Advertisement
E-Paper

চিনতে পারছেন তো আমাকে, প্রচারে বেরিয়ে বললেন দেবেশ

সকাল সাড়ে ১০টা। বনগাঁর ট্যাংরা গ্রাম পঞ্চায়েতের আরশিংড়ি বাজারে ঢোকার আগে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস। দু’হাত জোড় করে এগিয়ে গেলেন সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যস্ত কয়েক জন মহিলার দিকে। বললেন, “আমি দেবেশ দাস। আমাকে চিনতে পারছেন? এ বারের ভোটে ফের দাঁড়িয়েছি। আট মাস আগেও দাঁড়িয়ে ছিলাম।”

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪২
খোস মেজাজে প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

খোস মেজাজে প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সকাল সাড়ে ১০টা। বনগাঁর ট্যাংরা গ্রাম পঞ্চায়েতের আরশিংড়ি বাজারে ঢোকার আগে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন বনগাঁ লোকসভার উপ নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস। দু’হাত জোড় করে এগিয়ে গেলেন সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যস্ত কয়েক জন মহিলার দিকে। বললেন, “আমি দেবেশ দাস। আমাকে চিনতে পারছেন? এ বারের ভোটে ফের দাঁড়িয়েছি। আট মাস আগেও দাঁড়িয়ে ছিলাম।” হাতের ঝাঁটাগুলো কোমরে কাপড় গুঁজতে গুঁজতে এগিয়ে এলেন মহিলারা। মুখে হাসি খেলল। বোঝা গেল, প্রার্থীকে বিলক্ষণ চিনেছেন। ফের গাড়িতে উঠে পড়লেন প্রার্থী।

একটু পড়েই গাড়ি থেকে নামলেন আরশিংড়ি বাজারে। একটি দোকানে ঢুকে করজোড়ে ভোট চাইলেন। পাশে পড়েছিল খবরের কাগজ। মুকুল রায়ের খবরের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন প্রার্থী। মন্তব্য করলেন না কিছুই। ফের উঠে পড়লেন গাড়িতে। শুক্রবার সকালে এ ভাবেই প্রচার শুরু করলেন দেবেশবাবু। কখনও পাশের বাড়ির উঠোনে বসে থাকা যুবকের কাছে এগিয়ে গেলেন। আশ্বাস এল, “আমাদের ভোট অন্য কোথাও যাবে না।” এরই মধ্যে রাস্তায় ইদ্রিস দফাদার ‌নামে এক বৃদ্ধ প্রার্থীর সঙ্গে দেখা হতেই ওই বৃদ্ধ হাত মিলিয়ে মন্তব্য করলেন, “আমাদের পাড়ায় কোনও অসুবিধা হবে না।” শরীরী ভাষায় আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল দেবেশবাবুর।

আরশিংড়ি বাজার থেকে ট্যাংরা বাজারে যাওয়ার পথে দেখা হয়ে গেল কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে। গাড়ি করে তাঁরা স্কুলে যাচ্ছিলেন। প্রার্থী এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে ভোট চাইলেন। প্রার্থীর গাড়ি এগিয়ে চলল ট্যাংরা দক্ষিণপাড়ার দিকে। সেখানে পৌঁছে একটি ঢালাই রাস্তার উপরে প্লাস্টিকের চেয়ারের বসলেন দেবেশবাবু। দলের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়েছিল গ্রাম বৈঠকের। বেশ কিছু মহিলা-পুরুষ সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। মহিলাদের সংখ্যাই ছিল বেশি। সময় নষ্ট না করে খালি গলায় দেবেশবাবু বক্তৃতা শুরু করলেন। বললেন, “বন্ধুগণ, আমি আবার এসেছি আপনাদের কাছে। বনগাঁ যেন আমাকে ছাড়তেই চাইছে না।” বিজেপির সমালোচনায় বেশি শব্দ ব্যয় করলেন। গ্রামবাসীদের জানালেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে বিজেপি সরকার গরিবের স্বার্থে কোনও কাজ করেনি। ১ এপ্রিল থেকে একশো দিনের কাজ প্রকল্প কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে চলেছে। দ্রব্য মূল্যের দাম কমেনি। কৃষকের ফসলের দাম বাড়েনি।

তৃণমূলের সমালোচনায় বললেন, “আপনারা গ্রামের মানুষ। জানেন যে কুয়াশায় গাছের মুকুল ঝরে যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এক মুকুল গেলে লক্ষ লক্ষ মুকুল তৈরি হবে। এক মুকুলেই এই অবস্থা। লক্ষ লক্ষ মুকুল তৈরি হলে কী হতে পারে আপনারা বুঝে নিন।” সিপিএম প্রার্থীর দাবি, “পরবর্তী লোকসভা ভোট পর্যন্ত তৃণমূল দলটাই থাকবে না। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির কোনও পার্থক্য নেই। সকালে যিনি তৃণমূলের মন্ত্রী, বিকেলে তাঁর ছেলেই বিজেপির প্রার্থী।”

শুক্রবার দেবেশবাবু ট্যাংরা, গাঁড়াপোতা, সুন্দরপুর প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায় নিজের প্রচার পর্ব সারেন। বাগদার আমডোব এলাকাতেও এ দিন প্রচারে গিয়েছিলেন। মূলত রোড-শো এবং ছোট ছোট কর্মিসভার মাধ্যমেই প্রচার করছেন তিনি। ২২ জানুয়ারি সল্টলেকের বাড়ি থেকে বনগাঁয় এসেছেন। ফের কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন জানেন না। বনগাঁ শহরে এক দলীয় কর্মীর বাড়িতে থাকছেন। রোজ সকাল সাড়ে ৬টায় ঘুম ভাঙছে। ৭টার মধ্যে চা খেয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। তারপর স্নান করে গরম ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ছেন প্রচারে। ফিরতে ফিরতে রাত ১২টা পেরিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন।

এ দিন অবশ্য প্রচার শুরু করতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। কারণ বৃহস্পতিবার ম্যটাডোরে করে রোড-শো করার সময়ে বাঁ পা পাটাতনে ঢুকে জখম হয়েছিলেন দেবেশ। চিকিৎসা করিয়ে বের হতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। বনগাঁ বিডিও অফিস এলাকা থেকে কমলাক্ষ বিশ্বাস ও অমিয় মণ্ডল নামে স্থানীয় দুই সিপিএম নেতা প্রার্থীর গাড়িতে উঠে পড়লেন। ওই দুই নেতার দায়িত্ব, প্রার্থীকে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়ার। এ দিনও গাঁড়াপোতা ও আমডোব এলাকায় দু’টি রোড-শো করেছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী।

শুক্রবার দেবেশবাবু প্রচার শুরু করেছিলেন স্থানীয় ধোড়ামারি গ্রাম থেকে। গ্রামে ঢুকে গাড়ি থেকে নেমে গ্রামবাসীদের কাছে এগিয়ে গেলেন। হাত জোড় করে বললেন, “আমি দেবেশ দাসআট মাস আগেও দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে আছে?” ‘হ্যাঁ হ্যাঁ’ করে উত্তর এল। এক মহিলা অবশ্য প্রার্থীকে চিনতে পারছেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিলেন। রাস্তা দিয়ে প্যাডেল রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন প্রতিবন্ধী যুবক প্রদ্যুৎ বিশ্বাস। তিনি প্রার্থীকে দেখে চিনতে পেরে একগাল হেসে হাত মেলালেন। প্রার্থীর মুখেও হাসি ফুটে উঠল। সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মিনি ট্রাকে করে গ্রামের মহিলারা যাচ্ছিলেন। প্রার্থী তাঁদের কাছে গিয়েও ভোট চাইলেন। ধোড়ামারি গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল প্রার্থীকে জানালেন, গ্রামে খুব বেশি অসুবিধা হবে না। সেখান থেকে আরশিংড়ি গ্রামের বাসিন্দা মান্নান দফাদারের বাড়িতে গ্রাম বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। প্রার্থী পৌঁছনোর পরে উঠোনে চট পাতা হল। হাতে গোনা কয়েক জন গ্রামবাসী এলেন। তাই চা-বিস্কুট খেয়েই উঠে পড়লেন প্রার্থী। নেতারা জানালেন, সকলেই মাঠে থাকায় কেউ আসতে পারেননি।

প্রচারে বেরিয়ে কি বুঝছেন?

দেবেশবাবুর কথায়, “গতবারের তুলনায় এ বার কিছু নতুন ছেলে-মেয়েকে দলে দেখছি। পুরনো বহু কর্মীও ফিরে এসেছেন। রোড-শোগুলিতে বেশি করে মানুষের উৎসাহ দেখতে পাচ্ছি।” বললেন, “গতবার হারের অন্যতম বড় কারণ ছিল, আমাদের ভোটটা বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল। সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। তা ছাড়া, কিছু বুথে রিগিং হয়েছিল। এ বার বিজেপির দিকে চলে যাওয়া ভোট ফিরে আসছে।” সারদা কাণ্ডের জেরে বহু তৃণমূল কমীর মনোবলও ভেঙে গিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। মতুয়া ভোট প্রসঙ্গে তাঁর মত, “যে সকল মতুয়া তৃণমূল-বিজেপির সমর্থক, তাঁরা বুঝতে পারছেন ওই দু’টি দল মতুয়াদের নিয়ে রাজনীতি করছে। ফলে তাঁরা আমাদেরই সমর্থন করছেন।”

bongaon simanta maitra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy