Advertisement
E-Paper

স্বামীর দেহ লোপাটে যুবককে ভাড়া ১০ হাজার টাকায়!

এমনকি দেহ লোপাটের জন্যই দিল্লি থেকে লালু নামের এক যুবককে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কলকাতায় নিয়ে এসেছিল ওই তরুণীর সঙ্গী সুমন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৯ ০২:০৪
সুমন কুমার ও কুমকুম মালি। নিজস্ব চিত্র

সুমন কুমার ও কুমকুম মালি। নিজস্ব চিত্র

খুনের আগে স্বামী আশুতোষ মালির জন্য পরোটা, তরকারি আর পায়েস তৈরি করেছিল স্ত্রী কুমকুম। আর সেই খাবারের মধ্যেই ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল ওই তরু‌ণী। যা খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন আশুতোষ। বেশ কিছু ক্ষণ পরেও স্বামীর জ্ঞান না ফেরায় তাঁর মৃত্যু সুনিশ্চিত করতে বুকের ডান দিকে পরপর দু’বার ছুরি দিয়ে আঘাত করেছিল কুমকুম।

এমনকি দেহ লোপাটের জন্যই দিল্লি থেকে লালু নামের এক যুবককে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কলকাতায় নিয়ে এসেছিল ওই তরুণীর সঙ্গী সুমন। বেলুড় নিস্কো হাউজিংয়ের আবর্জনার স্তূপ থেকে যুবকের দগ্ধ দেহ উদ্ধারের ঘটনার পুনর্নির্মাণে এমনই তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের সামনে। বুধবার সকালে কুমকুম ও তার দিল্লি নিবাসী সঙ্গী সুমনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে এবং আশুতোষের বাড়িতে যান নিশ্চিন্দা থানার তদন্তকারীরা। বালি ঘোষপাড়ার ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য সরণির যে বাড়িতে আশুতোষ ভাড়া থাকতেন সেখানে গিয়ে কুমকুম ও সুমন দু’জনেই পুলিশকে দেখায়, শনিবার রাতে সেখানে কী ঘটেছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, আশুতোষের ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তের ছাপ মিলেছে। পাশাপাশি ছুরি মারার পরে যে জামা-গেঞ্জি ও বালিশের ঢাকনা দিয়ে রক্ত মোছা হয়েছিল সেগুলিও উদ্ধার হয়েছে। বাড়ির জঞ্জাল রাখার জায়গা থেকে বিষের প্যাকেট, আশুতোষের মানিব্যাগ এবং ওই দিনের খাবারও মিলেছে। এমনকি বাড়ির সামনের এক জায়গা থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি শাড়ি, তাতেও রক্তের দাগ রয়েছে। তদন্তকারীদের কুমকুম জানিয়েছে, ছুরি মারার পরে সে ওই শাড়ি ধুয়ে শুকোতে দিয়েছিল। সব কিছুরই নমুনা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সংগ্রহ করেছেন।

কুমকুম পুলিশের কাছে দাবি করেছে, ছুরিটি সে পেয়েছিল লালুর কাছ থেকেই। আর খুনের পরে ছুরি ও আশুতোষের মোবাইল ওই যুবকই নিয়ে গিয়েছে। সুমনকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, পেশায় রং মিস্ত্রী লালু জুয়া খেলে মালিকের দেওয়া ১০ হাজার টাকা খুইয়েছিল। সেই টাকা জোগাড় করতেই সে সুমনের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। তবে কুমকুম ওই টাকার অর্ধেকটা দিয়েছিল। কুমকুমের দাবি, প্রতিদিন ভাঙ খেয়ে নেশা করে বাড়িতে আসতেন আশুতোষ। আর তাই সে দিন খাওয়ার সময়ে কিছু বুঝতে পারেননি ওই যুবক।

ঘোষপাড়ার ওই বাড়ি থেকে কোন রাস্তা দিয়ে সাইকেলে দেহ চাপিয়ে আবর্জনার স্তূপের কাছে তারা গিয়েছিল সেটিও এ দিন দেখায় সুমন। নিস্কো হাউজিংয়ের ওই জায়গায় গিয়ে সে জানায়, বস্তায় ভরা দেহটি সাইকেল থেকে ফেলে ধাক্কা মেরে মেরে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়েছিল। তবে লালুই কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বলেও দাবি করে সুমন। ঘটনাস্থলের ঝোপ থেকে এ দিন উদ্ধার হয়েছে কেরোসিন তেলের বোতলটিও। সুমন জানায়, এর পরে তারা কিছু দূরে মজদুর কলোনির কাছে গিয়ে টিউবওয়েলে হাত-পা ধুয়ে, জল খেয়ে বেলুড় স্টেশনে চলে যায়। সকাল ৮টা নাগাদ সে ফের কুমকুমের বাড়িতে চলে আসে। সকাল ১০টায় বেরিয়ে যায়।

বেলুড় স্টেশনের কাছে যে দোকান থেকে শনিবার সন্ধ্যায় তারা পুরনো সাইকেলটি কিনেছিল সেখানেও তদন্তকারীদের নিয়ে যায় সুমন। সেই দোকানের মালিক অমরনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘শনিবার ৯৫০ টাকায় সাইকেলটি বিক্রি করেছিলাম। রবিবার ফের দেশে যেতে হবে টাকার দরকার বলে

সাইকেলটি আমাকে দিয়ে চলে যায়। তার জন্য ৪৫০টাকা ফেরতও দিয়েছিলাম।’’ পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় বেলুড়ে এসে প্রথমে সাইকেল কিনে এলাকায় ঘুরেছিল সুমন ও লালু। তার পরে এলাকার জলসায় গিয়ে সময় কাটায়। রাত ১১টা নাগাদ কুমকুমের ফোন পেয়ে বাড়িতে যায় ওই দু’জন। তবে সুমন তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছে, দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করতে এক মাস ধরে কুমকুমের সঙ্গে তার ও লালুর কথা হয়েছিল।

Crime Murder Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy