E-Paper

ফুল আনতে গিয়ে লরির নীচে, যুবকের মৃত্যুতে পাড়ার পুজো ম্লান

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত যুবকের নাম বিমলেশ দাস (২৭)। তাঁর বাড়ি মানিকতলা থানা এলাকার সাতকড়ি মিত্র লেনের কাছে রামকৃষ্ণ মিশন আবাসনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ০৯:৪৪
 বিমলেশ দাস।

 বিমলেশ দাস। — প্রতীকী চিত্র।

পাড়ায় শীতলা পুজো। সেই উপলক্ষে শনিবার সাতসকালে হাওড়ার ফুলের বাজারে ফুল কিনতে যাচ্ছিলেন বন্ধুরা। দু’টি মোটরবাইকে সওয়ার চার জনের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না বলে অভিযোগ। রাস্তায় একটি মোটরবাইকের হ্যান্ডেল সামনে থাকা লরির গায়ে লেগে যায়। তাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়েন বাইকে সওয়ার এক জন। তাঁর বুকের উপর দিয়েই চলে যায় লরির চাকা। বাকি তিন বন্ধু বাড়ি ফিরলেও ওই যুবকের ফেরা হয়নি। পাড়ার পুজো এখন কোনও মতে সেরে দ্রুত বিসর্জন দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।

পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত যুবকের নাম বিমলেশ দাস (২৭)। তাঁর বাড়ি মানিকতলা থানা এলাকার সাতকড়ি মিত্র লেনের কাছে রামকৃষ্ণ মিশন আবাসনে। এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর বন্দর থানা এলাকার স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে। আপাতত লরিটির খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। তবে, রাত পর্যন্ত সেটির চালককে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাতে ওই মোটরবাইকটিকে লরির পাশ কাটিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। সেই সময়েই কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইকটি পড়ে যায়। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে।

এ দিন সাতকড়ি মিত্র লেনে গিয়ে দেখা যায়, রামকৃষ্ণ মিশন আবাসন জুড়ে প্যান্ডেল করা হয়েছে। তার মধ্যেই বসানো হয়েছে শীতলা মূর্তি। তবে, সেখানে কোনও বক্স বাজছে না। কোনও মতে মৃদু স্বরে মন্ত্র পড়ছেন পুরোহিতেরা। আবাসনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চেয়ারে পর পর শোকগ্রস্ত মুখ। আবাসনের ডান দিকেই বাড়ি বিমলেশদের। সে দিকে ঢুকতেই কানে আসে মহিলা কণ্ঠের চিৎকার। দেখা যায়, এক মহিলাকে কোনও মতে জড়িয়ে ধরে রয়েছেন অন্যেরা। তাঁকে কিছুতেই রোখা যাচ্ছে না। শীলা দাস নামে ওই মহিলা বিমলেশের মা। তিনি কোনও মতে বললেন, ‘‘ওর বাবা কাজ করেন না। আমি লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনও মতে সংসার চালাই। আমার পাশে দাঁড়াতে কয়েক মাস হল ছেলে পোশাকের দোকানে কাজে ঢুকেছিল। আমার মেয়ে ছোট। এ বার কার ভরসায় লড়াই করব? আমার ছেলেটাই তো চলে গেল।’’

ভিড় করে থাকা লোকজনের মধ্যেই এক জন অভিষেক শর্মা জানালেন, যে দু’টি মোটরবাইক ফুল আনতে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি চালাচ্ছিলেন তিনি। বিমলেশ যে বাইকে বসে ছিলেন, সেটি চালাচ্ছিলেন রবি সিংহ নামে এক জন। অভিষেক বলেন, ‘‘ফুল নিয়েই চলে আসব, ভোরের রাস্তায় কোনও সমস্যা হবে না ভেবেই হেলমেট সঙ্গে নিইনি। আমি মোটরবাইক নিয়ে কিছুটা আগে ছিলাম। পিছনে ওরা আসছে না দেখে, ফিরে গিয়ে দেখি, ওই অবস্থা।’’ অভিষেকের দাবি, আহত অবস্থায় বিমলেশের সঙ্গে রবিকেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার পরে তাঁকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রবির দাবি অনুযায়ী, লরির পাশ কাটিয়ে বেরোতে গিয়ে তাঁদের বাইকের হ্যান্ডেল লরির গায়ে লেগে যায়। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন তিনি। বাইক এক দিকে কাত হয়ে গেলে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলেও পিছনে থাকা বিমলেশ পড়ে যান। সেই অবস্থাতেই লরিটির পিছনের চাকা তাঁর বুকের উপর দিয়ে চলে যায়। এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুজো করার আর মানসিক অবস্থা নেই। যত দ্রুত সম্ভব সব সেরে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হবে। এই পুজোর দিনটা সারা জীবনেও আর ভোলা যাবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Accident Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy