E-Paper

সংরক্ষণ করতে লাল চন্দনের বাগান বটানিক্যাল গার্ডেনে

উদ্ভিদ জগতে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলা বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করে তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হয়েছেন শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বটানিকাল উদ্যান কর্তৃপক্ষ।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ০৯:২৩
মূল্যবান: শিবপুরের বটানিক্যাল গার্ডেনে বড় হচ্ছে লাল চন্দন গাছ।

মূল্যবান: শিবপুরের বটানিক্যাল গার্ডেনে বড় হচ্ছে লাল চন্দন গাছ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

বাস্তবের চোরা কারবারি বীরাপ্পন বা হালের রঙিন সেলুলয়েডের চরিত্র ‘পুষ্পা’র জন্য দুনিয়াখ্যাত, দুষ্প্রাপ্য লাল চন্দন গাছ দেখতে আর যেতে হবে না অন্ধ্রপ্রদেশের রাওয়ালসিমায়। কারণ এ বার ঘরের কাছেই মিলবে লাল চন্দনের বাগান। উদ্ভিদ জগতে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলা বিভিন্ন বিরল প্রজাতির গাছ সংগ্রহ করে তাদের বংশবৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হয়েছেন শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বটানিকাল উদ্যান কর্তৃপক্ষ। সেই বিলুপ্ত প্রজাতির গাছেদের মধ্যে অন্যতম হল লাল চন্দন। উদ্যানের একাংশে এই মহা মূল্যবান গাছের চারা বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আস্ত বাগান। রাজ্যের বন দফতর বা সাধারণ মানুষ চাইলেও এর চারা সংগ্রহ করতে পারবেন উদ্যান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

পৃথিবী থেকে প্রায় বিলুপ্ত হতে চলা গাছ সংগ্রহ করে বটানিক্যাল উদ্যানের ভিতরে একটি স্থানিক ও বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদ বিতান তৈরি করতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উদ্যানের যুগ্ম অধিকর্তা ধর্মেন্দ্র সিংহ জানান, এই ধরনের গাছ যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় বা একটি মাত্র জায়গায় না থাকে, সে জন্য উদ্যানের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা পশ্চিম হিমালয়, পূর্ব হিমালয়, মালাবার পশ্চিমঘাট, অসম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে এই ধরনের বিলুপ্তপ্রায় গাছ সংগ্রহ করে এনেছেন। উদ্যানের ২ নম্বর গেটের পাশে প্রায় ৬ একর জায়গা জুড়ে এই বিতান তৈরি করা হচ্ছে। আগামী ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এই ধরনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের ৪০০ প্রজাতির চারা ওই জায়গায় রোপণ করা হবে। এদের মধ্যে রয়েছে লাল চন্দন বা টেরোকার্পাস স্যান্টালিনাস, কোকাম, বুকানবারিয়া বারবেরি, ইনসিগনিস, ডালবার্জিয়া ল্যাটিফেলিয়ার মতো ভারতীয় গাছ। ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার সময়ে দেখা গিয়েছে, বহু গাছ পৃথিবীতে সংখ্যায় মাত্র ৪ থেকে ১০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এই সব গাছ যাতে না পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে না যায়, সে জন্য এর সংরক্ষণ করে বংশবৃদ্ধি করা। আমাদের বিজ্ঞানীরা এ জন্য দিবারাত্র পরিশ্রম করে দূরদূরান্তে পাড়ি দিয়ে এই সব গাছ সংগ্রহ করে এনেছেন।’’

উদ্যান সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড় আমপানের সময়ে উদ্যানের বহু গাছ উপড়ে যাওয়ার পরে নতুন করে ফের গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে গত তিন বছরে বসানো হয়েছে ৯৭১টি গাছের চারা। বর্তমানে সব মিলিয়ে উদ্যানে প্রায় তিন হাজার গাছ রয়েছে। উদ্যানের উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানান, তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য এই সব নতুন গাছকে বাঁচানো। বিশেষত স্থানিক ও বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদ বিতানের জন্য যে সব গাছের চারা বসানো হবে, সেগুলিকে বাঁচানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন তাঁরা। সেই গাছগুলি বড় হলে স্বাভাবিক ভাবেই হাওড়ার পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ, এইসব গাছ পরিবেশের দূষণ অনেকটাই কমাতে সাহায্য করবে।

তবে সব থেকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে লাল চন্দন গাছ রোপণের ক্ষেত্রে। ধর্মেন্দ্র জানান, এ জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে এই গাছের প্রায় ৭ হাজার চারা ও বীজ আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক চারা বসানোও হয়েছে। সেগুলি বেশ কিছুটা বড় হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এই বিখ্যাত গাছ দেখতে অনেকেই আগ্রহী। তাই আমরা শুধু লাল চন্দনের একটি বাগান তৈরি করছি। রাজ্য বন দফতর বা সাধারণ মানুষ চাইলে আমরা এই গাছের চারাও দিতে
প্রস্তুত আছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Botanical Gardens Red Sandalwood

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy