Advertisement
E-Paper

পুলিশি ঘেরাটোপে পরীক্ষা নির্যাতিতার

মুখ দেখেই বোঝা যায়, একটু আগেই কান্নাকাটি করছিল সে। মাথায় হাত বুলিয়ে দাঁত ভাঙা চিরুনি দিয়ে টান টান করে চুল বেঁধে দেওয়ার ফাঁকে ভরসা জোগাচ্ছেন মা---“পরীক্ষার আগে কান্নাকাটি করে না মা, কোনও ভয় নেই।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৬

মুখ দেখেই বোঝা যায়, একটু আগেই কান্নাকাটি করছিল সে।

মাথায় হাত বুলিয়ে দাঁত ভাঙা চিরুনি দিয়ে টান টান করে চুল বেঁধে দেওয়ার ফাঁকে ভরসা জোগাচ্ছেন মা---“পরীক্ষার আগে কান্নাকাটি করে না মা, কোনও ভয় নেই।”

হাতের তালু উল্টে ফের এক বার চোখ মুছে নেয় সাদা চুড়িদার। তড়িঘড়ি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয় বই-খাতা। “পেনে কালি আছে তো, দেখে নিয়েছিস?” মনে করিয়ে দেন বাবা। ঘাড় নেড়ে বেরিয়ে পড়ে মেয়েটি।

তিন সিভিক ভলেন্টিয়ার্সের ঘেরাটোপে অটোয় চেপে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে মিলিয়ে যায় মেয়েটি। চোকাঠে দাঁড়িয়ে শেষ বারের মতো মনে করিয়ে দেন মা— “ওই দিনের কথা একদম মাথায় আনবি না কিন্তু।”

সেই ‘দিন’, ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি। গাইঘাটার শিমুলপুরের সদ্য তরুণী ওই ছাত্রীকে ভর সন্ধ্যায় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল এলাকারই তিন যুবক। শুধু তাই নয়, মোবাইলে তাদের অপকর্মের ছবি তুলে ইন্টারনেট-এ ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছিল তারা। দিন কয়েকের মধ্যে অভিযুক্ত জিকো কীর্তনিয়া, বলরাম মাতা এবং রাজ গোমস ধরা পড়লেও জামিন পেতেও বিশেষ সময় লাগেনি তাদের।

বিপত্তির শুরু তারপর থেকেই। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শুরু হয় ক্রমাগত হুমকি। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই আড়াল থেকে শাসানি। বাড়িতে পুলিশ প্রহরা বসলেও মেয়েটি বলছেন, “এই দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে কি ভাল করে পড়াশোনা করা যায়!” গত কয়েক মাসে দাঁতে দাঁত চেপে এই অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যেই মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়েছে সে। সোমবার ছিল সে পরীক্ষারই প্রথম দিন।

মেয়েটির বাবার বক্তব্য, “ওই ঘটনার পরে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল মেয়ে। আমরা তো ভেবেছিলাম বোবাই হয়ে গেল বুঝি।” তিনি জানান, নির্বাক সেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভুলে গিয়েছিল খাওয়া-ঘুম। রাতে আধ-ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে উঠত সে। তিনি বলছেন, “ও যে আবার লেখাপড়া করবে তা ভাবতেই পারিনি।”

তবে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে ‘ঋণ’ স্বীকার করছেন মেয়েটির ভাগ চাষি বাবা। এলাকার বাসিন্দারাও জানান, স্থানীয় গাইঘাটা থানা এবং তার তদানীন্তন ওসি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগ নিয়ে ওই মেয়েটির বাড়িতে পুলিশ-প্রহরার ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, তরুণীর বাবা বললেন, “অরিন্দমবাবু ফোন করে মেয়েকে সমানে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন, ‘ভয় নেই রে মা, আমি আছি তো!” অরিন্দমবাবু এখন স্বরূপনগর থানার ওসি। তিনি বলেন, “মানসিকভাবে বিধ্বস্ত একটি মেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে এটা ভাবতেই ভাল লাগছে।”

আর মেয়েটি বলছে, “ভয়টা এখন অনেক কেটে গেছে জানেন। বাবা, স্কুলের শিক্ষক আর ওই পুলিশকাকুদের ভরসায় পরীক্ষাটা দিচ্ছি। আর পিছু ফিরে দেখতে চাই না।”

madhyamik examination gaighata repressed woman southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy