এসএসকেএমে প্ল্যাকার্ড হাতে অভিজিৎবাবু। নিজস্ব চিত্র
এ রাজ্য থেকে রোজই দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে ছোটেন রোগীরা। কিছু ট্রেনই আছে, লোকের মুখে যা ‘পেশেন্টস এক্সপ্রেস’ নামে পরিচিত। রোগীদের ভিন্ রাজ্যমুখী এই স্রোত নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা বহু দিনের। রাজ্যের এক নামী সরকারি চিকিৎসকের সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপ সেই বিতর্কই ফের উস্কে দিয়েছে।
তিনি অভিজিৎ চৌধুরী। রাজ্যের অন্যতম নামী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হেপাটোলজিস্ট। যকৃৎ সংক্রান্ত সমস্যার চিকিৎসায় প্রথম কয়েক জন ডাক্তারের মধ্যে তিিন উল্লেখযোগ্য। এসএসকেএমের হেপাটোলজির প্রধান অভিজিৎবাবু জানিয়েছেন, ‘দক্ষিণ-ফেরত’ যে সব রোগী সেখানকার প্রেসক্রিপশন হাতে এসএসকেএম বা এ রাজ্যের অন্য সরকারি হাসপাতালে আসেন, তাঁদের নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট ও হতাশ। কারণ তাঁর কথায়, ‘‘সেই সব ক্ষয়িষ্ণু বাঙালি আপন ক্ষমতায় আস্থা রাখতে পারছে না।’’
প্রতিবাদে গত শুক্রবার প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসএসকেএমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন এই চিকিৎসক। প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে ‘দক্ষিণ’ (হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু) অভিযাত্রার পর প্রত্যাগতদের প্রতি আমার সবিনয় নিবেদন— আপনাদের ‘সেবা’ করার প্রয়োজনীয় পারদর্শিতা আমার নেই, মাফ করবেন।’ অভিজিৎবাবুর এই পদক্ষেপে চমকিত সরকারি চিকিৎসকেরা। উঠেছে সমালোচনার ঢেউ-ও। অধিকাংশেরই মত, ওই লেখা কার্যত রোগী-প্রত্যাখ্যানেরই বার্তা। কোনও চিকিৎসক কি এটা করতে পারেন? তা-ও প্রকাশ্যে, কোনও সরকারি হাসপাতাল চত্বরে!
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে চিকিৎসকদের একাংশ ও রোগী অধিকার আন্দোলনে জড়িতদের অধিকাংশেরই মত, নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে রোগীর।
তা ছাড়া, রোগীদের দক্ষিণযাত্রার কারণ হিসেবে অতীতে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামোর অভাব, অস্ত্রোপচারের ডেট না পাওয়া, চিকিৎসকদের দুর্ব্যবহার, রোগী ও বাড়ির লোকের সঙ্গে ঠিকঠাক কথা না বলার মতো একাধিক কারণও উঠে এসেছে। রোগী অধিকার আন্দোলনে দীর্ঘদিন জড়িত পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘আমি আত্মীয়কে নিয়ে দক্ষিণে চিকিৎসা করাতে গিয়েছি। ওখানে চিকিৎসকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যে বেশি, তা নয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত রোগী-সহায়ক। ফলে রোগীরা পরামর্শ নিয়ে আসতেই পারেন। সরকারি হাসপাতালে কোনও চিকিৎসক এর জন্য তাঁদের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করতে পারেন না।’’
অভিজিৎবাবুর অবশ্য দাবি, প্ল্যাকার্ডের লেখা প্রতীকী। তিনি জানেন, রোগী-প্রত্যাখ্যান নীতি বিরুদ্ধ। তা তিনি কোনও দিন করেননি। তবে দক্ষিণ ঘুরে যাঁরা আসেন, তাঁদের বলছেন, ‘‘আমার ক্ষমতা কম। আপনার শরীর-মন তাতে ভাল বোধ করবে কি না, জানি না। তবে আমার কাছে দক্ষিণের কাগজ দয়া করে বার করবেন না। ওঁদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে পারব না।’’ কয়েক সপ্তাহ ধরে এসএসকেএমের ও ব্যক্তিগত চেম্বারেও এই প্ল্যাকার্ড টাঙিয়ে রেখেছেন তিনি।
যা শুনে কার্ডিওভাস্কুলার চিকিৎসক কুণাল সরকারের মন্তব্য, ‘‘এটা বলা যায় না। কেন রোগী আগে অন্য কোনও ডাক্তারকে দেখিয়ে এলেন, এটা ভেবে কিছু কিছু লোকের আত্মসম্মানে নুনের ছিটে লাগে। কিন্তু এটা রোগীর অধিকার। ব্যক্তিগত স্তরের এই ‘ইগো’ রোগীর প্রতি বিদ্বেষের জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy