স্কুলের তালা খোলেন। সব ক্লাস নেন। মিড-ডে মিলের বাজার করেন। যাবতীয় নথিপত্রের কাজও করেন। পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ভাদিয়াড়া প্রাথমিক স্কুলের একমাত্র শিক্ষক কৃষ্ণকান্ত গুপ্ত। এক শিক্ষকের ভরসায় স্কুল চলায়, পড়াশোনার মানে প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের একাংশের।
২০০৯ সালে স্কুলে যোগ দেন কৃষ্ণকান্ত। গোড়ায় দু’বছর আর এক শিক্ষককে সঙ্গে পেয়েছিলেন। তার পরে বছর পাঁচেক একাই স্কুল চালান। ২০১৬ সালের পর থেকে দু’দফায় আরও দু’জন সহকর্মীকে পেলেও, এক জন দু’বছর ও অন্য জন বছর তিনেকের বেশি থাকেননি। ফলে, ১৬ বছরের মধ্যে প্রায় ন’বছর একা স্কুলের ভার টানছেন কৃষ্ণকান্ত।
সম্প্রতি বিকাশ ভবনের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমান জেলায় শিক্ষকহীন অথবা এক জন শিক্ষকে চলা স্কুলের সংখ্যা ১৭৮। পূর্ব বর্ধমানের জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) প্রলয়েন্দু ভৌমিক যদিও বলেন, ‘‘শিক্ষকহীন স্কুল জেলায় নেই। সব জায়গাতেই শিক্ষক অদল-বদল করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। এক জন শিক্ষকে চলা স্কুলওহাতে গোনা।’’
ক্লাসকে একসঙ্গে বসিয়ে পড়ান। একটি ক্লাসে পড়া দিয়ে, অন্য ক্লাসে যান। সকালে মিডডে মিলের বাজার নিয়ে পৌঁছন স্কুলে। ক্লাসের ফাঁকে অফিসের কাজকর্মও সারেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবেই দীর্ঘদিন চলছে। পরীক্ষা নিতে বেশ সমস্যা হয়। আর ব্লক বা জেলা স্তরে বৈঠকে ডাকলে চিন্তার শেষ থাকে না।’’
এ ভাবে ক্লাস হলে, পড়ুয়ারা শিখছে কেমন? প্রধান শিক্ষকের জবাব, ‘‘যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।’’ অভিভাবকদের অনেকের দাবি, পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকছে ছেলেমেয়েরা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে শেখার বিষয় তৃতীয় শ্রেণিতে, তৃতীয় শ্রেণির বিষয় চতুর্থ শ্রেণিতে গিয়ে শিখছে অনেকে। অভিভাবক স্বপন মান্না, উত্তম সরকার, সমীর ক্ষেত্রপালেরা বলেন, ‘‘শিক্ষকের চেষ্টায় খামতি দেখি না। কিন্তু একার পক্ষে কি সব কিছু করা সম্ভব? এই স্কুল ছাড়া, গ্রামে অন্য উপায়ও নেই।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সন্দীপ নন্দীর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য জুড়ে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ফলে, একটা গোটা প্রজন্মের শিক্ষায় গোড়ায় গলদ রয়ে যাচ্ছে।’’ রায়নার তৃণমূল বিধায়ক শম্পা ধাড়ার বক্তব্য, ‘‘সরকার ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। তারা দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য থেকে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়েছে। অনেক স্কুলেই ‘স্টপ গ্যাপ’ শিক্ষক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছে। সে তালিকা তৈরি করে কয়েক দিনের মধ্যে রিপোর্ট রাজ্যে পাঠানো হবে।’’
(চলবে)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)