দায়িত্ব নেওয়ার পরে বছর দেড়েক পেরিয়েছে। কাজ বুঝতে কারও একটু সময় লেগেছে। কারও খানিক ‘সহায়তার’ প্রয়োজন পড়েছে। তবে পদে নতুন হলেও, দীর্ঘদিন হাত না পড়া নানা কাজে নেমে পড়ার চেষ্টা করছেন প্রধান, এমন কথা শোনা যাচ্ছে রাজ্যের নানা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের মুখেই। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পরে যাঁরা প্রথম বার প্রধান হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই বলছেন, ‘‘বাধা-বিঘ্ন বা সমস্যা নানা রকমই আছে। কিন্তু সে জন্য পিছিয়ে গেলে চলবে না।’’ সম্প্রতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মামণি রুইদাসের মৃত্যুতে স্যালাইন-বিতর্ক শুরু হয় রাজ্যে। মামণির গ্রাম সারগা গড়বেতা ৩ ব্লকের শঙ্করকাটা নামে যে পঞ্চায়েত, সেখানে গত বার প্রথম প্রধান হয়েছেন জ্ঞানাঞ্জন মণ্ডল। সারগা গ্রামের রাস্তা বহু দিন বেহাল। পঞ্চায়েত এলাকার অনেকেই পাকা বাড়ি পাননি। জ্ঞানাঞ্জন বলছেন, ‘‘রাস্তা সারানোয় উদ্যোগী হয়েছি। অনেক কাজ করতে হবে।’’
পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো কিছু জেলায় দুই-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি সংখ্যক প্রধানই নতুন। তাঁরা যাতে দ্রুত সড়গড় হয়ে উঠতে পারেন, সে জন্য নানা জেলার প্রশাসন বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। তাতে কাজও হয়েছে, দাবি আধিকারিকদের। বাঁকুড়ার খাতড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান বুলা সেন যেমন বলছেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিতে গিয়ে অনেকটাই কাজ রপ্ত হয়েছে। ধাপে ধাপে সব শিখে নিয়েছি।’’ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহর লাগোয়া বাবুগ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা পাশের পুর-এলাকার মতো পরিষেবা আশা করেন। জল, রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থা আরও ভাল প্রয়োজন, দাবি তাঁদের। সেখানকার প্রথম বারের প্রধান সোমনাথ নন্দী জানান, বরাদ্দ কম, তবে সীমিত সামর্থ্যেও
চেষ্টা চলছে।
হুগলির গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের প্রধান রঘুনাথ সাঁতরা নতুন হলেও, তাঁর চেষ্টা নজর কেড়েছে বলে দাবি এলাকার অনেকেরই। রঘুনাথ বলেন, ‘‘কোনও অন্যায় বা দাদাগিরির জায়গা নেই। একেবারে পাড়া স্তর থেকে উঠে আসা দাবিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। যত দিন পদে থাকব, এ ভাবেই চলব।’’ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের ভিঙ্গল পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান বৃষ্টি বসাকের বাবা বিমানবিহারী বসাকও প্রধান ছিলেন। বৃষ্টি বলেন, ‘‘গোড়ায় দরকারে বাবার সাহায্য নিয়েছি। এখন অনেকটা কাজ বুঝে গিয়েছি।’’
কাজের ক্ষেত্রে অবশ্য রাজনৈতিক দাবি,পাল্টা দাবি রয়েছে। যেমন, বিরোধী দলের হাতে থাকা পঞ্চায়েতগুলির প্রধানদের অনেকে ‘শ্লথ’ কাজের অভিযোগে শাসক পক্ষের ‘অসহযোগিতাকে’ দায়ী করছেন। বীরভূমের মুরারইয়ের জাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের তুষার মণ্ডলের দাবি, ‘‘প্রতিটি কাজে শাসক দলের সদস্যেরা বাধা দেন।’’ পশ্চিম বর্ধমানের আমরাসোঁতার প্রধান, সিপিএমের সঞ্জয় হেমব্রমের ক্ষোভ, ‘‘সাংসদ ও বিধায়ক ভিন্ন দলের। তাঁদের তহবিলের অনুদান পাইনি।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন।
সামগ্রিক ভাবেও নতুন প্রধানদের কাজের উৎসাহ, তুলনায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তি পঞ্চায়েতের কাজে গতি এনেছে বলেই স্থানীয়দের অধিকাংশের মত। এই কাজ দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাহায্য করবে বলেও বেশিরভাগের অভিমত। এই প্রধানদের মধ্যে থেকে আল্ট্রাটেক সিমেন্ট পরিবার বেছে নেবে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’। আল্ট্রাটেক সিমেন্ট দেশ জুড়ে এই বিকাশ ও নির্মাণকার্যে সহযোগিতা করে চলেছে। নিজেদের এই অভিজ্ঞতা, গুণমান এবং বিশ্বস্ততাকে পাথেয় করে পশ্চিমবঙ্গেও গ্রাম প্রধানদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সংস্থা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)