাদন দেওয়ার পরেও বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে। তাতেও তারা থাকছে না। কেরলে চলে যাচ্ছে।” কাকদ্বীপের ট্রলার মালিক হরেন দাস বলেন, “আমার দু’টি ট্রলার রয়েছে। এ পর্যন্ত তিনটে ট্রিপে তেমন মাছ না মেলায় আট-দশ জন শ্রমিক কাজ ছেড়ে দিয়েছে। কয়েক দিন ধরে ট্রলার বসিয়ে রেখেছিলাম।”

ট্রলার মালিকেরা জানাচ্ছেন, কেরলে অবশ্য মাসমাইনের চুক্তিতেই ট্রলার মালিকেরা শ্রমিকদের নিয়োগ করেন। দক্ষতার মান অনুযায়ী, একেক জন শ্রমিক মাসে ৫-৬ হাজার টাকা পান। কেরলে এ রাজ্যের মৎস্যশ্রমিকদের চাহিদাও অনেক বেশি। ফলে সহজেই কাজ মেলে। জুন-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইলিশের মরসুম চলে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এক একটি ট্রলারে প্রায় ৬-১০ কুইন্ট্যাল ইলিশ ওঠে। এ বার তা নেমে মাত্র ৪০-৫০ কিলোয় দাঁড়িয়েছে।

ডায়মন্ড হারবারের সহ-মৎস্য অধিকর্তা কিরণ দাস বলেন, “মায়ানমার ও বাংলাদেশের উপকূল থেকে মূলত পূবালি হাওয়ায় এ রাজ্যের দিকে ইলিশ ঢোকে। সঙ্গে ঝিরঝিরে বৃষ্টি দরকার। তা এখনও নেই। তাই ইলিশ এখনও নেই। তবে জুলাইয়ে পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলে আমাদের আশা।”

আবহাওয়া নির্ভর মরসুমি ইলিশের অনিশ্চয়তা কবে কাটবে তা জানা নেই। কিন্তু তার জেরে ট্রলার বসিয়ে দিতে বাধ্য হবেন মালিকেরা। তাতে মৎস্যজীবী শুধু নন, সমস্যায় পড়বেন আরও অনেকে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন মজুর, বরফকল শ্রমিক, ভ্যানওয়ালারাও।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE